Home সারাদেশ লাখো শহীদের রক্তে কেনা একটি পতাকা।পঞ্চাশ বছর ধরে আমরা কি শহীদদের রক্তের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করিনি?
লাখো শহীদের রক্তে কেনা একটি পতাকা।পঞ্চাশ বছর ধরে আমরা কি শহীদদের রক্তের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করিনি?
বালী তাইফুর রহমান তূর্য, লেখক ও সমাজকর্মী (ঝালকাঠি):
১৯৭১ নিয়ে অতিরঞ্জন নয়,অবহেলাও নয়।নয় মাস অস্ত্র দিয়ে মৃত্যুর ঝুকি নিয়ে যুদ্ধ করা মুখের কথা নয়।কত লাশ যে পরে ছিলো পথের ধারে,নদীর তীরে।কত বীরের লাশ খেয়েছে শকুনে,খুবলে খেয়েছে চোখ।হাড় টেনেছে কুকুরে তার সঠিক হিসাব কেউ জানে না।
স্বাধীনতা এতো সহজে আসেনি।আমরা তো জীবিতদের মনে রেখেছি,সম্মাননা দিই প্রতি বছর।কিন্তু যাদের লাশগুলো দেশের জন্য পচে গেলো?যাদের কবরটুকো জুটলো না?যাদের রক্তের স্রোতে আজ মানচিত্র আকা হলো তাদের একটা তালিকাই আমাদের কাছে নেই।আমরা তাদের সেই কস্টে বুক ভাসানো পরিবারগুলোকেও চিনি না,অথচ তারা কেউ পিতা হারিয়েছিলেন,কেউ প্রয়তম স্বামীকে,কেউবা নারিছেড়া ধন সন্তানকে হারিয়েছিলেন।কত বাপের কলিজার টুকরো কন্যাকে তুলে নিয়ে আর্মি ক্যাম্পে উলংগ করে মোজ মাস্তি করেছিলো সেই জিন্নাহর আর্মি তার হিসাব কেউ রাখেনি।কত ভাইয়ের রক্তের চেয়ে প্রিয় বোনটাকে তুলে নিয়ে গেলো পাকিস্তানি আর্মি,কত পুরুষের সখের সদ্য বিয়ে করা প্রিয়তমা স্ত্রীটাকেও তুলে নিয়ে গেলো আর্মি ক্যাম্পে!কেউ গুনে রাখেনি নেতারা।যেদিন দেশ স্বাধীন হলো,যেদিন বিবস্ত্র সেই কন্যাদেরকে ঘরে ফেরানো হলো সেদিন তারা ঘরে ফিরে সেই ভালোবাসার লোকগুলোকে খুজে পায়নি।সেই বিপ্লবী প্রেমিকদের রক্তেই স্বাধীন হয়েছিলো এই দেশ,কোনো চোরের জন্য স্বাধীন হয়নি।সেই বোনের ধর্ষণের বদলা দিতেই রক্ত দিয়েছিলো বিপ্লবী দেশ প্রেমিকেরা এইসব চোরেরা রক্ত দেয়নি।অথচ সেইসব বীরদের পচে যাওয়া লাশের খবর কখনো রাখিনি আমরা।।আমরাই বিশ্বাসঘাতক।
আমরা সত্যিই শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছি বারবার। বছরের পর বছর শুধু মাইক্রোফোন পেয়ে গলাবাজি করেছি শহীদদের স্মরনের নামে।কিন্তু বস্তুত স্টেজ থেকে নেমেই অনুষ্ঠানের জন্য তোলা চাদার অতিরিক্ত টাকা ভাগ বাটোয়ারা করতে ব্যস্ত হয়ে পরেঁছি,কারন আমরা বড় বড় নেতা।
বিজয় দিবসের পরের দিনই ঠিক আমরা হৈ হৈ করে চাদাবাজি করেছি,ঠিকাদারির নামে লুটপাট করেছি।দেশকে ঠকিয়েছি সব সময় অনুতপ্ত হইনি।
রাস্ট্রের পয়সা যেভাবে পেরেছি লুটেপুটে নিয়েছি।আমরা নেতা হয়েঁছি,আমরা অফিসার হয়েঁছি আর তারা আমাদের মুক্তির জন্য শহীদ হয়েছেন তফাৎ এতটুকু।
আমরা তাদের রক্ত বিনিয়োগ করে অফিসার হয়ে কোটি টাকার মিথ্যা প্রকল্প বানিয়ে লুটে নিয়েছি,আমরা খরচাপাতির নামে কোটি টাকা মেরে দিয়ে মহৎপ্রাণ সেজেছি।আমরা রাস্ট্রের প্রতিটি সেক্টরকে খুবলে খুবলে খাচ্ছি যেভাবে ১৯৭১ সালে শকুন আর কুকুর আমাদের বীর সন্তানদের লাশ খুবলে খুবলে খেয়েছে।।
আমরা জাতীয় দিবস এলেই শোক পালন করি,দামামা বাজাই,ব্যানার লাগাই,আলোক সজ্জা করি,পিটি প্যারেড করি,বড় বড় বক্তৃতা দেই,কিন্তু শহীদদের সন্তানন্দের কোনো খবরই জানি না।
সাত বীর শ্রেষ্ঠর সন্তান কোথায় আছে জানি না।
আসলেই আমরা বিশ্বাসঘাতক, আমরা শকুন।আমরা ৭১ সালের প্রান দেয়া সেই বীরদের রক্তের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছি এবং করেই চলেছি।আমরা দুর্নীতি থেকে দেশকে বাচাইনি,আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েও তার শিক্ষাকে ধ্বংস করেছি,আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েও তার সাস্থ্য ক্ষাতকে লুটপাট করেছি,আমরা স্বাধীন দেশকে বৈদেশিক ঋনে জর্জরিত করেছি,আমরা দেশের টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেছি।।
অতএব অবশ্যই আমরা বিশ্বাসঘাতকতা করেছি সেই বীর সন্তানদের সাথে।।
তাই চলুন দেশের সাথে আর প্রতারণা না করি,দেশটাকে আর লুট না করি,আর অর্থ পাচার না করি।।