আজ পবিত্র আশুরা
আজ ১০ই মহররম। পবিত্র আশুরা। ইসলামের ইতিহাসে এদিনে অনেক ঘটনা ঘটেছিল। এদিনেই আল্লাহ্? তায়ালা পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং এদিনেই পৃথিবী ধ্বংস করবেন। এদিনে অনেক নবী-রাসূল জন্মগ্রহণ করেন। আদি পিতা হযরত আদম (আ:)-এর তওবা কবুল হয়েছিল এদিনে। এদিনই হযরত নূহ (আ:) ও তার সঙ্গীরা ভয়াবহ প্লাবন থেকে মুক্তি পান। হযরত ইউনূস (আ:) মাছের পেট থেকে মুক্তি লাভ করেন এইদিনে।
আবার এই পবিত্র দিনেই ঘটে যায় মুসলিম ইতিহাসের এক মর্মান্তিক ও কলঙ্কজনক ঘটনা। ইরাকের ফোরাত নদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা:)-এর প্রিয় দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসেন (রা:) এবং তার পরিবারের সদস্যদের সহ ৭২ জন সহযোগীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। অভিযোগ রয়েছে তৎকালীন শাসক ইয়াজিদ তার অবৈধভাবে দখল করা ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখার ক্ষেত্রে ইমাম হুসাইন এবং তাঁর পরিবারকে প্রতিদ্বন্দ্বী ও বড় হুমকি মনে করতেন। কারণ, ইসলামী শাসন ব্যবস্থায় নিয়ম ছিল খলিফা মুসলমানদের মতামতের ভিত্তিতে সবচেয়ে সৎ, যোগ্য ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি ‘খলিফা’
‘নির্বাচিত’ হবেন। কোনভাবেই কারো একক সিদ্ধান্তে মনোনীত হবেন না। কিন্ত আমীর মুয়াবিয়া মুসলমানদের মতামতকে উপেক্ষা করে নিজ পুত্র ইয়াজিদকে মুসলিম উম্মার শাসক মনোনীত করে যান। এর ফলে ইসলমী খেলাফত ব্যবস্থা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং তার পরিবর্তে জায়গা করে নেয় রাজতন্ত্র নামক জাহেলী ব্যবস্থা। সুতরাং ইয়াজিদ ক্ষমতা লাভ করেন পৈত্রিক সূত্রে, যা সে সময়ের মুসলিম নেতৃবৃন্দ মেনে নিতে চাননি। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হযরত হোসাইন (রাঃ)। মুসলিম নেতৃবৃন্দ চেয়েছিলেন ইমাম হুসাইনকেই মুসলমানদের খলিফা নির্বাচিত করতে। জনমত ছিল তাঁর পক্ষেই। এ অবস্থায় ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ইয়াজিদ নবী পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা করেন। তিনি ইমাম হুসাইনের হাতে খেলাফতের দায়িত্ব তুলে দেয়ার কথা বলে কুফা নগরীতে আমন্ত্রণ জানান। অন্যদিকে তার সেনাপ্রধানকে নির্দেশ দেন হযরত ইমাম হোসেন (রা:)কে পথে কারবালার প্রান্তরে অবরুদ্ধ করার। অভিযোগ রয়েছে ইয়াজিদ তার ক্ষমতাকে নিষ্কণ্টক করতে কারবালা হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দেন। তার নির্দেশেই সেনাবাহিনী হত্যা করে ইমাম হোসেন (রা:)-সহ তাঁর স্ত্রী, পুত্র ও নিকটাত্মীয়দের। তৃষ্ণার্ত ইমাম পরিবারকে ফোরাত নদীর পানি পর্যন্ত পান করতে দেয়া হয়নি।
এরপর থেকে কারবালার এই শোকাকুল ঘটনাকে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সত্যের সংগ্রাম হিসেবে স্মরণ করা হয়।
ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা এ দিনটি পালন করে থাকেন। এ দিনটি তাই একদিকে মুসলমানদের জন্য শোকাবহ, অন্যদিকে তাৎপর্যমণ্ডিত। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে দিবসটি পালন করা হয়।