Home সারাদেশ সুন্দরবনের উপকূলীয় বাগেরহাটে টানা বৃষ্টিতে ভেসে গেছে কোটি কোটি টাকার মাছ
সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪

সুন্দরবনের উপকূলীয় বাগেরহাটে টানা বৃষ্টিতে ভেসে গেছে কোটি কোটি টাকার মাছ

এস. এম সাইফুল ইসলাম কবির,বাগেরহাট:

বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের উপকূলীয় বাগেরহাটে বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে  টানা বৃষ্টিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ভেসে গেছে হাজার হাজার মৎস্য ঘেরের মাছ।এতে চাষিদের কয়েকশ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

অতিরিক্ত পানিতে একাকার হয়ে গেছে খাল-নদী, মাঠ ও মাছের ঘের। কোনো কোনো চাষি আবার নেট নিয়ে শেষ রক্ষার চেষ্টা করছেন।

শুক্রবার রাত থেকে সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল পর্যন্ত বিরামহীন বৃষ্টিতে অন্তত সাত হাজার ঘেরের মাছ ভেসে গেছে বলে জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ। এতে চাষিদের কয়েকশ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

চিংড়ি সেক্টরকে টিকিয়ে রাখতে চাষিদের সরকারি সহায়তা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা।
মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এবারের বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন গলদা চিংড়ি উৎপাদনের অন্যতম এলাকা জেলার ফকিরহাট, চিতলমারী ও মোল্লাহাট উপজেলার চাষিরা। এর সঙ্গে মোংলা, রামপাল ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার চাষিদের ক্ষতির পরিমাণও কম নয়। চাষিদের দাবি, কয়েকশ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে এ পানিতে।

ফকিরহাট উপজেলার ফলতিতা এলাকার কাজী মিরাজুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির পানিতে ঘের ডুবে একাকার হয়ে গেছে। ঘেরের পাড়ে হাঁটু পানি। নেট, কচুরিপানা ও ঘাস দিয়ে মাছ ভেসে যাওয়া ঠেকানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু কতদূর আছে জানি না।

নুর মোহাম্মাদ নামের আরেক চাষি বলেন, এখন আসলে মাছ ধরার সময় আমাদের। কিন্তু হঠাৎ দুর্যোগ আমাদের পথে বসিয়ে গেল। আমার তিনটি ঘেরের প্রায় ১০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। ঘেরের পাড়ের সবজি গাছও মরে যাবে পানি টানার সঙ্গে সঙ্গে।

মোল্লাহাট উপজেলার কাহালপুর গ্রামের নাসির মিয়া বলেন, আমার ৫০ বিঘার দুটি ঘেরসহ আশপাশের সবার ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। এলাকার মানুষের কোটি কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে।

চিতলমারী উপজেলা সদরের চাষি মুমিনুল হক টুলু বলেন, এলাকার মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস ঘেরের মাছ ও ঘেরের পাড়ের সবজি। ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করি আমরা। মাছ ঘের থেকে বের হয়ে যাওয়ায় আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। সরকারের কাছে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানাই।

এদিকে ফকিরহাট, চিতলমারী ও মোল্লাহাটের বিভিন্ন এলাকায় জাল দিয়ে পানিতে ভেসে যাওয়া মাছ ধরতে দেখা যায় স্থানীয়দের। প্রতিটি জালেই চিংড়ি, রুই, কাতলা, মৃগেল, মিনার কার্পসহ বিভিন্ন ধরনের চাষের মাছ পাওয়া যাচ্ছে। কেউ কেউ থলে ভর্তি মাছ পেয়েছেন।

ফকিরহাটের ফলতিতা-বটতলা এলাকায় মাছ ধরতে আসা মহিদুল নামের এক যুবক বলেন, আমার নিজের ঘেরও তলিয়েছে। মাঠের সব ঘের এখন একাকার হয়ে গেছে। সবাই জাল নিয়ে এসেছে, আমিও এসেছি। বড়-ছোট মিলিয়ে ১০ কেজির বেশি মাছ পেয়েছি। সবাই মাছ পাচ্ছে।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন বাগেরহাট জেলা বিএনপির নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান এবং আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কামরুল ইসলাম গোরা।

সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান বলেন, মাছ চাষিরা আর্থিকভাবে খুব বিপদে পড়েছেন। আমরা তাদের খোঁজ খবর নিচ্ছি। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা প্রয়োজন। আমার পরামর্শ হলো- যাদের ব্যাংক ঋণ আছে, তাদের সুদ মৌকুফ করতে হবে এবং এনজিওগুলো আপাতত কিস্তি নিতে পারবে না। যখন সব কিছু স্বাভাবিক হবে, তখন আবার ঋণের কিস্তি পরিশোধ করবেন চাষিরা।

এদিকে টাকার অঙ্কে চাষিদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ না জানাতে পারলেও ক্ষতিগ্রস্তদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল।

তিনি বলেন, প্রায় প্রতি বছরই বন্যা ও বৃষ্টির পানিতে ঘেরের মাছ ভেসে যায়। আবার শুকনো মৌসুমে পানির অভাবে মাছ মারা যায়। এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে বাঁচতে ঘেরের গভীরতা ও পাড়ের উচ্চতা বাড়াতে হবে। বৃষ্টির পানি নেমে গেল চুন দিয়ে পরিমাণ মতো খাবার দিতে হবে।
(এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির)
বাগেরহাট সংবাদদাতা                     
০১৯১১২১১৯৬৫/০১৭১১৩৭৭৪৫০

তাং- ১৭.০৯.২৪

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *