Home জাতীয় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশের নির্বাচন
জানুuari ৮, ২০২৪

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশের নির্বাচন

গতকাল রবিবার বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনে টানা চতুর্থবারের মতো বিজয়ী হয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।

তবে একতরফা নির্বাচনের অভিযোগ তুলে শুরু থেকেই নির্বাচন বর্জন করে অন্যতম বিরোধী দল বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল। এছাড়া নির্বাচনে ভোটার কম উপস্থিতির অভিযোগ তুলে ফলাফল ও বর্জন করেছে দলগুলো। যার ফলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ফলাফল নিয়ে দেখা দিয়েছে বিতর্ক।

জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের বিপরীতে এবার ২৯৯ আসনে ভোটগ্রহণ হয়েছে। বেসরকারিভাবে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২২৪ আসন, স্বতন্ত্র প্রার্থী পেয়েছে ৬০টি এবং জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১১ আসন।

বরাবরের মতো বাংলাদেশের নির্বাচন গুরুত্ব পেয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে। ভোটগ্রহণের শুরু থেকে ফলাফল পর্যন্ত সংবাদ প্রকাশ করছে প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমগুলো।

বিবিসির প্রতিবেদন

ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি বলছে, বিতর্কিত এক নির্বাচনে টানা চতুর্থ মেয়াদ নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে তার দল আওয়ামী লীগ ও মিত্ররা ২২৩টি আসনে জয়ের পর আরও ৫ বছর মেয়াদে দায়িত্ব শুরু করবেন তিনি।

বিবিসি জানায়, বিএনপির নেতা ও কর্মীদের বিরুদ্ধে গণগ্রেপ্তারের পর রোববারের নির্বাচনে এই ফল আসে।

যদিও শুরু থেকেই বিএনপি এই নির্বাচনকে বানোয়াট বলে অভিযোগ করেছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি হিসাব অনুযায়ী ভোটার সংখ্যা শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ বলা হচ্ছে। তবে সমালোচকরা বলছেন, এই সংখ্যা বাড়িয়ে বলা হচ্ছে। যদিও তুলনামূলকভাবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোট পড়েছিল শতকরা ৮০ ভাগের বেশি।

এবার নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতেছেন ৪৫ আসনে এবং জাতীয় পার্টি জিতেছে আট আসনে। যদিও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের।

আজ সোমবার সরকারি ফল ঘোষণা করা হবে।

ভোট দেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, এ দেশে যাতে গণতন্ত্র অব্যাহত থাকে তা নিশ্চিত করতে আমি সর্বোত্তম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, দলীয় নেতা ও কর্মীদেরকে বিজয় বা আনন্দ মিছিল না করার নির্দেশনা দিয়েছেন শেখ হাসিনা।

মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের হিসাব অনুযায়ী, ২৮শে অক্টোবর বিরোধী দলের মহাসমাবেশ সহিংস হয়ে ওঠার পর প্রায় ১০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সহিংসতাকে কেন্দ্র করে কমপক্ষে ১৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫৫০০ মানুষ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বিরোধীদের দিয়ে জেলখানা ভরে ফেলেছে সরকার- এমন অভিযোগ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

এই নতুন বিজয়ের ফলে আওয়ামী লীগ কার্যত একদলীয় শাসনে নেতৃত্ব দিতে পারে বলে আশঙ্কা বৃদ্ধি পেয়েছে।

খুব কম মানুষই মনে করেন, সরকার তার দমনপীড়ন শিথিল করবে। যদি বিরোধী দল এবং নাগরিক সমাজের গ্রুপগুলো সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই থাকে তাহলে তাতে দমনপীড়ন আরও বেশি হতে পারে।

এবারের নির্বাচনে ভোটারদেরকে ভোট না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিল বিএনপি। কিন্তু শেখ হাসিনার সমর্থকরা বলেন, তিনি বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় ব্যাপক রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এনেছেন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছি। তা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দিয়েছে। আমি মনে করি এ জন্য শেখ হাসিনাকে কৃতিত্ব দেয়া উচিত বিশ্বের।

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা একা গত ১৫ বছরে সবচেয়ে বড় যে অর্জন করেছেন তা হলো আস্থা। বাংলাদেশের মানুষের মনে স্থান করে নিয়েছেন তিনি। তারা নিজেদের ওপর বিশ্বাস এনেছেন।

আন্তর্জাতিক চাপও বাড়ছে

দেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত বা খর্ব করার অভিযোগে বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের ওপর সেপ্টেম্বরে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ শুরু করে ওয়াশিংটন। মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের কণ্ঠরোধ করার কারণে উদ্বেগ জানায় জাতিসংঘ ও অন্য আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো।

কিন্তু শেখ হাসিনা এ বিষয়ে অবগত যে, যতদিন তার পিছনে ভারত আছে, ততদিন পশ্চিমাদের যেকোনো রকম বড় নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলা করা যাবে।

উন্নত দেশগুলো এ সম্পর্কে অবহিত যে, বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পকে দেয়া সুবিধাগুলো প্রত্যাহার করা হলে তাতে কয়েক লাখ শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এর বেশির ভাগই নারী।

২০০৯ সাল থেকেই ক্ষমতায় আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারের জয়ের মধ্যে মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনি সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী নেতায় পরিণত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এই মেয়াদ শেষে তার বয়স হবে ৮১ বছর।

বাংলাদেশের বহু মানুষের মধ্যে, এমন কি আওয়ামী লীগের সমর্থকদের মধ্যেও একটি বড় প্রশ্ন- তার উত্তরসূরি কে হবেন।

কিছু বিশ্লেষক বলেন, নির্বাচনের ফল স্পষ্ট। কিন্তু ভবিষ্যত অনিশ্চিত।

আল জাজিরার প্রতিবেদন

কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরাতেও বেশ গুরুত্ব সহকারে উঠে এসেছে বাংলাদেশের নির্বাচন।

আল জাজিরা বলছে, প্রধান বিরোধী দলের বয়কটের ডাক এবং কম ভোটার উপস্থিতির কারণে সরকারীভাবে ৪০ শতাংশ ভোটদানের তথ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগ জয়ের পর দ্বিতীয় অবস্থানে কোন রাজনৈতিক দলের পরিবর্তে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। কিন্তু প্রায় সব বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই আওয়ামী লীগের সহযোগী ছিলেন বা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েও পাননি। কিন্তু দল থেকেই তাদের “ডামি প্রার্থী” হিসাবে দাঁড়াতে বলা হয়েছিল। যাতে বিশ্বের সামনে এই নির্বাচনকে একটি প্রতিযোগিতামূলক হিসেবে প্রদর্শন করা যায়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বিভিন্ন মানুষের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ইসির ৪০ শতাংশ ভোট পড়ার দাবি একেবারেই অযৌক্তিক। এছাড়া ইসির ঘোষণায় নানা বিভ্রান্তি রয়েছে বলে জানিয়েছেন কিছু বিশ্লেষক।

আল জাজিরা সেই পরিসংখ্যান পরীক্ষা করে যাচাই করেছে।

ভোট শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা আগে ইসি ঘোষণা করেছিল প্রায় ২৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। তবে আল জাজিরা জানিয়েছে যে, নির্বাচনের সকালে রাজধানী ঢাকা জুড়ে অন্তত ১০টি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করেছে তাদের প্রতিবেদক এবং কোনো ভোটার দেখতে পায়নি।

নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সংস্থা ব্রোটির প্রধান শারমিন মুরশিদ আল জাজিরাকে বলেন যে, এক ঘন্টার মধ্যে ২৭ থেকে ৪০ এ লাফ দেওয়া “হাস্যকর” এবং এতে “ইসির সুনাম মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে”।

এদিকে এই ২৭ শতাংশকেও বাড়িয়ে বলা হচ্ছে দাবি প্রধান বিরোধী দল বিএনপির।

তবে আগের অতীতেরর তুলনায় গতকালের ভোট শুধুমাত্র একজনের মৃত্যু এবং খুব কম সংঘর্ষ দেখা গেছে, এতে করে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ ভোটের একটি বলছে আল জাজিরা।

এমনকি বিদেশী পর্যবেক্ষকরাও বলছেন শান্তিপূর্ণ ভোটের কথা। তবে ভোটদানের প্রক্রিয়াটি সঠিক ছিল কিনা, ভোটারদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে কিনা এবং ভোটটি পদ্ধতিগতভাবে হয়েছে কিনা সেদিকে মূল্যায়ন করছেন তারা।

রাশিয়ার পর্যবেক্ষক আন্দ্রেই শুতোভও বলেছেন, ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ ছিল। তিনি আরো বলেন, এই নির্বাচন বৈধ।

কিন্তু এই ভোটকে বৈধ মানতে নারাজ বিএনপি। তাদের মতে ‘ভোটার না থাকায় শান্তিপূর্ণ হওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না’।

 

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *