ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা ছেড়ে দিল সরকারি প্রতিষ্ঠান আইসিবি
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের (আইবিবিএল) পুরো শেয়ার ছেড়ে দিয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে থাকা প্রতিনিধিকেও সরিয়ে নিয়েছে আইসিবি।
ব্যাংকটির ২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ শেয়ার ছিল আইসিবির কাছে। ব্যাংকটিতে পরিচালক ছিলেন আইসিবির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) আবু তাহের মো. আহমেদুর রহমান। গত ৩১ মে থেকে তিনি আর ব্যাংকটিতে পরিচালক হিসেবে নেই।
যোগাযোগ করা হলে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইসিবি তাদের শেয়ার ছেড়ে দিয়েছে। এটা পর্ষদে আলোচনা হয়েছিল। অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর বেশি কিছু আমি জানি না।’
গত মে মাসে হাতে থাকা ইসলামী ব্যাংকের পুরো ৩ কোটি ৩৪ লাখ ৬৮ হাজার ৯৫৬টি শেয়ার বিক্রি করে দেয় আইসিবি। এরপর ৩১ মে ব্যাংকের ৩২২তম পরিচালনা পর্ষদের সভায় আইসিবি পরিচালকের প্রত্যাহারের বিষয়টির অনুমোদন হয়।
জানা যাচ্ছে, কয়েক মাস ধরে তারল্য–সংকটে ভুগছে ইসলামী ব্যাংক। তবে ঠিক কী কারণে এ সময় সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি শেয়ার ছেড়ে দিল, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ধারাবাহিকভাবে শেয়ার বিক্রি ও ক্রয় করে থাকি। তারই অংশ হিসেবে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে।’
ইসলামী ব্যাংকের প্রায় ৩০ শতাংশ শেয়ার চট্টগ্রামভিত্তিক একটি শিল্প গ্রুপের কাছে। ব্যাংকিং খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, তারাই ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রক এবং তাদের প্রতিনিধিরাই ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও বেশির ভাগ পরিচালকের পদে রয়েছেন। বর্তমানে চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান। ওই গ্রুপটির মালিক পরিবারের একজন সদস্যকে ব্যাংকটিতে নতুন চেয়ারম্যান করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
ওই গ্রুপটির বাইরে ব্যাংকের সাড়ে ৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সৌদি আরবের আল রাজী কোম্পানি ফর ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ট্রেডের কাছে। তাদের প্রতিনিধি ইউসুফ আবদুল্লাহ আল রাজী ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যান। এ ছাড়া প্রায় ১০ শতাংশ শেয়ারের মালিক সৌদি আরবের আরবাস ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিস্ট এজেন্সির প্রতিনিধি মুসাইদ আবদুল্লাহ আল রাজী ব্যাংকটির পরিচালক। ব্যাংকটিতে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (আইডিবি) শেয়ার ২ শতাংশ, তাদের পক্ষে পরিচালক হিসেবে আছেন আরেফ সুলেমান।
জানা গেছে, ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে জামায়াতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ২০১১ সাল পর্যন্ত একরকম নির্বিঘ্নে ব্যাংকটি পরিচালনা করে আসছিল। ২০১১ সালের নভেম্বরে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি নতুন নিয়ম করে, তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে পরিচালক হতে হলে ওই পরিচালকের হাতে কোম্পানিটির ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার থাকতে হবে। এ বিধান করার পর ব্যাংকটিতে জামায়াতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের একচ্ছত্র আধিপত্যে কিছুটা ভাটা পড়ে। আর ২ শতাংশ শেয়ার ধারণের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ২০১৭ সালে শেয়ারবাজার থেকে শেয়ার কিনে ব্যাংকটির মালিকানায় চলে আসে চট্টগ্রামভিত্তিক গ্রুপটি। এরপর দেশি–বিদেশি অনেক কোম্পানি ও ব্যক্তি শেয়ার ছেড়ে দিতে শুরু করে।
এরপর ব্যাংকটিতে ঋণ অনিয়মের নানা ঘটনা ঘটে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে উঠে আসে।
১৯৮৩ সালে যাত্রা শুরু করা ইসলামী ব্যাংক শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৮৫ সালে। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আজ বুধবার ব্যাংকটির শেয়ারের দাম ছিল ৩২ টাকা ৬০ পয়সা।