ইসলামে নারীর পার্লারিং
এস.এইচ.এম. আব্দুল কাদের,
নারীর সাজসজ্জার ব্যাপারে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা অনুমতি দিয়েছেন। তবে তা শুধুমাত্র স্বামীকে দেখানোর জন্য আর বাকি সব অবস্থায় নারী পর্দা মেনে চলবে। রাসূল পাক (সা.) হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, স্বামী, বাবা এবং আপন ভাইয়ের সামনে যাওয়া ইসলাম সমর্থন দিয়েছে। তাদের সামনে একটু আকটু সাজসজ্জায় কোনো বাধা নেই। তবে সাজসজ্জা শুধুমাত্র স্বামীকে দেখানোর জন্যই প্রযোজ্য।
রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো,
أَىُّ النِّسَاءِ خَيْرٌ قَالَ الَّتِى تَسُرُّهُ إِذَا نَظَرَ
‘কোন নারী উত্তম? তিনি (সা.) উত্তরে বললেন, যে স্বামীকে আনন্দিত করে যখন সে (স্বামী) তার দিকে তাকায়।’ (নাসাঈ হা/৩২৩১; মিশকাত হা/৩২২৭; ছহীহাহ হা/১৮৩৮)।
যেসব সাজসামগ্রী হালাল বস্তু দ্বারা তৈরি, যা দ্বারা আল্লাহর সৃষ্টি করা গঠনে কোনো বিকৃতি ঘটে না, তা ব্যবহার করা জায়েজ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সাজসজ্জা ইসলামী জীবন রীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। ইসলাম নির্দেশ দেয় যে স্ত্রী যেন ঘরেও স্বামীর জন্য সর্বোত্তম সাজসজ্জা করে থাকে। স্বামীর উদ্দেশে সাজসজ্জা করা একটি ইবাদত। ‘আজীবনের সঙ্গী’ অথবা ‘সব সময় দেখছে’ বলে তার সামনে একেবারে অগোছালো থাকা ইসলামী শিক্ষাবিরোধী। (আলমুফাস্সাল ফি আহকামিল মারআ : ৩/৩৪৮)
এরপরও ইসলামে নারীর সাজের ব্যাপারে রয়েছে কিছু বিধি-নিষেধ। এমনকি ৪টি সাজকে পুরোপুরি হারাম করেছে। চলুন তবে জেনে নিই ইসলামে নারীদের নিষিদ্ধ সাজসজ্জাগুলো কী কী-
#ঘণ্টাযুক্ত_নুপুর_পরা: একদিন মা আয়েশা (রা.) এর নিকট কোনো এক বালিকা বাজনাদার নুপুর পরে আসলে তিনি তাকে বললেন: খবরদার! তা কেটে না ফেলা পর্যন্ত আমার ঘরে প্রবেশ করবে না। অতঃপর তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ঘরে ঘণ্টি থাকে সেই ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। (সুনানে আবু দাউদ হাদিস : ৪২৩১; সুনানে নাসাঈ হাদিস : ৫২৩৭)।
নারীর সাজসজ্জার ব্যাপারে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা অনুমতি দিয়েছেন। তবে তা শুধুমাত্র স্বামীকে দেখানোর জন্য আর বাকি সব অবস্থায় নারী পর্দা মেনে চলবে। রাসূল পাক (সা.) হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, স্বামী, বাবা এবং আপন ভাইয়ের সামনে যাওয়া ইসলাম সমর্থন দিয়েছে। তাদের সামনে একটু আকটু সাজসজ্জায় কোনো বাধা নেই। তবে সাজসজ্জা শুধুমাত্র স্বামীকে দেখানোর জন্যই প্রযোজ্য।
রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো,
أَىُّ النِّسَاءِ خَيْرٌ قَالَ الَّتِى تَسُرُّهُ إِذَا نَظَرَ
‘কোন নারী উত্তম? তিনি (সা.) উত্তরে বললেন, যে স্বামীকে আনন্দিত করে যখন সে (স্বামী) তার দিকে তাকায়।’ (নাসাঈ হা/৩২৩১; মিশকাত হা/৩২২৭; ছহীহাহ হা/১৮৩৮)।
এরপরও ইসলামে নারীর সাজের ব্যাপারে রয়েছে কিছু বিধি-নিষেধ।
#ঘণ্টাযুক্ত_নুপুর_পরা: একদিন মা আয়েশা (রা.) এর নিকট কোনো এক বালিকা বাজনাদার নুপুর পরে আসলে তিনি তাকে বললেন: খবরদার! তা কেটে না ফেলা পর্যন্ত আমার ঘরে প্রবেশ করবে না। অতঃপর তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ঘরে ঘণ্টি থাকে সেই ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। (সুনানে আবু দাউদ হাদিস : ৪২৩১; সুনানে নাসাঈ হাদিস : ৫২৩৭)।
সহিহ মুসলিমে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ঘণ্টি, বাজা, ঘুঙুর হলো, শয়তানের বাদ্যযন্ত্র। (সহিহ মুসলিম হাদিস : ২১১৪)।
#কপালে_টিপ_পড়া: আসুন আজ আমরা জেনে নেই টিপ কোথা থেকে এসেছে? আর কেনই বা রাসূল (সা.) নারীদের কপালের মধ্যেখানে বড় ধরনের টিপ পড়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-কে যখন আগুনে নিক্ষেপ করার জন্য চড়ক স্থাপন করেছিল; তখন ফেরেশতারা অন্যপ্রান্ত থেকে বাধা দিচ্ছিল। তখন শয়তান এসে নমরুদের লোকদের পরামর্শ দিয়েছিল, যখন ফেরেশতারা বাধা দেবে তখন তাদের সামনে খারাপ নারীদের এনে রাখতে। যাদের কপালে টিপ থাকবে এবং তারা উলঙ্গ থাকবে। এতে করে রহমতের ফেরেশতারা দূরে সরে যাবে। তাই করা হলো। নারীদের উলঙ্গ করে এনে সামনে বসিয়ে দেয়া হলো। অতঃপর রহমতের ফেরেশতারা চলে গেল। তখন থেকে নারীদের কপালে টিপ দেয়া বিধানটি ইসলামে নিষিদ্ধ রয়েছে। কারণ এটি খারাপ কর্মে লিপ্ত নারীদের প্রতিক হিসেবে ধরা হতো।
তবে যে সব নারীরা কপালে টিপ দিয়ে থাকেন। তারা সবাই দুশ্চরিত্রা বা খারাপ এই কথাটি কোনো ভাবেই বলা যাবে না। তবে না জেনেই সাধারণত নারীরা এই কাজটি করে থাকেন। আশাকরি খারাপ দৃষ্টি থেকে নিজেদের সরিয়ে নেবেন। কপালে টিপ পড়বেন না।
#পরচুলা_বা_নকল_চুল_লাগানো: হজরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, যে নারী পরচুলা লাগায়, লাগিয়ে দেয় আর লাগাতে বলে। এছাড়া যে নারী গায়ে উল্কি আঁকে তাদেরকে অভিশাপ দেন রাসূল (সা.)। বর্তমানে নারীদেরকে দেখা যায় শরীরের বিভিন্ন অংশে অঙ্কন করে। যা ইসলামে পুরোপুরি নিষিদ্ধ কাজ। এমনকি এই পাপাচার মানুষকে পথভ্রষ্ট করে ফেলে।
নারীরা পরচুলা ব্যবহার করতে পারে, যদি তা সুতা, পশম, কাপড় বা এজাতীয় কিছু দ্বারা তৈরি করা হয় এবং চুলের সাদৃশ্য না হয়। আর যদি মানুষের চুল দ্বারা তৈরি করা হয় বা চুলের সাদৃশ্য হয়, তাহলে তা ব্যবহার করা হারাম। (আলমুগনি : ১/৯৪)
#ভ্রু_প্লাক_করা: স্বামী চাইলেও কপালের পশম চাঁছা ও ভ্রু প্লাক করা ইসলামে জায়েজ নেই। কেননা এর দ্বারা আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন করা হয়। যার অনুমতি ইসলামে নেই। এভাবে মুখে বা হাতে সুই ফুটিয়ে নকশা আঁকা বা ট্যাটু করাও বৈধ নয়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক ওই নারীদের ওপর, যারা দেহাঙ্গে উল্কি উতকীর্ণ করে এবং যারা করায়, যারা ভ্রু চেঁছে সরু (প্লাক) করে ও যারা সৌন্দর্য বৃদ্ধির মানসে দাঁতের মধ্যে ফাঁক সৃষ্টি করে এবং যারা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন আনে। (বোখারি, হাদিস : ৪৮৮৬)।
#পোশাক : নারী ও পুরুষ যেহেতু পৃথক সত্তা। সৃষ্টিগতভাবে তাদের মধ্যে পার্থক্য আছে। এই পার্থক্য বজায় রাখা জরুরি। তাই নারীদের জন্য পুরুষের কাটছাঁটের পোশাক পরিধান করা এবং তাদের বেশ ধারণ করা নিষিদ্ধ। (বুখারি, হাদিস : ৫৫৪৬)
টাইটফিট জামা, টাইটফিট বোরকা বা পাতলা পোশাক পরে বাইরে বের হওয়া কোনো মুসলিম নারীর জন্য জায়েজ নয়। (আলমুফাস্সাল ফি আহকামিল মারআ : ৩/৩৩০)
আবু ইয়াজিদ মুজানি (রহ.) বলেন, হজরত ওমর (রা.) মহিলাদের কাতাবি (মিসরে প্রস্তুতকৃত এক ধরনের সাদা কাপড়) পরতে নিষেধ করতেন। লোকেরা বলল, এ কাপড়ে তার ত্বক দেখা যায় না। তিনি বলেন, ত্বক দেখা না গেলেও দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ফুটে ওঠে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ২৫২৮৮)
নিউ মডেল বা ফ্যাশনের জামা-কাপড় পরিধান করা তখনই বৈধ হবে, যখন তা পর্দার কাজ দেবে এবং তাতে কোনো কাফিরের অনুকরণ না হবে। আর নারীদের সালোয়ার টাখনুর নিচে থাকা উচিত। (ফাতহুল বারি : ১০/২৫৯)
#অলংকার : নারীরা কাচ বা যেকোনো ধাতুর চুড়ি পরিধান করতে পারবে। সোনা, রুপা, পিতল, তামা ইত্যাদি ধাতুর সব রকম অলংকার ব্যবহার করতে পারবে। তাই কান ও নাক ফোঁড়াতেও পারবে। (আপকে মাসায়েল : ৭/১৩৮)
#নারীরা পরচুলা ব্যবহার করতে পারে, যদি তা সুতা, পশম, কাপড় বা এজাতীয় কিছু দ্বারা তৈরি করা হয় এবং চুলের সাদৃশ্য না হয়। আর যদি মানুষের চুল দ্বারা তৈরি করা হয় বা চুলের সাদৃশ্য হয়, তাহলে তা ব্যবহার করা হারাম। (আলমুগনি : ১/৯৪)
#চুল_কাটা : কোনো অপারগতা, অক্ষমতা, রোগ ইত্যাদি ছাড়া নারীদের মাথা মুণ্ডানো বা চুল ছাঁটা বৈধ নয়। (ফাতাওয়া আলমগিরি : ৫/৩৫৮)
নারীদের মুখে পশম হলে করণীয় : নারীদের গোঁফ-দাড়ি হলে মুণ্ডিয়ে ফেলা মুস্তাহাব। কোনোভাবে মূল থেকে তুলে ফেলতে পারলে আরো ভালো। (আলমাজমু : ১/৩৪৯)
নারীদের জন্য চেহারার অতিরিক্ত পশম তুলে ফেলা জায়েজ। (আপকে মাসায়েল : ৭/১৩৫)
#ভ্রু_প্লাক_করা : সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন উপায়ে ভ্রু চিকন করার যে প্রথা বর্তমানে প্রচলিত আছে, তা বৈধ নয়। (মুসলিম, হাদিস : ২১২৫)
#দাঁত_ফাঁক_করা : কৃত্রিমভাবে দাঁতের মধ্যে ফাঁক তৈরি করা জায়েজ নয়। তবে কোনো দাঁত অস্বাভাবিক বাঁকা বা অতিরিক্ত থাকলে তা সোজা করা বা তুলে ফেলা বৈধ। (সহিহ মুসলিম বি শরহিন নাবাবি : ১৪/১০৭)
#নখ_বড়_রাখা : হাত-পায়ের নখ বড় রাখা বিজাতীয়দের স্বভাব ও একটি ঘৃণিত কাজ। অনেক সময় নখের ভেতর ময়লা জমে খাবারের সময় পেটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। প্রতি সপ্তাহে হাত-পায়ের নখ কাটা সুন্নত। অন্তত দুই সপ্তাহে একবার কাটলেও চলবে। তবে ৪০ দিনের বেশি না কাটা অবস্থায় অতিবাহিত হলে গুনাহ হবে। (মুসলিম, হাদিস : ২৫৮)
#নেইলপলিশ : নেইলপলিশ যদি পবিত্র বস্তু দ্বারা প্রস্তুত করা হয়, তাহলে তা ব্যবহার করা জায়েজ। তবে নেইলপলিশ যেহেতু পানি প্রবেশের প্রতিবন্ধক, তাই তা নখে থাকা অবস্থায় অজু ও ফরজ গোসল হবে না। নখ থেকে তুলে অজু ও ফরজ গোসল করতে হবে। বারবার অজুর সুবিধার্থে নেইলপলিশ ব্যবহার না করাই অধিক নিরাপদ। (আপকে মাসায়েল : ৭/১৩৭)
#মেহেদি : নারীদের জন্য সর্বদা হাত-পা মেহেদি দ্বারা রাঙিয়ে রাখা মুস্তাহাব। এতে স্বামী আনন্দিত হয়। অজু-গোসলেও কোনো সমস্যা হয় না। কেউ কেউ পায়ে মেহেদি লাগানোকে খারাপ মনে করেন এই যুক্তিতে যে নবীজি (সা.) দাড়িতে মেহেদি লাগাতেন, অতএব, তা পায়ে লাগানো বেআদবি—এ যুক্তি ঠিক নয়। নবীজি (সা.) দাড়িতে তেল লাগাতেন, তাই বলে কি পায়ে তেল লাগানো বেআদবি হবে? (আউনুল মাবুদ : ১১/২২৩) মহানবী (সা.) তেল, ক্রিম ইত্যাদি ব্যবহার করতেন, তাই তেল ব্যবহার করা সুন্নত। ক্রিম, স্নো, পাউডার ইত্যাদি ব্যবহার করায় কোনো দোষ নেই, যদি এগুলোতে কোনো নাপাক বস্তু মিশ্রিত না থাকে। (আউনুল মাবুদ : ৫/২৭৬)
#সেন্ট_পারফিউম_বডি_স্প্রে : সেন্ট, পারফিউম, বডি স্প্রে ইত্যাদিতে যদি কোনো ধরনের নাপাক বস্তু মিশ্রিত না থাকে, তাহলে তা ব্যবহার করা জায়েজ। মুসলিম নারীরা গৃহের মধ্যে অবশ্যই সুগন্ধি ব্যবহার করবে। (তুহফাতুল আহওয়াজি : ৮/৭১)
চলবে..……… সাথে থাকুন