প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমাদের সরকার বেসরকারি খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। আমরা যখন ‘৯৬ সালে সরকার গঠন করি, তখন থেকেই আমাদের প্রচেষ্টা ছিল বেসরকারি খাতকে আরও উজ্জীবিত করা। তাদের জন্য সব কিছু উন্মুক্ত করে দেওয়া এবং বিদেশি বিনিয়োগ যাতে আসে সেজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া।’
আজ রোববার (১৯ নভেম্বর) বেলা ১১টায় ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ৬০ বছর পূর্তি উদযাপন এবং ইনভেস্টমেন্ট এক্সপো, ২০২৩-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নিজের বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও রপ্তানির আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে দেশকে গড়ে তোলা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘৯৬ থেকে ২০০১, আমরা বেসরকারি খাতকে সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে দিয়ে বিদেশি বিনিয়োগ আসার বিভিন্ন সুযোগ সৃষ্টি করে দেই। আমাদের দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে শুরু করে, গ্যাস উত্তোলন থেকে সার্বিক ক্ষেত্রে বিনিয়োগে আকর্ষণ করার প্রচেষ্টা চালাই।’
উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী
টানা ৩ মেয়াদে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর একটিতে পরিণত করেছি। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘শক্তিশালী সামষ্টিক অর্থনৈতিক মৌলিক বিষয়সমূহ ও বাণিজ্য সংহতকরণের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আমাদের মাথাপিছু আয় মাত্র এক দশকে তিনগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৯৩ মার্কিন ডলারে। জিডিপির আকার ২০০৬ সালের ৪ লক্ষ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৫০ দশমিক ৩১ লক্ষ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে দারিদ্র্যের হার প্রায় ৩ গুণ কমে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তার সরকারের বিচক্ষণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, অর্থনৈতিক উদারীকরণ এবং বাণিজ্য সংহতকরণের ওপর ভিত্তি করে আজকের এই টেকসই অর্থনীতি ও উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশ ২০২১ সালে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে।’
২০৩৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২০তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, ৩৯টি হাই-টেক পার্ক বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কর মওকুফ, রেমিট্যান্স রয়্যালটি, প্রস্থান নীতি, লভ্যাংশ এবং মূলধন সম্পূর্ণ প্রত্যাবর্তন, আইন দ্বারা বিদেশি বিনিয়োগ সুরক্ষাসহ বিনিয়োগ নীতিকে আরও সহজ করার জন্য অব্যাহতভাবে কাজ করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত উন্নয়ন কর্মসূচি, বিনিয়োগবান্ধব নীতি, বৃহৎ অভ্যন্তরীণ বাজার, কৌশলগত অবস্থান, উচ্চ মুনাফা, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন সুবিধার কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক দেশের কাছে বিনিয়োগ, শিল্পায়ন এবং রপ্তানির জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাপক হারে টেকসই অবকাঠামো নির্মাণ করেছি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নদীর তলদেশে টানেল, গভীর সমুদ্র বন্দর এবং গণপরিবহন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ। পদ্মা বহুমুখী সেতু, পদ্মা সেতুর রেল লাইন সংযোগ, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল ও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আমাদের সামর্থ্যের বহিঃপ্রকাশ।’