Home অপরাধ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র হিমেলের অপহরণকাণ্ডে গাড়ি চালকের হাত
জানুuari ২৫, ২০২৪

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র হিমেলের অপহরণকাণ্ডে গাড়ি চালকের হাত

দীর্ঘদিন ধরে কাজ করায় বিশ্বস্ত হয়ে উঠেছিলেন প্রাইভেটকার চালক ছামিদুল, জানতেন মালিকের অর্থবিত্ত ও লেনদেন সম্পর্কেও; বিশ্বস্ততার সেই সুযোগ নিয়ে ফন্দি এঁটে অপহরণ করে বসেন মালিকের ছেলেকেই।

অপহরণের প্রায় এক মাস পর ঢাকার উত্তরার আইইউবিএটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাসিবুর রহমান হিমেলকে উদ্ধার করে এমন তথ্যই জানিয়েছে র‌্যাব।

র‌্যাব ও পুলিশ বলছে, হিমেলকে অপহরণ করলে বিপুল মুক্তিপণ পাওয়া যাবে- এমন তথ্য অপহরণকারীদের দিয়েছিলেন তার গাড়িচালক ছামিদুল ইসলাম। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৬ ডিসেম্বর শেরপুরে যাওয়ার পথে অন্যদের নিয়ে হিমেলকে অপহরণ করে সুনামগঞ্জের সীমান্ত এলাকা দিয়ে নিয়ে যান মেঘালয় পাহাড়ে। এরপর শারীরিক নির্যাতন আর দুই কোটি টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয় পরিবারের কাছে। যদিও দর কষাকষিতে তা ঠেকে ৩০ লাখে।

হিমেল আইইউবিএটির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। বুধবার রাতে তাকে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর এলাকা থেকে উদ্ধার করে র‌্যাব।

ঘটনার বিস্তারিত জানাতে বৃহস্পতিবার কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সংবাদ সম্মেলনে আসেন এ বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, ২৬ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ব্যবসার প্রয়োজনে শেরপুর যাওয়ার পথে অপহৃত হন হিমেল। তার ফোন নম্বরটি তখন থেকে বন্ধ পাওয়া যায়। দীর্ঘ সময় ছেলের খোঁজ না মেলায় হিমেলের মা তহুরা বিনতে হক উত্তরা পশ্চিম থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।

পরে একজন হিমেলের মায়ের হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে অপহরণের বিষয়টি জানিয়ে দুই কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। সেইসঙ্গে হিমেলকে পাশবিক নির্যাতনের ভিডিও পাঠান। এরপর গত ৬ জানুয়ারি উত্তরা পশ্চিম থানায় অপহরণের মামলা করেন তহুরা হক। ছেলেকে উদ্ধারে র‌্যাবেরও সহযোগিতা চান।

ঢাকায় অপহরণ করে নেওয়া হয় মেঘালয়ে, ১ মাস পর ছাত্র উদ্ধার

পরে তদন্তে নেমে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব-১, র‌্যাব-৯ ও র‌্যাব-১৪ এর দল সুনামগঞ্জের তাহিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে অপহরণ চক্রের হোতা মো. আব্দুল মালেক (৩৫) ও ছামিদুল ইসলামকে (৩০) গ্রেপ্তার করে। তাদের দেওয়া তথ্যে হিমেলকে উদ্ধার করা হয়।

এরপর রনি নাবাল (৪১), মো. রাসেল মিয়া (৩৪) ও মো. বিল্লাল হোসেন (২৪) নামে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় বিদেশি পিস্তল, গুলি ও ওয়াকিটকি।

র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, হিমেলের বাবা ব্যাটারির ব্যবসা করতেন। চার মাস আগে তিনি মারা গেলে পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করে আসছিলেন হিমেল নিজেই। ব্যবসার প্রয়োজনে ড্রাইভারকে নিয়ে শেরপুরে যাওয়ার পথে অপহরণের শিকার হন তিনি।

র‌্যাব বলছে, হিমেলদের বাসায় ছামিদুল চার বছর ধরে গাড়ি চালক হিসেবে কাজ করেন। সেই সুবাদে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। হিমেলের পরিবারের আর্থিক ও সম্পত্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্যও ছামিদুল জানতেন। একপর্যায়ে হিমেলকে অপহরণ করে অর্থ আদায়ের ‘ফন্দি আঁটেন’।

কমান্ডার মঈন বলেন, অপহরণের দশ দিন আগে ১৬ ডিসেম্বর অপহরণকারীরা উত্তরার একটি জায়গায় সমবেত হয়ে পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই চালক ছামিদুল শেরপুরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাটারি বিক্রির সম্ভাবনার কথা বলে হিমেলকে সেখানে নিয়ে যেতে প্ররোচিত করেন।

“২৬ ডিসেম্বর হিমেল শেরপুরের পথে রওনা হলে মালেককে সেই তথ্য দেন চালক ছামিদুল। পরিকল্পনা অনুযায়ী অন্যরা তিন-চারটি মোটরসাইকেল নিয়ে হিমেলের প্রাইভেটকার অনুসরণ করতে থাকে। গাজীপুরের সালনা এলাকায় পৌঁছালে তারা হিমেলের গাড়ি থামিয়ে তাকে অপহরণ করে। এর দুদিন পর গাজীপুরের বাসন এলাকায় পরিত্যাক্ত অবস্থায় গাড়িটি উদ্ধার করা হয়।”

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, হিমেলকে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকায় নেওয়া হয়। সেখান তাকে রাখা হয় পাহাড়ি এলাকায়। হিমেলকে নির্যাতন করে ভিডিও ধারণ করা হয়, তা পাঠানো হয় দেশে তার মায়ের কাছে।

মালেকের বিরুদ্ধে অপহরণ, অস্ত্র ও বিষ্ফোরক আইন, ডাকাতি-ছিনতাই ও খুনের ১৪টির বেশি মামলা রয়েছে। সবশেষ ময়মনসিংহের এক অধ্যাপকের ছেলেকে অপহরণের ঘটনায় তিন বছর কারাভোগ করে ২০২২ সালের ডিসেম্বর ছাড়া পান বলে তথ্য দেওয়া হয় সংবাদ সম্মেলনে।

গ্রেপ্তার রনি পেশায় অটোরিকশা চালক। অস্ত্র ও ডাকাতির অভিযোগে দুই মামলায় ছয় বছরের বেশি জেল খেটেছেন। রাসেল ও বিল্লালও পেশায় গাড়িচালক। রাসেলকে অপহরণের সময় হিমেলের মা ও পরিবারের সদস্যদের গতিবিধি অনুসরণ করে তিনি অন্যদের তথ্য দেন।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *