Home বানিজ্য রুবল-টাকার মাধ্যমে বাণিজ্যের সম্ভাবনা কতটুকু
Oktober ২৩, ২০২৩

রুবল-টাকার মাধ্যমে বাণিজ্যের সম্ভাবনা কতটুকু

সম্প্রতি রাশিয়া ‘বন্ধু ও নিরপেক্ষ’ দেশের তালিকা অনুমোদন করেছে, তাতে ৩১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশও স্থান পেয়েছে । দুই দেশের মধ্যে ডলারের পরিবর্তে রুবলে ব্যবসাবাণিজ্য করা নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে দীর্ঘদিন থেকেই। অবশেষে রাশিয়া তাতে অনুমোদন দিয়েছে। ফলে, বাংলাদেশের ব্যাংক ও ব্রোকার হাউজগুলো সে দেশের মুদ্রা বাজারে রুবলে লেনদেন তথা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবে। কিন্তু পদ্ধতি কী হবে?

ডলার বা অন্য কোনো হার্ড কারেন্সিকে (প্রধান আন্তর্জাতিক মুদ্রা) এড়িয়ে দুটি দেশ নিজ নিজ মুদ্রায় লেনদেন করলে তাকে ‘কারেন্সি সোয়াপ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর বেলজিয়াম থেকে পরিচালিত আন্তর্জাতিক লেনদেনব্যবস্থা সুইফটে নিষিদ্ধ করা রাশিয়ার ব্যাংকগুলোকে। রাশিয়া তখন সুইফটের বিকল্প হিসেবে ‘কারেন্সি সোয়াপ’ পদ্ধতিতে লেনদেন নিষ্পত্তির প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশকে। রাশিয়ার এই উদ্যোগ উভয় দেশের জন্য উত্সাহব্যঞ্জক। কারণ, দুই দেশই মার্কিন ডলারের ওপর থেকে অতিরিক্ত নির্ভরতা কমাতে চাইছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশি ব্যাংকগুলো দুই ভাবে রুবলে বাণিজ্য করতে পারে। একটি উপায় হলো—কেন্দ্রীয় ব্যাংক রুবলকে একটি রূপান্তরযোগ্য মুদ্রা ঘোষণা করতে পারে। আরেকটি হলো—স্থানীয় ব্যাংকগুলোকে ওয়ান-টু-ওয়ান ভিত্তিতে রুশ মুদ্রায় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পাওয়া ব্যাংকগুলোর সঙ্গে লেনদেন করা সম্ভব কি না সে বিষয়গুলো ভাবতে হবে।

বর্তমানে, বাংলাদেশের স্থানীয় ব্যবসায়ীদের আটটি মুদ্রায় বিদেশি বাণিজ্য করার অনুমতি দেওয়া হয়, যথাক্রমে—মার্কিন ডলার, কানাডিয়ান ডলার, অস্ট্রেলিয়ান ডলার, সিংগাপুরিয়ান ডলার, ইউরো, পাউন্ড, সুইস ফ্রাঁ ও চীনা ইউয়ান। এর মধ্যে মার্কিন ডলার, যুক্তরাজ্যের মুদ্রা পাউন্ড, ইউরোপীয় অঞ্চলের মুদ্রা ইউরোই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বেশি সচল। ওয়ান-টু-ওয়ান ভিত্তিতে বাণিজ্যের জন্য একটি বা দুটি স্থানীয় ব্যাংক নির্বাচন করতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক। রাশিয়াকেও তাদের একটি বা দুটি ব্যাংক নির্বাচন করতে হবে। তারপর নির্বাচিত ব্যাংকগুলো ?রুবলে বাণিজ্য করতে পারবে।

রুবলের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পাদনে বাংলাদেশ কতটুকু            লাভবান হবে, তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। রাশিয়া এমন সময়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যখন রুবল গত ১৭ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। মুদ্রা চাঙ্গা করতে দেশটি সুদের হার ১৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। ইউক্রেনে হামলার পর থেকে রাশিয়ার অর্থনীতিও চাপে রয়েছে, দুর্বল হয়েছে দেশটির মুদ্রা রুবল। এদিকে দেশটির মস্কো এক্সচেঞ্জ হাউজে চলতি বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মুদ্রা দিরহাম ও রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের লেনদেন চালু হচ্ছে। তবে এসব লেনদেন নিষ্পত্তি হবে রুবলে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যুদ্ধের আগে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৬৬৫ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ার রপ্তানি ৬৩৮ মিলিয়ন ডলার থেকে কমে গত অর্থবছরে ৪৬০.৩৯ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। রুবলে লেনদেনে খুব বেশি লাভ হবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে রুবল ডলারের ওপর চাপ কমাতে পারত যদি এটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা হতো। রাশিয়ায় রপ্তানির বেশির ভাগই তৃতীয় দেশগুলোর মাধ্যমে হচ্ছে, তাই রপ্তানি আয় হিসেবে বাংলাদেশ রুবল পাচ্ছে না।  বাংলাদেশে বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ মার্কিন ডলারের মাধ্যমে এবং বাকি অংশ অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার মাধ্যমে হয়।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, যুদ্ধ না থাকলে রাশিয়ার নিকট থেকে গড়ে ২ বিলিয়ন ডলারের মতো আমদানি হবে কিন্তু বাংলাদেশ রপ্তানি করে ৬০০ থেকে ৭০০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। ফলে বিশাল ঘাটতি বাণিজ্য পূরণে ১ বিলিয়নের বেশি ডলার যা রাশিয়া থেকে ঐ মুদ্রায় আমদানি করার মতো যথেষ্ট রুবল বাংলাদেশের হাতে থাকবে না। তারপরও রুবলে বাণিজ্য করতে হলে ডলার দিয়ে রুবল কিনতে হবে। যা বৈদেশিক বাণিজ্যের ব্যয় আরো বাড়িয়ে দেবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যবহূত যে কোনো মুদ্রার একটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো—এটি অবশ্যই সহজে পাওয়া যাবে। তাই বাংলাদেশ রুবল কীভাবে আয় করবে এবং রুবলের বিপরীতে টাকার দরপতন কীভাবে ঠেকানো হবে, এই দুটো প্রশ্নের উত্তর খুঁজে এগোতে হবে।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *