ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে ———-অধ্যাপক মুজিব
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন,দল-মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে।
বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী চট্টগ্রাম অঞ্চল আয়োজিত উপজেলা-থানা দায়িত্বশীলদের শিক্ষাশিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম।
ভারপ্রাপ্ত আমীরে জামায়াত বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী এই সরকার ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। অনতিবিলম্বে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। এমতাবস্থায় কেয়ারটেকার সরকারের মাধ্যমে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী উচ্চ আদালতের মাধ্যমে ন্যায় বিচার পেলে নিবন্ধন ফিরে পাবে। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে যে বিবেক দিয়েছেন কোনো অবস্থাতেই আমরা তার বিরুদ্ধাচরণ করবো না। আমরা ইসলামের যেটুকু ইলম অর্জন করেছি, তা যেন যথাযথভাবে ব্যক্তিজীবনে আমরা আমল করতে পারি। কোনো অবস্থাতেই যেন আমাদের ইলম ও আমল পরস্পর বিপরীত না হয় সে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে পূর্ণ অনুসরণের মাধ্যমে সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। সুন্দর ও সোনালী সমাজ বিনির্মাণে জামায়াতের সকল জনশক্তিকে শিরক ও বিদায়াত মুক্ত জীবন গঠন করতে হবে। আজ দেশ-বিদেশে আল্লামা সাঈদীর কোটি কোটি ভক্ত সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত আমীরে জামায়াত বলেন, তাফসির মাহফিলের মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহর আইনের পথে উদ্বুদ্ধ করেছেন বলেই আল্লামা সাঈদীর ভক্ত বেড়েছে।
আল্লামা সাঈদী অত্যন্ত ভদ্র মানুষ ছিলেন। ছোট-বড় সবাইকে আগে সালাম দিতেন। সকলের সাথে হাসিমুখে কথা বলতেন। তিনি সামাজিক কাজ করতেন, মুক্তহস্তে দান করতেন।
সভায় ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম বলেন,ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় জামায়াতের দায়িত্বশীলদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে ইসলামকে বিজয়ী করার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। সংগঠনের লক্ষ্যকে নিজের লক্ষ্য হিসেবে নিতে হবে। সকল জনশক্তিকে চিন্তার ঐক্য, ভারসাম্যপূর্ণ মেজাজ, আস্থা ও বিশ্বাসে মজবুতি এবং চিন্তার পরিশুদ্ধি অর্জন করে বাতিলের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে লক্ষ্য অর্জনে আপোষহীন থাকতে হবে।
সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন,ভোট ও ভোটারবিহীন ফ্যাসিস্ট সরকার দেশ বিরোধী চুক্তির মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকিয়ে থাকতে বিদেশী প্রভুদের কাছে দেশকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করছে। রাজপথের আন্দোলনকে বেগবান করে জনগণের অধিকার আদায়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন করতে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন,জামায়াতে ইসলামী একটি আর্দশবাদী দেশপ্রেমিক দল হিসেবে নেতা-কর্মীদের লক্ষ্যপানে সকল ত্যাগ স্বীকার করে এগিয়ে যেতে হবে।
সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, ইসলামী আন্দোলনের দায়িত্বশীলকে তার দায়িত্ব পালনে ইনসাফের পরিচয় দিতে হবে। দায়িত্বশীলকে কথা শুনতে হবে এবং সিদ্ধান্ত দেয়ার সময় ইনসাফপূর্ণ হতে হবে। কারো প্রতি জুলুম করা যাবে না, তাকে সবসময় হক্বের উপর অটল থাকতে হবে।
তিনি বলেন, হযরত ইব্রাহিম (আঃ) যেমন আগুনকে ভয় পাননি ভয় পেয়েছে আল্লাহকে, তেমনি এ আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের আল্লাহকে ভয় করে দুনিয়ার কোন রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করবে না। তিনি জামায়াতের জনশক্তিকে সত্যের সাক্ষ্যদাতা হিসেবে জমিনে নিজকে পেশ করার আহ্বান জানান।
চট্টগ্রাম অঞ্চল পরিচালক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আব্দুর রবের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর মুহাম্মদ শাহজাহান, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক আহসান উল্লাহ, চট্টগ্রাম অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যক্ষ আমিরুজ্জামান,জাফর সাদেক,মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
সমাপনী বক্তব্যে উপাধ্যক্ষ আব্দুর রব মেহমানসহ ডেলিগেটদের ধন্যবাদ জানান এবং প্রত্যেক থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট পর্যায়ে সংগঠন মজবুতি ও দাওয়াতী কাজ বৃদ্ধির আহ্বান জানান। প্রেস বিজ্ঞপ্তি
আল্লামা সাঈদীর মতো আমাদেরকে সাহসী কুরআন প্রচারক হতে হবে
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, আল্লামা সাঈদী (রাহিঃ) এর মত আমাদেরকে সাহসী কুরআন প্রচারক হতে হবে। ঘরে ঘরে কুরআনের পাঠক তৈরি করতে হবে। কুরআন বুঝে বুঝে পড়তে হবে আর সেই সাথে কুরআনের রাজ কায়েমের চেষ্টা করতে হবে। আল্লামা সাঈদী যেমন কুরআনের কথাগুলো সাহসের সাথে হৃদয়গ্রাহী ও আকর্ষণীয় করে মানুষের মাঝে তুলে ধরেছেন সেভাবে আমাদেরকেও তুলে ধরতে হবে।
গত শনিবার সন্ধ্যা ৭ টায় জামায়াতে ইসলামী যশোর শহর, পূর্ব ও পশ্চিম তিনটি সাংগঠনিক জেলার আয়োজনে যশোর পূর্ব শাখার আমীর মাস্টার নুরুন্নবীর সভাপতিত্বে ও যশোর শহর শাখার আমীর অধ্যাপক গোলাম রসুলের পরিচালনায় আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (রহিঃ) এর জীবন ও কর্ম শীর্ষক ভার্চুয়ালি আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, আল্লামা সাঈদীর লক্ষ্য ছিল সমাজ ও রাষ্ট্রে কুরআনের শাসন কায়েম করা। এ জন্য তাকে সরকারি ও বেসরকারিভাবে বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে তার মাহফিলে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারী করেছে। সন্ত্রাসীরা তার তাফসীর মাহফিলে হামলা করেছে। আয়োজক কমিটি মাহফিল বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু তিনি ভয় না পেয়ে ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করে মাহফিল বাস্তবায়ন করে গেছেন। তার জীবনের শেষ ১৩ বছর কারাগারে কেটেছে। বন্দী অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মহান রব তাকে শহীদি মর্যাদা দান করুন, আমীন।
তিনি বলেন, আল্লামা সাঈদী যেমন কুরআনের জন্য জেল, জুলুম, নির্যাতন সহ্য করে সাহস ও ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করেছেন, তেমনি কুরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন। কুরআন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন থেকে দূরে থাকা যাবে না। এ পথে শত বাধা-বিপত্তি আসবে কিন্তু পিচ পা হওয়া যাবে না। আমাদের জন্য একমাত্র অনুসরণীয় ব্যক্তি রাসূল মুহাম্মদ (সাঃ)। তিনি নির্ভীক চিত্তে দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন। হক্ব ও বাতিলের সামনে তিনি ছিলেন অটুট। আল্লাহর রাসূল (সা.) কে অনুসরণ করে আমাদেরকেও সাহসের সাথে দ্বীনের দাওয়াত দিতে হবে।
তিনি বলেন, শোক ও ভক্তি দেখাতে গিয়ে এমন কোনো কাজ করা যাবে না, যাতে শিরক ও বিদআতে পরিণত হয়। এ ব্যাপারে আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। আল্লামা সাঈদী ২ টার্ম জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন। তিনি দেশ জাতি এবং মুসলমানদের পক্ষে এবং অন্যায় আবিচারের বিরুদ্ধে সংসদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। সাঈদী আজ দুনিয়াতে নেই কিন্তু আরো হাজার হাজার সাঈদী আছে যারা তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে দিনরাত চেষ্টা করে যাবে, ইনশাআল্লাহ।
বিশেষ অতিথি জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চল পরিচালক মোবারক হোসাইন বলেন, বিশ্ব বরেণ্য মুফাসসিরে কুরআন, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী একটি নাম, একটি ইতিহাস। তিনি বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশকে পরিচয় করে দিতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি পঞ্চাশটির অধিক দেশে কুরআনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করেছেন। ইসলাম ভুলে যাওয়া শত সহ¯্র মুসলিম তার ওয়াজের মাধ্যমে ইসলামের সঠিক পথে এসেছেন। শতশত অমুসলিম তার দাওয়াত গ্রহণ করে শান্তির ধর্ম ইসলাম কবুল করেছেন। মহান রব তাকে শহীদ হিসেবে কবুল করে জান্নাতুল ফিরদাউসে উচ্চ মাকাম দান করুন, আমীন।
বিশেষ অতিথি অধ্যাপক গোলাম আযমের জ্যেষ্ঠ পুত্র মামুন আল আযামী বলেন, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ওয়াজের প্রভাব ছিল উল্লেখ করার মত। তার ওয়াজ শুনে ইউরোপ-আমেরিকার বহু ব্যবসায়ী মদসহ হারাম পণ্যের ব্যবসায় পরিত্যাগ করেছেন। বহু মানুষ নিজেদেরকে প্রাক্টিসিং মুসলিম হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াস পেয়েছেন। ইসলামিক সার্কল অব নথ আমেরিকা (ইকনা) সর্ব প্রথম তাকে ‘আল্লামা’ উপাধিতে ভূষিত করে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তৃতা করে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও যশোর জেলার সাবেক আমীর মাওলানা আজিজুর রহমান, বিশিষ্ট ইসলামী গবেষক ড. খলিলুর রহমান মাদানী, আল্লামা সাঈদীর পুত্র পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানি উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী, সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী এডভোকেট গাজী এনামুল হক, যশোর পশ্চিম জেলার আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান এবং কুরআন তেলাওয়াত করেন হাফেজ মাওলানা মঈন উদ্দীন।