একজন আ:হামিদ,ভাটি অঞ্চলের (হাওর)উন্নয়নের নায়ক এক হাস্যোজ্বল সাধারণ মানুষের নেতা।
তাইফুর রহমান, সমাজকর্মী ও লেখক।।
বর্তমান চলমান সংস্কৃতি এবং ধারায় একজন সংসদ সদস্য (এমপি) উচ্চারণ করলেই সাধারণ মানুষের মাথায় প্রথমেই আসে পুলিশের সাইরেন বাজানো নিরাপত্তার চাদর দেয়া এক বহর গাড়ি,একটি উচু সাজানো স্টেজ, বক্তা হিসেবে তার সাথে অনেক বড় বড় নেতা, শ্রোতা হিসেবে এক হলরুম ভর্তি কর্মী,অসংখ্য ফুলের তোরা,অনুষ্ঠান সমাপ্তি এবং প্রধান অতিথির ঢাকা গমন,সাধারণ মানুষ দর্শকের ভুমিকায় দাঁড়িয়ে থাকা।(কল্পিত)
যদিও অনেক ক্ষেত্রেই এর উলটো চিত্রও দেখা যায় তবে সেই সংখ্যা খুব বেশি নয়।যদিও যুক্তির খাতিরে ধরাই যায়,আইন প্রনেতাগন ঢাকাতেই সংসদ ভবন হওয়ায় সেখানেই বেশি থাকবেন,কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই জনশ্রুতি আছে তারা কর্দমাক্ত পথে খুব একটা আসেন না।তবে এই ধারা খুব বেশি দিন আগে থেকে নয়।স্বাধীনতার পর পর দেশে খুব বেশি অট্টালিকা না থাকলেও কিছুটা আভিজাত্য হয়তো ছিলো,তবে তা ঐ সময়ের অনেক নেতাকেই স্পর্শ করতে পারে নি।অনেক অঞ্চলেই সংসদ সদস্য ছিলেন মাঠের মানুষের সাথে মিশে চলা সাধারণ মানুষিকতার মানুষ।
যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সাবেক রাস্ট্রপতি আ:হামিদ।যিনি ভাটি অঞ্চলের উন্নয়নের নায়ক হিসেবেই তার এলাকায় পরিচিত।আ:হামিদ যুবক বয়স থেকেই (২৬/২৭ বছর) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চল বছরের বৃহৎ একটি সময় পানি বন্ধী থাকতো বলে শোনা যায়।সেই বিচ্ছিন্ন জনপদকে এই আ:হামিদই সড়কপথে সংযুক্ত করেছেন মূল ভূমির সাথে যা এক সময় অকল্পনীয় ছিলো।তার এলাকার মানুষও তাকে সেভাবেই ভালোবাসে,নিজেদের ছেলে বলেই অন্তরে রেখে দিয়েছে।যিনি জাতীয় সংসদের স্পিকার থাকাকালীনও হাস্য রসে সংসদকে প্রানবন্ত করে রাখতেন।রাস্ট্রপতি হয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে গেলেও নিজ বক্তব্যে সকলের মন জয় করে নিতেন।
আ :হামিদ এখন অবসরপ্রাপ্ত হলেও বারবারই তিনি গ্রামে ছুটেছেন।ঢাকার একজন রিকশাচালক বলছিলেন আ:হামিদ রাস্ট্রপতি থাকা কালীনও তার এলাকার মানুষকে সমানতালে ভালোবেসেছেন,নিজেকে কখোনও রাস্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি ভাবেন নি।সেই রিক্সাচালক বলছিলেন তার নিজের গল্প,একদিন তাকে রাস্তায় সরকারি এক কর্মচারী হয়রানি করলে তিনি নাকি সরাসরি ফোন করেছিলেন ততকালীন রাস্ট্রপতি আ:হামিদকে,এমনকি তখন তিনি ফোন রিসিভ করে সমাধানও করে দিয়েছিলেন।
বিষয়টি অবিশ্বাস্য হলেও ভাটি অঞ্চলের এই নায়ক সাধারণ মানুষের অন্তর এভাবেই জিতে নিয়েছিলেন।যা থেকে উদীয়মান এবং তরুন রাজনীতিকদের শিক্ষা নেয়া উচিৎ। রাজনৈতিক নেতারা “বড় সাহেব” বা “মহারাজ ” না হয়ে সকলের ভরসার “ভাই” হওয়া উচিৎ।
অর্থাৎ সাবেক রাস্ট্রপতি আ:হামিদ ইতিহাস রচনাকারী একজন রাজনৈতিক কিংবদন্তী, যিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে রাজনীতির মাঠের সেবক ছিলেন।যিনি কখনোই নিজ এলাকা থেকে পরাজিত হননি।
মোহাম্মদ আবদুল হামিদ (জন্ম: ১ জানুয়ারি, ১৯৪৪) হলেন একজন বাংলাদেশী প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও সাবেক রাষ্ট্রপতি। তিনি বাংলাদেশের ২০ ও ২১তম (ব্যক্তি হিসেবে ১৭তম) রাষ্ট্রপতি ছিলেন । তিনি প্রথম মেয়াদে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল এবং দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি ২১তম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সালে। তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী রাষ্ট্রপতি ছিলেন।তিনি সপ্তম জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পিকার হিসেবে ১৪ জুলাই, ১৯৯৬ সাল থেকে ১০ জুলাই, ২০০১ সাল পর্যন্ত এবং ১২ জুলাই, ২০০১ সাল থেকে ৮ অক্টোবর, ২০০১ সাল পর্যন্ত স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন। নবম জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসাবে ২৫ জানুয়ারি, ২০০৯ সাল থেকে ২৪ এপ্রিল, ২০১৩ সাল পর্যন্তও দায়িত্ব পালন করেছেন।প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের অসুস্থতাজনিত কারণে তার মৃত্যুর ৬ দিন পূর্বেই ১৪ মার্চ, ২০১৩ তারিখে তিনি বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে আসীন ছিলেন।
আবদুল হামিদ আইনজীবী ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। ১৯৫৯ সালে ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৬১ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬২ সালে ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়ার অভিযোগে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন।
১৯৬৩ সালে গুরুদয়াল সরকারী কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৬৪ সালে কিশোরগঞ্জ মহকুমা ছাত্রলীগের সভাপতি, ১৯৬৫ সালে কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের সহসভাপতি এবং ১৯৬৬-১৯৬৭ মেয়াদে অবিভক্ত ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৮ সালে ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তাকে পুনরায় কারাগারে প্রেরণ করেন। ১৯৬৯ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন।
তিনি ১৯৭০ সালে তৎকালীন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে তৎকালীন ময়মনসিংহ-১৮ নির্বাচনী এলাকা থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম গণপরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন।
তিনি কিশোরগঞ্জের অন্যতম মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। ১৭ মার্চ ১৯৭১ সালে কিশোরগঞ্জের রথখোলা মাঠে ছাত্র জনসভায় স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করেন। ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি
১৯৭২ সালে তিনি গণপরিষদ সদস্য মনোনীত হন। ৭ মার্চ ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন ময়মনসিংহ-৩০ (বর্তমান কিশোরগঞ্জ-৫) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।৭ মে ১৯৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১২ জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।১৩ জুলাই ১৯৯৬ থেকে ১০ জুলাই ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১২ জুলাই ২০০১ থেকে ২৮ অক্টোবর ২০০১ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১ অক্টোবর ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১ নভেম্বর ২০০১ সাল থেকে ২৯ অক্টোবর ২০০৬ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে দায়িত্বপালন করেন।
২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২৫ জানুয়ারি ২০০৯ সালে তিনি পুনরায় জাতীয় সংসদের স্পিকার মনোনীত হয়ে ২৩ এপ্রিল ২০১৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্বপালন করেন।
জাতির এই সূর্য সন্তান আমাদের জন্য এক পাঞ্জেরি, একজন উদাহরণ।।