Home জাতীয় ‘শিবির’ অপবাদে কোটা আন্দোলনকারীকে রুমে নিয়ে পেটালেন ছাত্রলীগ সভাপতি
জুলাai ১১, ২০২৪

‘শিবির’ অপবাদে কোটা আন্দোলনকারীকে রুমে নিয়ে পেটালেন ছাত্রলীগ সভাপতি

কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে ‘শিবির অ্যাখ্যা’ দিয়ে নিজ রুমে তুলে নিয়ে গিয়ে হুমকি ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের মোস্তাফিজুর রহমানের নিজ কক্ষে প্রায় দুই ঘণ্টা জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এ সময় ভুক্তভোগী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) দুপুরে নিজের নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম মোস্তফা মিয়া। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অন্যদিকে অভিযুক্তরা হলেন, শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও তার অনুসারী সৈয়দ আমীর আলী হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ফরহাদ হাসান খান ও ছাত্রলীগ কর্মী শামীম রেজা।

লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগী মোস্তফা মিয়া বলেন, গত ৮ জুলাই রাবির চারুকলা সংলগ্ন ওভার ব্রিজের নিচে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। বিষয়টি ইসলামিক স্ট্যাডিজ বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা ছাত্রলীগ সভাপতির অনুসারী ফরহাদ হাসান খানকে জানান। এতে ফরহাদ তাকে কল করে ক্যাম্পাসে দেখা করতে বলেন। এটা জানার পর মোস্তফা শঙ্কিত হয়ে বিষয়টি তার বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আরিফ মাহমুদকে জানান। পরে আরিফ বিষয়টি শাখা ছাত্রলীগ সভাপতির আরেক অনুসারী শামীম রেজাকে জানান।

লিখিত অভিযোগে শিবির আখ্যা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে মোস্তফা মিয়া বলেন, ‘আমি আরিফ ভাইয়ের সঙ্গে গত ৯ জুলাই শহিদুল্লাহ অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে দেখা করি। শামীম রেজা ভাই সেখানে উপস্থিত হন। তাকে সবকিছু বিস্তারিত বলি যে ফরহাদ ভাই আমাকে কল করে ডেকেছেন। পরে তিনি ফরহাদ ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। এ সময় তাকে বলতে শুনি, ‘শিবির ধরছি, নিয়ে আসবো নাকি?’ কথা বলে আমাকে টুকিটাকি চত্বরে নিয়ে যায়। সেখানে ফরহাদ হাসান খান ভাই উপস্থিত ছিলেন। ভাই আমাকে গালিগালাজ করে আমাকে শিবির আখ্যা দিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ভাইকে কল করে বঙ্গবন্ধু হলে তার রুমে নিয়ে যান।’

ছাত্রলীগ সভাপিত ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ তুলে বলেন, ‘মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ভাইয়ের কাছে নিয়ে গেলে তিনি আমাকে শিবির আখ্যা দিয়ে ফোন চেক করতে শুরু করেন। শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় ফেসবুকে কোটা আন্দোলনের পোস্ট দেখে মারধর শুরু করেন। মারার সঙ্গে সঙ্গে বলতে থাকেন, ‘তুই শিবির করিস স্বীকার কর’। তবে আমার সঙ্গে শিবিরের ন্যূনতম সম্পর্ক নাই- বিষয়টি পরিষ্কার করে বলি। এরপর পাঁচজন দাঁড়িয়ে আমাকে ঘিরে রাখেন। আর বাবু ভাই লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে থাকেন। এর মধ্যে ফরহাদ ভাই লাথি আর ঘুষি মারেন- সেই সঙ্গে অন্যরাও লাথি ও ঘুষি মারতে থাকেন। তারা ৮ থেকে ১০ মিনিট মেরে কিছু সময় বিরতি নেন, আবার মারেন। এভাবে দুই ঘণ্টার অধিক সময় আমার ওপর নির্যাতন চালান।

হল থেকে মোস্তফাকে বের করে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি অভিযোগ করেন, ‘মারধরের পর তারা আমাকে হল ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। পরে বাবু ভাইয়ের একজন অনুসারী শহীদ শামসুজ্জোহা হলের গণরুম থেকে আমাকে বের করে দেন। এখন আমি ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করছি। উক্ত ঘটনার পর আমি চরমভাবে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। আমার জীবন নিয়ে আমি শঙ্কায় আছি।

মারধরের বিষয়ে অভিযুক্ত শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানকে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, কয়েকজন এসে আমাকে আজ অভিযোগটি দিয়ে গেছে। আমি তা পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য সহকারী প্রক্টরদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *