‘আপনার ছেলেকে মাদকসহ আটক করেছি, দ্রুত টাকা পাঠান’
অপরিচিত নম্বর থেকে এক ব্যবসায়ীর মুঠোফোনে কল আসে। ফোন ধরতেই অপর প্রান্ত থেকে পুলিশ পরিচয়ে মাদকসহ ওই ব্যবসায়ীর ছেলেকে আটকের কথা জানান এক ব্যক্তি। এ সময় ফোনের অপর প্রান্ত থেকে পুলিশের গাড়ির সাইরেনের শব্দ শোনা যায়। দ্রুত সময়ের মধ্যে বিকাশে টাকা পাঠালে থানায় না নিয়ে ছেলেকে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি। পরে জানা যায়, আটকের বিষয়টি ঠিক নয়।
অভিনব এই প্রতারণার শিকার হয়েছেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া বাজারের মো. জাহাঙ্গীর আলম নামের এক ব্যবসায়ী। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে এই ঘটনা ঘটে। তাঁর ছেলে মো. জুনায়েদ শ্রীপুরের একটি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। জাহাঙ্গীরের সঙ্গে হওয়া কথোপকথন তিনি নিজের মুঠোফোনে ধারণ করেছেন। ধারণ করা কথোপকথনের অডিও আজ বুধবার সকালে তিনি এই প্রতিবেদককে শুনিয়েছেন।
কথোপকথনে ফোনের অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি নিজেকে মনিরুজ্জামান মনির পরিচয় দেন। তিনি শ্রীপুর থানায় ১৮ মাস ধরে এসআই হিসেবে কর্মরত বলেও জানান। ব্যবসায়ীর কাছে তিনি তাঁর ছেলের নাম জানতে চান। নাম বলার পর তাঁর ছেলে মাদক সেবন করে কি না, প্রশ্ন করেন। না সূচক উত্তর পেয়ে তিনি বলতে থাকেন, ‘আপনার ছেলেকে আমরা মাদকসহ আটক করেছি। তাকে দেখে মনে হয়েছে সে মাদক সেবন করে না। হয়তো তাকে কেউ ফাঁসিয়েছে। আমরা তাকে থানায় নিয়ে যাচ্ছি। আপনার ছেলেকে মাদকসহ আটক করেছি। বিকাশে টাকা পাঠান। দ্রুত সময়ের মধ্যে ১৫ হাজার টাকা পাঠালে তাকে থানায় না নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হবে।’
কথোপকথনের সময় অপর প্রান্তে বেশ কয়েকবার পুলিশের গাড়ির জরুরি সাইরেনের শব্দ শোনা যায়। একপর্যায়ে পুলিশ পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তি আটককৃত ছেলের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন। ছেলে কাঁদতে কাঁদতে মুঠোফোনে বলে, ‘বাবা, আমাকে ইয়াবা বড়িসহ স্যার আটক করেছে। আমি ইয়াবা খাই না। আমাকে বাবু ফাঁসিয়েছে। আমাকে স্যার ধরে মারধর করেছে।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠ শুনিয়ে ব্যবসায়ীকে দ্রুত টাকা পাঠাতে বলেন ওই ব্যক্তি। ব্যবসায়ী টাকা দিতে রাজি হন। তবে ছেলের কণ্ঠ শুনে কিছুটা সন্দেহ হওয়ায় তিনি ফোন কেটে দিয়ে নিজের বাড়িতে ফোন দিয়ে জানতে পারেন তাঁর ছেলে বাড়িতেই আছে। কিছুক্ষণের মধ্যে আবারও পুলিশ পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তি ব্যবসায়ীকে টাকার জন্য ফোন দেন। এরপর টাকা না দেওয়ায় ওই ব্যক্তি গালাগাল করে ফোন কেটে দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শ্রীপুর থানায় মনিরুজ্জামান মনির নামে কোনো এসআই নেই। এমনকি সেদিন মাদকসহ কাউকে থানায় আটকও করা হয়নি।
জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, হঠাৎ পুলিশ পরিচয়ে এ ধরনের কল পেয়ে অপ্রস্তুত হয়ে যান তিনি। পুলিশের গাড়ির সাইরেনের শব্দ, গাড়ির চালকের সঙ্গে পুলিশের কথোপকথন শুনতে পাচ্ছিলেন। কিন্তু কান্নাজড়িত কণ্ঠের ছেলের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারেন এটি প্রতারণা হতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে ফোন দিয়ে তিনি প্রতারণার বিষয়টি নিশ্চিত হন।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম নাসিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি অডিও ক্লিপটি শুনেছি। মনিরুজ্জামান মনির নামে শ্রীপুর থানায় কোনো এসআই নেই। প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্যই এমনটা করা হয়েছে। এমন ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানাতে হবে। তবে এই ঘটনায় কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে কথা বলেছি। মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’