Home রাজনীতি বিএনপির পালে খালেদা-তারেক জিয়ার মামলা মুক্তির হাওয়া
4 minggu ago

বিএনপির পালে খালেদা-তারেক জিয়ার মামলা মুক্তির হাওয়া

একদিনে দুটি মামলায় খালাস পেয়েছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া৷ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় তার দণ্ড আগেই স্থগিত করা হয়েছে৷ এর আগে ৩০ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে নাশকতা ও রাষ্ট্রদ্রোহের ১১টি মামলার কার্যক্রম বাতিল হয়।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানও একই দিনে দুটি মামলা থেকে অব্যাহতি পান।

বুধবার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিশেষ আদালতের দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিল মঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট।এই মামলায় ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর রায়ে বিশেষ আদালত খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেন । একই বছরের ১৮ নভেম্বর রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া। হাইকোর্টের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার খালেদা জিয়ার আপিল গ্রহণ করে রায় দেন। ফলে এই মামলা থেকে খালাস পেলেন তিনি।

অন্যদিকে বুধবারই বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে অভিযোগ গঠন পর্যায়ে খালাস দিয়েছেন আদালত। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-২-এর বিচারক আবু তাহের এই রায় দেন। তবে চারজনের বিরুদ্ধে আদালত অভিযোগ গঠন করেছেন। তারা হলেন: জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব নজরুল ইসলাম, পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান এস আর ওসমানী, সাবেক পরিচালক মঈনুল আহসান, এবং বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম ও খনির কাজ পাওয়া কোম্পানির স্থানীয় এজেন্ট হোসাফ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন।

মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া, এমকে আনোয়ার, এম শামসুল ইসলাম, ব্যারিস্টার আমিনুল হক ও সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন মারা গেছেন। যুদ্ধাপরাধ মামলায় জামায়াতের দুই শীর্ষ নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। তাই এ মামলা থেকে তাদের আগেই অব্যাহতি দেয়া হয়।

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির কয়লা উত্তোলন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষনে ঠিকাদার নিয়োগে অনিয়ম এবং রাষ্ট্রের ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকার ক্ষতি ও আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় মামলাটি করা হয়। ওই বছরের ৫ অক্টোবর চার্জশিট দাখিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এর আগে ১১ নভেম্বর জিয়া অরফানজে ট্রাস্ট মামলায়  খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করেছেন হাইকোর্টের আপিল বিভাগ । আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায় আছে। এই মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিশেষ জজ আদালত খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেন। রায়ের বিরুদ্ধে একই বছর হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া। আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট রায়ে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড করেন। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর ২০১৯ সালে আপিল বিভাগে পৃথক লিভ টু আপিল করেন খালেদা জিয়া।

আর ৩০ অক্টোবর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের একটি, নাশকতার অভিযোগে করা ১০টিসহ ১১টি মামলার কার্যক্রম বাতিল ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।

মামলার কার্যক্রম বাতিল চেয়ে খালেদা জিয়ার করা পৃথক ১১টি আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ বাতিলের ওই রায় দেয়। ১১টি মামলার মধ্যে রাজধানীর দারুস সালাম থানার সাতটি, যাত্রাবাড়ী থানার চারটি মামলাও রয়েছে। এসব মামলায় খালেদা জিয়া জামিনে ছিলেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বুধবার কর ফাঁকি ও চাঁদাবাজির দুইটি মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। চাঁদাবাজির মামলায় অব্যাহতি পাওয়া অন্যরা হলেন, তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ওবায়দুল্লা খন্দকার, কামরুজ্জামান, ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুল আলম, ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম শোয়েব বাশুরী ওরফে হাবলু, আজিজুল করিম তারেক ও মনিজুর রহমান ওরফে মানিক। চাঁদাবাজির অভিযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোম্পানি আব্দুল মোনেম লিমিটেডের মহা-ব্যবস্থাপক খায়রুল বাশার ২০০৭ সালের ৯ এপ্রিল বাদী হয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় এ মামলা করেন। অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্ল্যাহ তাদের অব্যাহতি দেন।

অন্যদিকে ওয়ান-ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালে ২৬ লাখ টাকার কর ফাঁকির অভিযোগে তারেক রহমানের নামে একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সেই মামলায় তাকে খালাস দেন বিশেষ জজ আদালত ১০-এর বিচারক মো. রেজাউল করিম।

২৪ নভেম্বর তারেক রহমান ২০১৫ সালে গাজীপুরে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি বিস্ফোরক মামলা থেকে ২৪ নভেম্বর অব্যাহতি পান। গাজীপুরের আদালতে দায়ের করা আরেকটি মানহানির মামলা থেকেও তাকে ওইদিন অব্যাহতি দেয়া হয়। ৩১ অক্টোবর তিনি ময়নসিংহের আদালত থেকে দুটি মানহানির মামলায় অব্যাহতি পান। ১ নভেম্বর তিনি হাইকোর্টে একটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা থেকে অব্যাহতি পান। ২২ সেপ্টেম্বর তিনি ঢাকার সাইবার ট্রাাইবুনাল থেকে ২০২১ সালে দায়ের হওয়া সাইবার অপরাধের একটি মামলা থেকে অব্যাহতি পান।

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৮০টি মামলা আছে। ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং পরবর্তী সময় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এসব মামলা হয়। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, অর্থ পাচার, মানহানিসহ পাঁচ মামলায় সাজা হয়েছে তারেক জিয়ার। দেশে না থাকায় পলাতক দেখিয়ে মামলাগুলোর বিচার সম্পন্ন করেছে বিভিন্ন আদালত।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে পাঁচটি দুর্নীতির অভিযোগসহ মোট মামলা ৩১টি। এর মধ্যে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় তাকে। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাকে হাসিনা সরকার সাজা বহাল রেখে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেয়। ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর তার সাজা স্থগিত করে পুরোপুরি মুক্তি দেয়া হয়।

মামলার জাল থেকে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বেরিয়ে আসার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তার কি কোনো রাজনৈতিক প্রভাব আছে? অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়নে কি তা কোনো প্রভাব ফেলবে? বিএনপির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিকল্পনায় কি কোনো ভূমিকা রাখবে?

খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার মামলা থেকে অব্যহতিতে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে স্বস্তি আছে।কিন্তু এখনো তারা নিশ্চিত নন সব মামলা শেষ হতে কত সময় লাগবে। আর টু মাইনাস থিওরি নিয়ে যে আতঙ্ক ছিল তা-ও কাটতে শুরু করেছে। তারা অপেক্ষা করছেন তারেক রহমানের দেশে ফেরার। কিন্তু মামলা থেকে অব্যাহতি বা খালাসের সঙ্গে রাজনীতি মেলাতে চাননা বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।

তিনি বলেন, আমরা আগেও বলেছিলাম যে মামলাগুলো আমরা  আইনগতভাবে মোকাবেলা করব। এখন তাই করছি। এখন বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে শুরু করেছে। আগের ফ্যাসিবাদী সরকার মিথ্যা মামলা দিয়েছিলো। খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠিয়েছিলো। আমরা কোনো সরকারের কোনো সহানুভূতি নয়, আইনগত লাড়াই করেই ন্যায় বিচার পাচ্ছি।

তার কথা, দেশের মানুষই বিএনপির ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও নেতৃত্ব নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। এর সঙ্গে মামলার কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ, দেশের মানুষ জানে এই মামলাগুলো মিথ্যা। আর  তারেক রহমান সাহেবের দেশে ফেরা মামলা থাকা বা না থাকার ওপর নির্ভর করে না। দেশের মানুষের আশা, দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী তিনি দেশে ফিরে আসবেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ভিাগের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, আসলে রাজনীতিতে রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা কোনো সংকট নয়। বরং নেতাদের বিরুদ্ধে রজনৈতিক মামলা হলে, কারাগারে গেলে তারা আরো জনপ্রিয় হন। সেটা তো এখন আমরা দেখতেই পারছি।

“আর রাজনৈতিক মামলা সব সময়ই গোলমেলে। যারা সরকারে থাকে, তারা বিরোধীদের বিরুদ্ধে মামলা করে। ফলে এই মামলাগুলো সব সময়ই প্রশ্নের মুখে পড়ে। তবে আমরা মনে করি, আদালতের রায়ের সাথে রাজনীতি নির্ভরশীল নয়,বলেন তিনি।

তবে আরেকজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. জাহেদ উর রহমান মনে করেন, খালেদা জিয়া খালাস পাচ্ছেন, তারেক রহমানও পাচ্ছেন- এগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির আস্থার সম্পর্ক বাড়াবে। দেশের মানুষের পারসেপশন আছে যে, ওই মামলাগুলো রাজনৈতিক হয়রানিমূলক। সেই মামলা থেকে এখন তারা রেহাই পাচ্ছেন। এতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা যেমন খুশি, দেশের সাধারণ মানুষও খুশি। বর্তমান সরকার দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি সঙ্গে সম্পর্ক রেখেই কাজ করতে চায়। আমরা মনে হয় সেই সম্পর্ক আরো ভালো হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারেক রহমান দেশের বাইরে আছেন। এখন তারা দেশে ফেরার পথ সহজ হয়ে যাচ্ছে। ফলে বিএনপির রাজনৈতিক পরিকল্পনা ও ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্যও এটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *