Home স্বাস্থ্য সংবাদ ডেঙ্গু নিয়ে সমন্বয়হীনতার খেসারত দিচ্ছে মানুষ
সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৩

ডেঙ্গু নিয়ে সমন্বয়হীনতার খেসারত দিচ্ছে মানুষ

ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতালে এখন মানবেতর অবস্থা দেখা যাচ্ছে। সামর্থ্যবানেরা করপোরেট হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর গরিব মানুষের অবস্থা বলে বিশ্বাস করানো যাবে না। কেউ যদি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে একবার ঢুঁ মেরে আসেন, তাহলে পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে পারবেন। নার্সরা হ্যান্ডমাইক দিয়ে রোগীর লোকজনকে ডাকাডাকি করছেন। শয্যা না পেয়ে সিঁড়ি, বারান্দা ও খোলা জায়গায় মাদুর পেতে রোগীরা কোনোরকম স্যালাইন নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ দৃশ্য চোখে দেখা যায় না।

কীভাবে বাঁচবে মানুষ? পৃথিবীর কোনো দেশ এত জঘন্যভাবে মানুষকে রাখতে পারে না। এটা বাংলাদেশ ছাড়া সম্ভব নয়। কোভিড নিয়ে আমরা ব্যস্ত হয়েছি, আর এখন ডেঙ্গুতে মানুষ মরছে, আমাদের কোনো সচেতনতা নেই। ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় নিয়ে ২৩ বছর ধরে অনেক বলেছি, কাজ হচ্ছে না। ডেঙ্গু রোগী ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসকেরা যা করছেন, তাঁদের ফুলের মালা দেওয়া দরকার। কোন দিকে নজর দেবেন তাঁরা!

সমন্বয়হীনতার খেসারত দিচ্ছে মানুষ। এটাকে সরকারের ব্যর্থতা নাকি নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয় বা সিটি করপোরেশনের ব্যর্থতা, তা বলার লোক আমি নই। আমরা চিকিৎসকেরা শুধু বলতে পারি, আপনারা মশা নিয়ন্ত্রণ করেন, যাতে হাসপাতালে লোক কম আসে।

ডেঙ্গুতে এত মৃত্যু, তবু গা ছাড়া ভাব

ডেঙ্গু ভাইরাস এখন স্বভাব-চরিত্র বদলেছে। আগে ডেঙ্গু হলে গা, কোমর ও চোখে ব্যথা হতো। এখন ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া হচ্ছে। এগুলো নতুন ধরন। এবার ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার বেশি হওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে।

এবারের আগেও যাঁরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন, অর্থাৎ দ্বিতীয়বার আক্রান্ত ব্যক্তিদের অবস্থা গুরুতর হচ্ছে। অনেকে দেরিতে হাসপাতালে আসছেন, তাঁরা শকে চলে যাচ্ছেন। আক্রান্ত অনেকের দেহে ভাইরাল লোড, অর্থাৎ ভাইরাসের পরিমাণ বেশি প্রবেশ করছে, তাঁরা ঝুঁকিতে পড়েছেন। এ ছাড়া গর্ভাবস্থার শেষের দিকে থাকা মায়েরা, কিডনি, লিভার সিরোসিস, ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীরা ডেঙ্গুঝুঁকিতে রয়েছে। অনেকের যকৃৎ, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনি আক্রান্ত হচ্ছে। অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যাঁদের ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাঁদের বাঁচানো যাচ্ছে না।

শিশুদের ক্ষেত্রে মৃত্যু হওয়ার কারণ হচ্ছে, অনেক সময় মা-বাবারা বুঝতে না পেরে দেরিতে সন্তানকে হাসপাতালে নিয়ে আসছেন। শিশুর দেহ নাজুক, তাদের দেহে পানির ঘাটতি দেখা দিলেই শকে চলে যাচ্ছে। শিশুদের ক্ষেত্রে প্লাজমা লিকেজ দ্রুত হয়। রক্তচাপ চট করে কমে যায়। স্যালাইন দিয়ে রক্তচাপ বাড়াতে চাইলে আবার ফুসফুসে পানি জমে যায়। এটা একটা উভয়সংকট অবস্থা। ওজন দেখে শিশুদের কম বা বেশি ফ্লুইড দিতে হচ্ছে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় নিয়ে চিকিৎসকেরা বহুবার বলেছে। দয়া করে পূর্ণাঙ্গ মশা তৈরি হওয়া বন্ধ করুন। তিন মাস আগে এডিস মশার লার্ভা মারা শুরু হলে আজ এ অবস্থা হতো না। সংক্রমিত হয়ে যত লোক হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে, তার পাঁচ গুণ লোক বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।

শুধু হাসপাতালে ভর্তির তথ্য ও মৃত্যুর তথ্য লোকজন জানতে পারছেন। ঢাকার দুই কোটি মানুষের আচরণগত পরিবর্তনে কীভাবে সচেতন করবেন? সিঙ্গাপুরে দেখে এসেছি, সেখানে লোকজনও সচেতন, সবকিছু স্বাস্থ্যপ্রক্রিয়ার মধ্যে। একজন আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি নজরদারিতে থাকছেন। এ দেশে এ রকম স্বাস্থ্যব্যবস্থার বিন্দুমাত্রও নেই।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *