Home রাজনীতি নিরঙ্কুশ ক্ষমতার লোভে রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার রুখতে চায়
12 jam ago

নিরঙ্কুশ ক্ষমতার লোভে রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার রুখতে চায়

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মোল্লা মোহাম্মদ ফারুক এহসান। জুলাই আন্দোলনে একাধিকবার ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়ে গ্রেফতারও হয়েছেন। অভ্যুত্থানের পর যুক্ত হয়েছেন রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত প্ল্যাটফরম জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য হিসেবে। নাগরিক কমিটির অন্যতম নীতিনির্ধারণী এ নেতা বর্তমানে নাগরিক কমিটিকে সারা দেশে সংগঠিত করার কাজ করছেন। সম্প্রতি তিনি কথা বলেছেন দৈনিক ইত্তেফাকের সঙ্গে। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন আবির হাকিম।

রাষ্ট্র সংস্কারে সংবিধান পরিবর্তনসহ আপনারা অনেকগুলো দাবি তুলেছেন। বর্তমান রাষ্ট্রকাঠামোতে এসব দাবির যৌক্তিকতা কতটা আছে? অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কি এসব সংস্কারের বৈধ স্টেকহোল্ডার?

মোল্লা ফারুক: দেখুন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন গঠিত হয়, তখন যে সংবিধানের আলোকে শপথ নিয়েছে, সে হিসেবে এই সরকার শুধু অবৈধই না, বরং প্রত্যেকটা মানুষ যারা এই অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছে, তারা অসাংবিধানিক পন্থায় সরকার উৎখাতের অপচেষ্টার দায়ে অপরাধী। এই যে আমরা সংবিধান বিলোপ করে নতুন সংবিধানের দাবি করেছি, সেগুলোও অসাংবিধানিক এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু এই সরকারের বৈধতা আসলে জুলাই বিপ্লবের শহিদেরা।

জাতীয় নাগরিক কমিটি বারবার বলছে ফ্যাসিবাদের পূর্ণাঙ্গ বিলোপ। এই ফ্যাসিবাদের পূর্ণাঙ্গ বিলোপ বলতে আপনারা আসলে কী বোঝাতে চাচ্ছেন?

মোল্লা ফারুক: বাংলাদেশে গত ৫৩ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটা দেখা গেছে, সেটা হলো গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বাহাত্তরের সংবিধানে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে গিয়ে মুজিববাদকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা, এক ব্যক্তির কাছে সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করা এবং বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির স্পিরিটকে নস্যাৎ করা হয়েছে। আমরা ফ্যাসিবাদের পূর্ণাঙ্গ বিলোপের মাধ্যমে এমন একটা ব্যবস্থা আনতে চাই, যেখানে আর কেউ শেখ হাসিনা হয়ে উঠতে পারবে না।

আপনারা যে সংস্কারের দাবি তুলেছেন, সেসব সংস্কারের দায়িত্ব নির্বাচিত সরকার নিলে আপনাদের আপত্তিটা কোথায়?

মোল্লা ফারুক: আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি অবিলম্বে সংস্কার কর‍তে হবে। যদি ইতিহাস দেখি, এরশাদ পতন হয়েছিল তিন জোট এবং জামায়াতে ইসলামীর আন্দোলনের মাধ্যমে। কিন্তু পরবর্তীকালে নির্বাচিত সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলো সেই রূপরেখাকেই আর মনে রাখেনি। বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের সেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিভিন্ন সংস্কারের জন্যে প্রস্তাবনা তৈরি করলেও তা পরবর্তীকালে আর বাস্তবায়িত হয়নি। প্রতিটা বিপ্লব মূলত হয় একটা আমূল সংস্কারের স্বপ্নকে সামনে রেখে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো নিজ নিজ স্বার্থে, নিরঙ্কুশ ক্ষমতার লোভে মানুষের আকাঙ্ক্ষাগুলো রুখে দেওয়ার চেষ্টা করে, যে সংস্কার হলে তাদের ক্ষমতা কমে মানুষের অধিকার বাড়বে, তা তারা চায় না।

আন্দোলন হয়েছিল কোটা প্রথা বিলোপের জন্য, সেই আন্দোলন থেকে নতুন সংবিধানের আলাপ দেওয়াটা কি যৌক্তিক?

মোল্লা ফারুক: খুব সাম্প্রতিক সময়ের কথা যদি বলি, তাহলে চিলিতে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা হলো, যেখানে সরকার পতন হয়েছিল জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে। এর আগে আরব বসন্তের পর তিউনিসিয়া এবং মিশরের সরকার পতন হয়েছিল। আরব বসন্ত হয়েছিল তিউনিসিয়ার একজন ফেরিওয়ালাকে ফুটপাথ থেকে সরিয়ে দেওয়াকে কেন্দ্র করে। কিন্তু দীর্ঘদিনের দুঃশাসনের কারণে মানুষ এই ঘটনাকেই তাদের মুক্তির উৎস বলে ভেবেছিল।

আওয়ামী লীগের বিচার বা তাদের পরবর্তী নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গি কী?

মোল্লা ফারুক: মুজিববাদী আওয়ামী লীগের ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি খুব পরিষ্কার। আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটা অপরাধীর বিচার হতে হবে। যাদের হাতে আমাদের রক্ত লেগে আছে, তাদেরকে আমরা পুনর্বাসিত হতে দেব না। আওয়ামী লীগের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা নির্বাচন হতে দেব না। বিচারের মাধ্যমে আদালত সিদ্ধান্ত নেবে আওয়ামী লীগ আসলে নিষিদ্ধ হবে কি না। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর নুর হোসেন, ডাক্তার মিলনসহ শহিদদের খুনের কোনো বিচার আমরা পাইনি। বরং আমরা দেখেছি সেই মামলাগুলোকে এরশাদের পুনর্বাসন এবং ফ্যাসিবাদ কায়েমের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। তাই আমরা আবার একই ফাঁদে পা দিতে চাই না।

নাগরিক কমিটি যে রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নিয়েছে, তা দেশের মানুষের মধ্যে কতটা আবেদন তৈরি করবে বলে মনে করছেন? এই দল কি জাতীয় সংসদে সরকার গঠনের মতো আসনে জেতার সক্ষমতা রাখবে?

মোল্লা ফারুক: আওয়ামী লীগ ও তার ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের কারণে বাংলাদেশে একটা রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে জাতীয় পার্টি ফ্যাসিবাদের সহযোগী হওয়ার কারণে জনগণের ভেতরে কোনো প্রকার আবেদন রাখতে পারছে না। এ অবস্থায় বাংলাদেশের চল্লিশ ভাগ তরুণ ভোটার যাদের বয়স পঁয়ত্রিশের কম, তারা জীবনে কখনো ভোট দেওয়ার সুযোগ পায়নি। আমরা মনে করি, এই ভোটারদের যে শক্তি তা নাগরিক কমিটির প্রধান অবলম্বন। এছাড়া জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে যে ফ্যাসিবাদকে রুখে দিয়েছে, সেই জনগণই নাগরিক কমিটির সঙ্গে মিলে আবারও ব্যালটের মাধ্যমে বিপ্লব ঘটাতে প্রস্তুত আছে।

নাগরিক কমিটির রাজনৈতিক দল হয়ে ওঠা কতটা এগিয়েছে? এটি কি কিংস পার্টি হয়ে উঠছে?

মোল্লা ফারুক: আমরা এখন মূলত তৃণমূলে আমাদের কমিটিগুলো দেওয়ার চেষ্টা করছি। যে মানুষগুলো ফ্যাসিবাদের বিলোপের আকাঙ্ক্ষায় আমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছিল, তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করে সাংগঠনিক ফরমেটে নিয়ে আসা এখন আমাদের প্রধান কাজ। আমরা আমাদের আইডিয়া নিয়ে জনগণের কাছে যাচ্ছি, মতবিনিময় করছি, তৃণমূল শক্তিশালী করছি। সাংগঠনিক শক্তি অর্জন হলেই আমরা রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করব। কিংস পার্টি বলতে যা বোঝানো হয়, আসলে নাগরিক কমিটি এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল হবে না। আর কিংস পার্টি তৈরি হয় বিভিন্ন দল থেকে বড় বড় নেতাকে ভাগিয়ে নিয়ে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে। এখন পর্যন্ত আমাদের শতাধিক কমিটি এবং কেন্দ্রীয় কমিটি তৈরি হয়েছে, যেখানে ওরকম একটা দৃষ্টান্তও কেউ দেখাতে পারবে না। যারা একসময় কিংস পার্টি তৈরি করেছিল, তারা আমাদেরকে কিংস পার্টি ট্যাগ দেওয়ার চেষ্টা করছে।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *