জাহাঙ্গীরের বিষয়ে জায়েদা খাতুনকে কী বলেছেন প্রধানমন্ত্রী
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে গতকাল সোমবার জায়েদা খাতুন শপথ নেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রীর সামনে জাহাঙ্গীর আলমের উপস্থিতি সবাইকে অবাক করেছে। শপথ অনুষ্ঠানের পর শেখ হাসিনার সঙ্গে মা জায়েদা খাতুন কথা বলেছেন বলেও জানালেন জাহাঙ্গীর। তাঁর দাবি, মায়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আলাপচারিতায় দলের জন্য কাজ করার বার্তা পেয়েছেন তিনি।
আজ মঙ্গলবার সকালে গাজীপুরের ছয়দানা এলাকায় জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে গেলে বেশ কিছু সময় তাঁর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের প্রসঙ্গ উঠতেই তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শপথ অনুষ্ঠানের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মায়ের (জায়েদা খাতুন) কথা হয়েছে। মা আমার কথা তাঁর কাছে বলছেন। এ সময় তিনি (প্রধানমন্ত্রী) মাকে বলেছেন, ছেলেকে দলের জন্য কাজ করতে বলেন। বিষয়টি যেহেতু আনুষ্ঠানিকভাবে বলেননি, তাই এর চেয়ে বেশি কিছু আমি বলতে চাই না।’
জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মায়ের কয়েক মিনিট কথা হয়েছে। এ নিয়ে আমার বলা কি ঠিক হবে? আমি এ মুহূর্তে কিছু বলতে চাচ্ছি না। আপনারা অপেক্ষা করুন, ভালো কিছু দেখতে পাবেন।’ জায়েদা খাতুন কবে থেকে মেয়র হিসেবে কাজ শুরু করবেন, জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা এখনো পাওয়া যায়নি। সেটি পেলেই মা নগর ভবনে গিয়ে দায়িত্ব বুঝে নেবেন।’
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, শত শত কর্মী-সমর্থক তাঁর বাড়িতে ভিড় করেছেন। আগের মতোই তাঁর বাড়িতে মানুষের আনাগোনা। কেউ ছবি তোলায়, কেউবা জাহাঙ্গীরের সঙ্গে কথা বলার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। অনেকেই তাঁর সঙ্গে হাত মিলিয়েই চলে যাচ্ছেন।
মায়ের পাশে থেকে দল ও মহানগরীর জন্য কাজ করে যাবেন জানিয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ছাত্রজীবন থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করে আসছি। সব ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে গাজীপুরে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার আস্থা ও ভরসার স্থান। গাজীপুরের জনগণ আমার সঙ্গে আছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছেন। আমি আওয়ামী লীগের জন্য এবং এ মহানগরীর উন্নয়নের জন্য মায়ের পাশে থেকে কাজ করে যাব।’
আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন জাহাঙ্গীর। পাশাপাশি তাঁর মা জায়েদা খাতুনের নামেও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছিল। ঋণখেলাপির জামিনদার হওয়ায় জাহাঙ্গীরের প্রার্থিতা শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে যায়। পরে আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কৃত হন জাহাঙ্গীর।
সাধারণ গৃহিণী থেকে বিশেষ পরিস্থিতিতে মেয়র প্রার্থী হয়ে আলোচনায় আসেন ৬১ বছর বয়সী জায়েদা খাতুন। তাঁর নির্বাচনী কার্যক্রমে প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেন ছেলে জাহাঙ্গীর। তিনি মায়ের পক্ষে দিন-রাত প্রচারণা চালান। ভোটের প্রচারণায় জায়েদা খাতুন নিজেকে জাহাঙ্গীরের মা হিসেবেই পরিচয় দেন। ফলে ভোটের লড়াইয়ে কার্যত আজমত উল্লার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাহাঙ্গীর।
নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান। তিনি ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট পেয়েছিলেন।