সরিষার তেল স্বাস্থ্যকর না ক্ষতিকর
রান্নায়, ভর্তায় কিংবা বিভিন্ন আচারে দীর্ঘকাল থেকে সরিষার তেল ব্যবহৃত হচ্ছে। শুধু ঝাঁজেই নয়, মুখের রসনা বাড়াতে খাবারের স্বাদ রাঙাতে, ত্বকের যত্নে, এমনকি গাঁটের ব্যথা কমাতে সরিষার তেলের তুলনা নেই। এই তেলের রয়েছে অনেক উপকারী দিক।
চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে, সরিষার তেল মস্তিষ্কের জন্য ভীষণ উপকারী। বিশেষ করে অবসাদ কাটাতে, স্মৃতিশক্তি আর মনঃসংযোগ বাড়াতে এ তেল যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সরিষা তেল ক্যানসার প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে। এ তেলে বিদ্যমান মনোআনস্যাচুরেটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।
কিছু দেশে এই তেল খাবার হিসাবে ব্যবহারের ওপর তবে উন্নত বিশ্বের কিছু দেশ সরিষার তেলেও ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কারণ, এ তেলে প্রায় ২০-৪০ শতাংশ এরিউসিক অ্যাসিড আছে যা শরীরে ট্রাইগ্লিসারাইড তৈরি করে। যার কারণে হৃদপিণ্ডে মারাত্মক ক্ষতি হয়। এছাড়াও ফুসফুসের ক্যানসার ও এনিমিয়ার জন্যও এটি দায়ী।
এক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘকাল ধরে এরিউসিক অ্যাসিড প্রবেশ করলে সেটি হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করে এক ধরনের রোগের সৃষ্টি করে, যার নাম মায়োকার্ডিয়াল লিপিডোসিস। যদিও সরাসরি মানব শরীরে এ নিয়ে কোনো ধরনের গবেষণা এখনো পাওয়া যায়নি। তবে কারো শরীরে অল্প মাত্রায় এরিউসিক অ্যাসিড প্রবেশ করলে সেটা নিরাপদ। কিন্তু এর মাত্রা অধিক হলেই সেটি বিপজ্জনক হতে পারে মানব শরীরে।
ক্যালরি ও ফ্যাটের পরিমাণের দিক থেকে সব তেলই সমান। (১ চা চামচ তেল = ৪৫ কি.ক্যালরি)
তাই সার্বিক বিবেচনায় এ তেলের উপকারী দিক থেকে নিজেকে পুরোপুরি বঞ্চিত না করে, অল্প পরিমাণে অন্যান্য তেলের পাশাপাশি প্রয়োজনে সরিষার তেল গ্রহণ করতে পারেন। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন বিশেষ করে ছোট শিশু ও গর্ভবতী মায়েরা।
মনে রাখবেন, দোকানের খোলা সরিষার তেলে ভেজাল মিশ্রিত থাকে, যা ব্যবহার করলে নানা রকম অসুখ-বিসুখ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই খাঁটি সরিষার তেল ব্যবহার করবেন এবং কেনার ক্ষেত্রে সাবধান হতে হবে।
লেখক: ডায়েটিশিয়ান এবং পুষ্টিবিদ, নির্বাহী পরিচালক বাংলাদেশ একাডেমি অব ডায়েটেটিক্স অ্যান্ড নিউট্রিশন (বিএডিএন)।