মাত্র ৩ মাসের মাথায় স্বরাষ্ট্র সচিব মোমেনের পদত্যাগ যে কারণে
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন পদত্যাগ করেছেন। সোমবার (৯ ডিসেম্বর) তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নিজের পদত্যাগপত্র জমা দেন। মন্ত্রণালয়ের একটি বিশ্বস্ত সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, ড. মোমেন গত ১৮ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। পরে তাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব পদেও দায়িত্ব দেওয়া হয়। এদিকে ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত প্রশাসনে এ সময় যারা আলোচিত শীর্ষ কর্মকর্তা, তাদের মধ্যে ড. মোমেন অন্যতম। তাকে খুঁজে এনে জননিরাপত্তা বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তার সঙ্গে আরও যাদের খুঁজে এনে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান প্রমুখ।
তবে কী এমন ঘটে গেল ড. মোমেনকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছাড়তে হচ্ছে? খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ড. মোমেনকে বিধিবদ্ধ সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকার গঠিত সার্চ কমিটিও তাদের প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে। সেখানেও তারা ড. মোমেনকে এক নম্বর পছন্দ হিসেবে রেখেছে। কিন্তু কমিশনের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পেতে হলে তাকে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী হতে হবে। সরকারের বিভিন্ন সেক্টরে তার কমপক্ষে ২০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পেলে ড. মোমেন অ্যাপিলেট ডিভিশনের বিচারপতির পদমর্যাদা ভোগ করবেন।
তবে এই পদে সার্চ কমিটির অন্যতম পছন্দ ছিলেন সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা সরে ড. মোমেনের দিকে চলে যায়। কারণ হিসেবে জানা গেছে, আবদুল আউয়াল মজুমদারকে অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হতে পারে।
গত রবিবার হাইকোর্টে দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগের জন্য গঠিত সার্চ কমিটি তাদের সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে। কমিটি চেয়ারম্যান ও দুজন কমিশনার পদের জন্য মোট ছয়জনের নাম প্রস্তাব করে গতকাল তা প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠিয়েছে।
ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বিসিএস ১৯৮২ (বিশেষ) প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেন। তিনি ঢাকার জেলা প্রশাসক, দুজন রাষ্ট্রপতির একান্ত সচিব, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব, বিআরটিএর চেয়ারম্যান, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও ছিলেন। এমডি থাকাকালে দীর্ঘদিন লোকসানে থাকা বিমানকে তিনি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন। বিমানের জনবল যৌক্তিককীকরণ করার জন্য নানা সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ভলান্টারি রিটায়ারমেন্ট স্কিম (ভিআরএস)। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে কর্মীদের পাওনা বুঝিয়ে দিতে তিনি বিশ্বব্যাংক থেকে অর্থ সংগ্রহ করেন, যা সে সময় বহুল আলোচিত বিষয় ছিল। এ মডেল সরকারের অন্যান্য সংস্থায় প্রয়োগ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু আর্থিক জোগান না থাকায় তা সম্ভব হয়নি।