Home রাজনীতি পদ নিয়ে বিদেশে বিএনপির যেসব নেতা
জুন ২, ২০২৪

পদ নিয়ে বিদেশে বিএনপির যেসব নেতা

নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দাবি আদায়ের আন্দোলন ব্যর্থ হলেও ‘হাল ছাড়েনি’ রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।

নির্বাচন বর্জনের পর দাবি আদায়ের আন্দোলনে আবারও জনগণকে সম্পৃক্ত করার পাশাপাশি নেতাকর্মীকে চাঙার উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। তবে ঘুরেফিরে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সরকারবিরোধী আন্দোলনে কেন্দ্রীয় নেতাদের ভূমিকা নিয়েই নানা প্রশ্ন তুলছেন।

৫০২ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অধিকাংশ নেতাকে মাঠে না পাওয়ার অভিযোগ তাদের। কেন্দ্রীয় কমিটিতে শতাধিক নেতা আছেন, যারা অনেকে পদ নিয়ে নিষ্ক্রিয়, অনেকে বিদেশেও পাড়ি দিয়েছেন।

দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান, জাতীয় স্থায়ী কমিটি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলসহ নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তা ও সদস্যদের মধ্যে অন্তত ২৮ জন এখন বিদেশে আছেন। তবে এর মধ্যে অনেকেই দেশে মামলা, হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে বিদেশে যেতে বাধ্য হয়েছেন। আবার কয়েকজন গেছেন উন্নত চিকিৎসা নিতে।

এছাড়া পদ নিয়ে নিষ্ক্রিয় আছেন ৮০ জনের বেশি নেতা। তাদের মধ্যে অনেকে অসুস্থতার কারণে দলের কোনো কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারেন না। এছাড়া স্থায়ী কমিটিতে ৫টিসহ শূন্য পদ আছে ১৩০টির মতো। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ মারা গেছেন, কয়েকজন পদত্যাগ করেছেন, আবার বেশ কয়েকজনকে দল থেকে বহিষ্কার ও অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। পরে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের চেয়ারম্যান, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও মহাসচিব জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসাবে নির্বাচিত বলে গণ্য হবেন।

সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান এখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্থায়ী কমিটির সদস্য। তিনি চিকিৎসার জন্য দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে আছেন। সেখান থেকে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এছাড়াও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে এখন বিদেশে রয়েছেন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সালাহ উদ্দিন আহমেদ।

এর মধ্যে সালাহ উদ্দিন ষষ্ঠ কাউন্সিলের পর কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার আগে থেকেই ভারতে আছেন। তবে তিনি দুই বছর ধরে ভার্চুয়ালে স্থায়ী কমিটির বৈঠকসহ বিভিন্ন সভায় অংশ নেন। আর ২৬ এপ্রিল খসরু এবং প্রায় এক বছর আগে টুকু উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে অবস্থান করছেন। এ দুজন দেশে থাকাকালীন রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। এখনো ভার্চুয়ালে স্থায়ী কমিটিসহ বিভিন্ন বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন।

উপদেষ্টাদের মধ্যে বিদেশে রয়েছেন কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন, ড. ওসমান ফারুক ও গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী। নিষ্ক্রিয় রয়েছেন অ্যাডভোকেট হারুন আল রশিদ ও মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসানসহ আরও কয়েকজন।

২০৯ জন জাতীয় নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেক পদ শূন্য, অনেকে নিষ্ক্রিয় আছেন। এর মধ্যে সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য যারা, তাদের মধ্যে বিদেশে রয়েছেন আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মুহিদুর রহমান, ব্যারিস্টার নওশাদ জামির (বেশির ভাগ সময় বিদেশে থাকেন), তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক একেএম ওয়াহিদুজ্জামান, ক্ষুদ্রঋণবিষয়ক সম্পাদক এমএ কাইয়ুম, কর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক জাকারিয়া তাহের সুমন (বেশির ভাগ সময় বিদেশে থাকেন), সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির, আনোয়ার হোসেন খোকন, নাজমুল আবেদীন মোহন, বেবি নাজনীন ও শাকিরুল ইসলাম শাকিল ও প্রবাসীকল্যাণ বিষয়ক সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার মুহাম্মদ আব্দুস সালাম।

২৯৩ জন জাতীয় নির্বাহী কমিটির মধ্যে বিদেশে রয়েছেন গাজী শাহজাহান জুয়েল, শেখ সুজাত মিয়া, আলী আজগর লবী, মোশারফ হোসেন, কয়ছর এম আহমেদ, আব্দুল লতিফ সম্রাট, মির্জা খোকন, সাইদুর রহমান লিটন ও ফয়সাল আহমেদ চৌধুরী। নিষ্ক্রিয় রয়েছেন রওশান আরা ফরিদ, আব্দুল মান্নান, রফিকুল ইসলাম দুলাল, মেজর (অব.) মঞ্জুর কাদের, লুৎফুল লতিফ, এসএ খালেক, আহমেদ ইকবাল হাসান, খুরশিদ আলী মোল্লা, অধ্যাপক রেজাউল করিম, জামাল শরীফ হিরু, জিএম ফজলুল হক, সাইমুন বেগম, এম শামসুল আলম, এমডিএম কামালউদ্দিন চৌধুরী, খালেদা রব্বানী, শহিদুজ্জামান বেল্টু, কাজী মনিরুল হুদা, মতিয়ার রহমান তালুকদার, ফারুক আহমেদ তালুকদার, জিবা খান, নুরুল ইসলাম খান, নাছিমা আক্তার কল্পনা, এসএম শফিউজ্জামান খোকন, সেলিনা রউফ চৌধুরী, রিজিয়া পারভীন, মিজানুর রহমান চৌধুরী ও তাহমিনা আওরঙ্গসহ আরও বেশ কয়েকজন নেতা। তবে নির্বাহী কমিটির সদস্যদের মধ্যে অনেকে আবার বিএনপির জেলা কমিটির শীর্ষ পদে আছেন।

মালয়েশিয়া আছেন বিএনপির তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক একেএম ওয়াহিদুজ্জামান।

তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘আইসিটি আ্যাক্টসহ দুটি মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রথমে আমাকে চাকরি থেকে সাসপেন্ড করা হলো। জেল খাটলাম। জেল থেকে বের হওয়ার পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার যোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। সেটাও তারা করতে দিলেন না। তৎকালীন রেজিস্ট্রার বললেন ওপরের নির্দেশ আছে। এর মধ্যে আইসিটি অ্যাক্টের মামলায় জামিন চাইতে গেলে তাও দেওয়া হলো না। তখনই মনে হয়েছে, বাংলাদেশে যে বিচারব্যবস্থা, আদালতে গিয়ে কোনো লাভ নেই। আমার একার আয়ে সংসার চলে। এভাবে পালিয়ে থেকে তো জীবন চলে না। তাছাড়া বিএনপির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হ্যান্ডেল আমার কাছে ছিল। এটাও জানাজানি হয়ে গিয়েছিল। যে কারণে আমাকে ধরার চেষ্টা করেছে বারবার। পরে ২০১৬ সালে আমি পালিয়ে আসতে বাধ্য হই।’

তিনি আরও বলেন, ‘মালয়েশিয়ায়ও চেষ্টা করা হয়েছে আমাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য। বাংলাদেশের একটি সংস্থা দিয়ে মালয়েশিয়ার পুলিশকে ভুল বুঝিয়ে ভুয়া মামলা তৈরি করে নানাভাবে ধরার চেষ্টা করে। কিন্তু এখানকার মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে, যে কারণে নিতে পারেনি। এখানে থেকেই দলের দায়িত্ব ভালোভাবেই পালন করার চেষ্টা করছি।’

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *