Home সারাদেশ ভয়াবহ লোডশেডিং
জুন ৮, ২০২৩

ভয়াবহ লোডশেডিং

স্টাফ রিপোর্টার : চাহিদার তুলনায় ৩০ শতাংশ কম বিদ্যুৎ পাচ্ছে গ্রামে বসবাসকারী গ্রাহকরা। অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চাহিদার অর্ধেকে নেমে এসেছে। এতে লোডশেডিং পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কোথাও কোথাও লোডশেডিং হচ্ছে ১০ ঘণ্টার বেশি।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বলছে, গতকাল  ৯ হাজার ৪১৭ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ ছিল ৬ হাজার ৭১৪ মেগাওয়াট। গরমের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবারও বেড়েছে লোডশেডিং। এই গরমে বিদ্যুৎ না থাকায় ঘরে থাকা দায়।

সূত্র জানায়, ঢাকার বাইরে সিটি করপোরেশন ও পৌর শহরগুলোয় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো), নেসকো ও পিডিবি। শহরের পাশাপাশি কিছু জেলার গ্রামেও পিডিবি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। তবে দেশের মোট বিদ্যুৎগ্রাহকের ৫৫ শতাংশ বিদ্যুৎ পায় আরইবির সমিতি থেকে। ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, কুমিল্লা ও রাজশাহী অঞ্চলের গ্রাম এলাকায় ১২ ঘণ্টা লোডশেডিংয়েরও খবর পাওয়া যাচ্ছে। চট্টগ্রাম, রংপুর, সিলেট, বরিশালের গ্রামগুলোয় চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকার অভিযোগ করছেন গ্রাহকেরা। রোববার সারা দেশে আরইবি সর্বোচ্চ লোডশেডিং করেছে ২ হাজার ৭০৩ মেগাওয়াট।

কুষ্টিয়া জেলার সবচেয়ে বেশি গ্রাহক পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির। গতকাল বেলা একটায় লোডশেডিং ছিল ৫১ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এর আগে বেলা ১২টায় লোডশেডিং দিতে হয়েছে ৫০ দশমিক ৪০ শতাংশ। সমিতির কর্মকর্তারা বলছেন, গড়ে ২৪ ঘণ্টায় ১২ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে।

সূত্র জানায়, বেশির ভাগ জেলায় সমিতির মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আরইবি। কোনো কোনো জেলায় একাধিক সমিতি আছে। এগুলো পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি নামে পরিচিত। এসব সমিতির আওতায় একটি নির্দিষ্ট এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। চাহিদার তুলনায় অর্ধেকের কম সরবরাহ পাচ্ছে যেসব সমিতি, তাদের এলাকায় ১২ ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং দিতে হচ্ছে বাধ্য হয়ে।

গাজীপুর পল্লিবিদ্যুৎ সমিতি থেকে প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৪৬২ মেগাওয়াট। তার বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ মেগাওয়াট। গাজীপুর পল্লিবিদ্যুৎ সমিতি-১ এর উপমহাব্যবস্থাপক (টেকনিক্যাল) জাহিদুল ইসলাম বলেন, সোমবার দুপুর পর্যন্ত ৩৯ শতাংশ লোডশেডিং রয়েছে।

রাজশাহীতে একদিকে অতিরিক্ত লোডশেডিং, অন্যদিকে অব্যাহত তাপপ্রবাহ। রাজশাহীর  ভুক্তভোগী মানুষজন বলেন, রাতে দিনে মিলে ১২ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকছে না। একবার গেলে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং থাকছে। রাতে ঘুমের কষ্ট হচ্ছে।

দিনাজপুরে গত এক সপ্তাহে ৪০-৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে ওঠানামা করছে তাপমাত্রা। জেলার সদর উপজেলার চেহেলগাজী ইউনিয়নের বাঁশেরহাট এলাকার বাসিন্দা আসমাউল হুসনা বলেন, দিনেরাতে কম করে ১০ থেকে ১২ বার বিদ্যুৎ যায়। একবার গেলে এক থেকে দেড় ঘণ্টা পরে আসে। প্রায় একই অভিজ্ঞতা বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলা গৃহিণী চম্পা বানুর। তিনি বলেন, গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে লোডশেডিং।

গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে হাসপাতালে রোগীদের খুবই খারাপ অবস্থা হচ্ছে। অস্ত্রোপচারের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে।

লক্ষ্মীপুরে চলমান লোডশেডিংয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গ্রাহকদের দাবি, একঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলে লোডশেডিং থাকে দেড়ঘণ্টারও বেশি। এতে গরমে হাসপাতালে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগীরা।

সরকারিভাবে তিনদিন প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও পরীক্ষা কার্যক্রমে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। লোডশেডিংয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরাও। বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দিনে ১২-১৪ ঘণ্টা লোডশেডিং থাকছে।

লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় রায়পুর উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কার্যালয়ে হামলার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় মৌখিকভাবে উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম সাহাদাত হোসেন রায়পুর থানাপুলিশকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য বলেছেন। গতকাল বুধবার বিকেলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিপন বড়ুয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সন্ধ্যায় সদর হাসপাতালে গেলে শিশু ওয়ার্ডের সামনে মেঝেতে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতে দেখা যায় স্বজনদের। গরম অসহ্য যন্ত্রণায় রয়েছেন বলে জানান রোগী ও তাদের স্বজনরা।

লক্ষ্মীপুর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র জানায়, তাদের অধীনে প্রায় ৩৮ হাজার গ্রাহক রয়েছে। তারা সবাই লক্ষ্মীপুর পৌরসভার বাসিন্দা। পিকআওয়ারে ১৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। কিন্তু সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র ৯ মেগাওয়াট। এতে লোডশেডিং চরম আকার ধারণ করেছে।

লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্তৃপক্ষ জানায়, জেলা সদর, রায়পুর, রামগতি, কমলনগর ও রামগঞ্জে পল্লী বিদ্যুতের আওতায় তাদের প্রায় সোয়া পাঁচ লাখ গ্রাহক রয়েছে। এতসংখ্যক গ্রাহকের বিপরীতে কত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন ও কত মেগাওয়াট পাচ্ছেন তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম জাকির হোসেন।

তবে রায়পুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্র জানায়, এ উপজেলায় ৯৮ হাজার ৮৫৬ জন গ্রাহক রয়েছে। পিকআওয়ারে ১৮ মেগাওয়াট ও অফ পিকআওয়ারে ১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। কিন্তু জাতীয় গ্রিড থেকে পিক আওয়ারে মাত্র ৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।

রাজধানী ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) ও ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)। এ দুই সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান , গতকালও বেশির ভাগ এলাকায় দিনে অন্তত তিনবার করে লোডশেডিং হয়েছে। দুটি সংস্থা মিলে ঘণ্টায় লোডশেডিং করেছে ৬০০ মেগাওয়াটের মতো।

উত্তরাঞ্চলের শহর এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে নর্দান ইলেকট্রিক কোম্পানি (নেসকো)। দিনাজপুর নেসকো ডিভিশন-২এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামাল বলেন, ৩০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ হয়েছে ১২-১৪ মেগাওয়াট।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ম তামিম বলেন, গত বছর আদানি ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদন শুরু আর প্রকৃতির ভরসায় সংকট উত্তরণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যথাসময়ে ওই দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসেনি। শীত তখন বাঁচিয়েছে। এবারও বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়ানোর আশ্বাস দিচ্ছে সরকার। তবে তা থেকে পায়রা বন্ধের ঘাটতি পূরণ হতে পারে, লোডশেডিং কমবে না। তাই আবারও প্রকৃতির ওপর ভরসা করা ছাড়া উপায় নেই।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *