কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
আগস্টে দেশে বড় ধরনের বন্যা হতে পারে। এমন আশঙ্কায় কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বন্যা হতে পারে, পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। কাজেই আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে, সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি বাজেট বাস্তবায়ন বাড়াতে অর্থবছরের শুরু থেকেই প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনেতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে তিনি এসব নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে ওই বৈঠকে তিনি প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার ১১টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে এসব বিষয় তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম।
ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার, পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিত কর্মকার, ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মো. এমদাদ উল্লাহ মিয়ান, কৃষি, পানি, পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) আব্দুল বাকী, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন প্রমুখ।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রকল্প পরিচালকদের প্রশিক্ষণে জোর দিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে এক প্রকল্পের জন্য যেন একজন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়, সেটি নিশ্চিত করতে বলেছেন। এছাড়া ঢাকা অঞ্চলের আশপাশে যেখানে জমি আছে, সেগুলোয় চাষ ত্বরান্বিত করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, জমি অধিকাংশ চলে যাচ্ছে আবাসন প্রকল্পের জন্য। তবে যেসব জমি এখনো আছে, সেগুলো যাতে ফাঁকা পড়ে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেসব এলাকায় তিন ফসলি বা দো ফসলি জমিতে ফসল ভালো হয়, সেসব এলাকায় প্রকল্প নেওয়া যাবে না। পাশাপাশি তিনি জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এড়িয়ে চলার নির্দেশ দিয়েছেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী আরও জানান, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ৪১-এর বাস্তবায়ন বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া সদ্যসমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ সময়ে যেসব প্রকল্পের অনুকূলে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সেই টাকা কীভাবে খরচ হয়েছে, সেটি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে সারা দেশের জরাজীর্ণ থানাগুলো সংস্কারের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি চলতি অর্থবছরে প্রথম তিন মাসে প্রকল্পের প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন।
ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, কাজের মান নিশ্চিত করতে সবারই দায়িত্ব আছে। প্রকল্পের কাজের গতি ও মান দুটিই নিশ্চিত করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের। ২০৪১ সালের দিকে উন্নয়নশীল দেশে চলে আসব আমরা। এজন্য আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন : ঢাকা অঞ্চলের কৃষি উন্নয়নসহ ১১ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৪৫৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৫ হাজার ২১৪ কোটি ৩৪ লাখ, বৈদেশিক ঋণ থেকে ১৪০ কোটি ৪৪ লাখ এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১০৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জান সরকার বলেন, একটি একনেক বা মন্ত্রিপরিষদ বৈঠক হওয়া মানে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া নয়, এ বৈঠক হওয়া মানে একটি লম্ফ। এ অর্থবছর অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার শেষ বছর। সামনে আমরা এলডিসি উত্তরণ হচ্ছি। একনেকে প্রকল্প পাশ হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যায়ে গেলে তবেই উন্নয়নকে আমরা এগিয়ে নিতে পারব। আমরা উন্নয়নকে এগিয়ে নিতেই কাজ করে যাচ্ছি।
একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে ঢাকা অঞ্চলের কৃষির উন্নয়ন প্রকল্প, বরগুনা ও মুন্সীগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো উন্নয়ন এবং রায়পুরা ১২০ মেগাওয়াট এসি পিক গ্রিড টাইড সোলার পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্প। এছাড়া বিসিক মুদ্রণ শিল্পনগরী (২য় সংশোধিত), কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র কিশোরগঞ্জ, জয়পুরহাট ও চট্টগ্রাম স্থাপন, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, কুমিল্লা-সালদা ও কসবা (সৈয়দাবাদ) সড়কে জাতীয় মহাসড়ক মানে উন্নীত করা এবং নগরাঞ্চলের ভবন সুরক্ষা প্রকল্প। আরও আছে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদীর তীর ভূমিতে পিলার স্থাপন, তীররক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ, দেশের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ পুলিশের থানার প্রশাসনিক কাম ব্যারাক ভবন নির্মাণ প্রকল্প।