Home জাতীয় ‘পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে জোরালো উদ্যোগ নিয়েছে সরকার’
3 minggu ago

‘পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে জোরালো উদ্যোগ নিয়েছে সরকার’

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, বিগত সরকারের আমলে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থের গন্তব্য চিহ্নিত করে তা ফিরিয়ে আনতে জোরালো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনা ‘সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর থেকে আমাদের অনেক কাজ শুরু হয়ে যাবে। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যারা এসব নিয়ে কাজ করে, তাদের সঙ্গে বৈঠক হচ্ছে। কথা হবে। পাচারের অর্থ ট্রেস করে কীভাবে ফেরত আনা যায়, সেই চেষ্টা করা হবে।’

রবিবার (১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিকে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিষয়ক শ্বেতপত্র প্রকাশের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরতে এই প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। এর আগে সকালে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তার তেজগাঁও কার্যালয়ে শ্বেতপত্রের খসড়া রিপোর্ট হস্তান্তর করেছেন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

শফিকুল আলম বলেন, লুটপাটের অর্থের মধ্যে যেটা দেশের বাইরে চলে গেছে, এই সরকারের অন্যতম প্রতিশ্রুতি হচ্ছে—যেভাবে হোক আমরা এই টাকা ফেরত আনার চেষ্টা করবো। সেই অনুযায়ী ১০ ডিসেম্বর থেকে আমাদের অনেক কাজ শুরু হয়ে যাবে।

আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যারা এটা নিয়ে কাজ করে, তাদের সঙ্গে আমাদের অনেক ধরনের বৈঠক হচ্ছে, কথা হবে।

আমাদের পুরো ফোকাস থাকবে এর ওপরে। আগে তো ট্রেস করতে হবে চুরি করে এই টাকাটা ওরা কোথায় নিয়ে গেছে। দ্বিতীয়টা হচ্ছে, এই টাকাটা কীভাবে ফেরত আনা যায়। এটা অবশ্যই কষ্টসাধ্য কাজ। কিন্তু এটা আমাদের টপ প্রায়োরিটির একটা, এটাকে (পাচার হওয়া অর্থ) আনতেই হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেক বৈঠক আমরা করছি। এফবিআইয়ের সঙ্গে বৈঠক করছি। অন্যান্য যেসব প্রতিষ্ঠান আছে, যারা চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধার নিয়ে কাজ করেন তাদের সঙ্গে…। টাকাটা নেওয়াটা তো সহজ, কিন্তু সেটা আনাটা অনেক অনেক…(কষ্টসাধ্য)।

এজন্য লিগ্যাল দিকটা দেখতে হয়। টাকাটাকে আগে ট্রেস করতে হয়, কোথায় এটা চলে গেছে। এটা করার জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আছে। তাদের সঙ্গে আমরা বসছি, কথা বলছি এবং পরামর্শ নিচ্ছি; কীভাবে এই টাকাগুলো ফেরত আনা যায়।’

শফিকুল আলম বলেন, ‘কমিটিকে তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছিল। তারা তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট তৈরি করে দিয়েছে। তারা বলেছে এটা খসড়া প্রতিবেদন।’

তিনি বলেন, ‘শ্বেতপত্রে আর্থিক যে চিত্র, তা ভয়াবহ। দেশের মানুষের চোখের সামনে দিয়ে একটা লুটপাট চলেছে, লুটপাটতন্ত্র জারি হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের অনেকে এর বৈধতা দিয়েছে। বিলিয়ন অব বিলিয়ন ডলার অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে।‘

তিনি জানান, ‘প্রতিবেদনে যে চিত্র উঠে এসেছে, তা শুনে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন—আমরা আতঙ্কিত। এটা রক্ত হিম করার মতো ঘটনা। গরিব মানুষের টাকা লুটপাট হয়েছে। এখানে খুব যে বেশি লোক জড়িত সেটা নয়। এখানে রাজনীতিক ছিলেন, আমলা ছিলেন। কিছু ব্যবসায়ী ছিলেন। এদের যোগসাজশে এটা করা হয়েছে। আমাদের মতো অনেক সাংবাদিক এটাকে বৈধতা দিয়েছেন।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা একটা খসড়া প্রতিবেদন। তিন মাসের সময়কালে তারা যে অফিসিয়াল ডাটা পেয়েছেন, সেটার সমন্বয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত নতুন কোনও আপডেট তথ্য পাওয়া গেলে, সেটা এর সঙ্গে যুক্ত হবে। পুরো বাংলাদেশের মানুষের টাকা কীভাবে লুটপাট হয়েছে, প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে ফোকলা করে দেওয়া হয়েছে, এটার পুরো চিত্রটাই পাওয়া যাবে। তখন চূড়ান্ত করা হবে।’

সকালে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তার তেজগাঁও কার্যালয়ে শ্বেতপত্রের খসড়া রিপোর্ট হস্তান্তর করেন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির একজন সদস্য লুটপাটকারীদের দ্রুত বিচার শুরুর প্রস্তাব করেছেন। এক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান কী—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছরে যা হয়েছে, তার বিচার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করা আমাদের অগ্রাধিকার।

ওই সরকারের আমলে হাজার হাজার মানুষ খুন করা হয়েছে। গুম করা হয়েছে, তার বিচার তো হবেই। পাশাপাশি যারা দেশকে ভয়ানক একটা লন্ডভন্ড অবস্থায় রেখে গেছে, এ ধরনের একটা মেগা চুরি করে গেছে। সেই চুরির তো অবশ্যই বিচার হবে। কেউ ছাড় পাবে না।

তবে এজন্য আমাদের প্রমাণকগুলো সংগ্রহ করে কেসগুলো করবো এবং কিছু কিছু হচ্ছেও। কেউ কেউ আটকও হয়েছে। আমাদের দুর্নীতি দমন কমিশন শিগগিরই পুনর্গঠন করা হবে। নতুন যে কমিশন আসবে তারা খুব দ্রুত এ কাজগুলো এগিয়ে নিয়ে যাবেন।’

মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য ইস্যুতে তিনি বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখতে সরকার কাজ করছে। সিরিজ বৈঠক হচ্ছে। বাণিজ্য উপদেষ্টা এটা নিয়ে একটি মুহূর্তও নষ্ট করছেন না। প্রতিটি অংশীজনের সঙ্গে কথা বলছেন।

সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কীভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যায় সেটা নিয়ে কাজ হচ্ছে, শুল্ক কমানো হচ্ছে।’ মূল্যস্ফীতিতে কোনও প্রভাব পড়বে না বলে দাবি করেন প্রেস সচিব।

তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে যে ৬৫ হাজার কোটি টাকা ছাপানো হয়েছিল, তার উদ্দেশ্য ছিল এস আলমকে সাপোর্ট দেওয়া। এই সরকার যে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ছাপিয়েছে, তার উদ্দেশ্য হচ্ছে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সাপোর্ট দেওয়া।’

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *