দেশ সংস্কারের নতুন চ্যালেঞ্জ,যে বাধা পাড়ি দিতে হবে শিক্ষক,নাগরিক এবং ছাত্রদের।
বালী তাইফুর রহমান তূর্য,সমাজকর্মী ও লেখক।
“বাংলাদেশ” লড়াই সংগ্রামের সমৃদ্ধ ইতিহাসের একটি জনপদ।ডাচ,পর্তুগীজ, বৃটিশ,পাকিস্তানিদের থেকে শুরু করে যারা টিকে আছে শত শত বছর ধরে।অনেকেই এখানে বানিজ্য করতে এসে শাসনের নামে শোষণ করেছে।আর এই জাতীও তা রক্ত ঝড়িয়ে শৃঙ্খল ভেঙে মুক্ত হয়েছে বারবার।
সেই লড়াই সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৫২,১৯৬৯,১৯৭০,১৯৭১,১৯৯০ সালের পরে ২০২৪ সালেও জাতী তার ঐতিহ্য রক্ষা করেছে।কোটা সংস্কার আন্দোলন আসলে রূপ নিয়েছে দেশ সংস্কারের আন্দোলনে। দেশপ্রেমিক ছাত্রজনতার রক্তে রঞ্জিত হয়েছে স্বাধীন দেশের পতাকা।দেশ হয়েছে ফ্যাসিস্ট মুক্ত।যেই সংগ্রামের অগ্রগামী পদাতিক সৈনিক ছিলো এদেশের সাধারণ ছাত্রসমাজ।যাদের বুকের টগবগে উত্তপ্ত রক্তের স্রোতে ভেসে এসেছে মুক্তি,ভেঙেছে জালিমের শৃঙ্খল।
সারা দেশের মানুষ স্বীকার করেছে এটি দেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতার লড়াইয়ের বিজয়।এবং এই লড়াইয়ের শহীদদের ৮৭% মানুষের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় ছিলো না।”স্বাধীনতা অর্জনের থেকে,স্বাধীনতা রক্ষা করাটা কঠিন” প্রবাদটি চির সত্যি।সেই স্বাধীনতাকে রক্ষা করার বড় কিছু চ্যালেঞ্জ এখন দেশের সামনে, যে বাধা পাড়ি দিতে হবে সকলে মিলে।তবে এর পাঞ্জেরিও হতে হবে ছাত্রদেরই।
বাজার নিয়ন্ত্রণ,প্রথম চ্যালেঞ্জ হবে বাজারদর নিয়ন্ত্রণ। কারণ সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভ জমেছিলো এই বাজার দরের ঊর্ধ্বগতির কারনে।আর এর অন্যতম কারন ছিলো আমদানি সিন্ডিকেট, রাস্তায় রাজনৈতিক এবং পুলিশের চাদাবাজি, বাজারের চাদাবাজি এবং অতিরিক্ত মুনাফার মানুষিকতা।এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে প্রথম খুজতে হবে নিত্তপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বিকল্প বাজার।কেননা যেহেতু ভারত তার আধিপত্য হারাতে বসেছে তাই তারা সাধারণভাবেই এখন চাল,ডাল,পিয়াজ,তেল দিতে চাইবে না।তাই আমাদেরকেও রেডি করতে হবে এর বিকল্প উৎস।তা নাহলে বাজারদর ফের অস্থির হয়ে যেতে পারে।
বন্ধ করতে হবে পন্য পরিবহনের চাদাবাজি।রাস্তায় বিভিন্ন শ্রমিক ফেডারেশন,অমুক তমুক কল্যান সমিতি,পৌরসভার নামে অবৈধ রাজনৈতিক নাম ভাঙিয়ে চাদাবাজি বন্ধ করে পরিবহন ব্যয় কমাতে হবে।ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভাংতে হবে।অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে সাথে সাথে।আর এখানেও পদাতিক সেনাদল হতে হবে ছাত্রদেরই।
সাস্থ্য খাত,সাস্থ্য খাতকে মুমুর্ষ বানিয়ে ফেলা হয়েছিল,তাকে বাচাতে হবে।হাসপাতালগুলিতে ভুয়া ডাক্তার,কমিশন বানিজ্য,টেস্ট বানিজ্য,বন্ধ করতে হবে। সকল সরকারি হাসপাতালে সব ধরনের টেস্ট চালু করতে হবে সাধারণ মানুষের জন্য।যন্ত্রপাতি সরবরাহের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাজার কোটি টাকার অপ্রয়োজনীয় অকেজো যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে রেখেছে যা জনগণের কোনো কাজেই আসছে না।সেগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।এজন্যও এগিয়ে আসতে হবে সকলকে,সচেতন হতে হবে। নিজের অধিকার আদায় করে নিতে হবে।
শিক্ষা খাত সংস্কার,বিগত পনেরো বছরে শিক্ষা ক্ষাতকে সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক অন্ধকারে ঠেলে দিয়ে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে।বিভিন্ন ধরনের শিক্ষানীতির প্রয়োগ, ছাত্র রাজনীতিকে স্কুল পর্যন্ত বিস্তৃত করে ছাত্রদের বই থেকে দূরে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এর থেকে শিক্ষার্থীদের বাচাতে হবে। নইলে পুরো জাতিই বিপদগ্রস্ত হবে। অটোপাশ, পরীক্ষা তুলে দেয়া সহ নানাবিধ গিনিপিগীয় গবেষণা বন্ধ করে একটি সুশৃঙ্খল পদ্ধতিতে সাজাতে হবে। আর এক্ষেত্রে অগ্র সৈনিক হবেন শিক্ষক,শিক্ষাবিদ এবং শিক্ষিতরা।শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি বন্ধ করে ভালো চরিত্রবান,নিতীবান লোককে নিয়োগের মাধ্যমে স্কুল,কলেজগুলোকে ফের সাজাতে হবে। শিক্ষার্থীদের ফেরাতে হবে পড়ার টেবিলে।স্কুল,কলেজ থেকে ছাত্র রাজনীতি সড়িয়ে সেটিকে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য রাখতে হবে।সেখানে লেজুড়বৃত্তিক সংগঠন বাদ দিয়ে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ নির্বাচন থাকতে পারে।তবে তা রাজনৈতিক দলের গুন্ডাবাহিনী না হয়ে যায়।
দুর্নীতি বন্ধ করা,পুলিশ সহ সকল সরকারি দপ্তরের অনিয়ম,দুর্নিতী এবং হয়রানি বন্ধে দাড়াতে হবে সবাইকে।পাসপোর্ট অফিস,থানা,প্রায় সকল দপ্তরে এতদিন ঘুষ ছাড়া কাজ হয়নি তাই আগে ঘুষ দেয়া বন্ধ করতে হবে। কেউ যদি না দেয়,একদিন এমনিতেই নেয়ার অভ্যাস বন্ধ হয়ে যাবে।এতে সহনশীলতা বৃদ্ধি করে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে,আইনের নামে হয়রানি করলেই প্রতিবাদ করতে হবে। তবেই ধীরে ধীরে কমতে পারে হয়রানি, অনিয়ম,দুর্নীতি।পুলিশকে করতে হবে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত।
অর্থনিতীকে বাচাতে হবে।অর্থনীতি ধ্বংসের মুল কারন ছিলো অবৈধ অর্থ পাচার,যা দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি দুর্বল করে দিয়েছে।রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন সময়েই বিদেশে প্রচুর অর্থ পাচার করেছে।কানাডার সেই বেগমপাড়া থেকে আওয়ামী লীগ নেতাদের লন্ডন পাড়ি জমানোর ইতিহাস অনেক পুরনো।এই অর্থ পাচার বন্ধ করা,ঋন খেলাপি বন্ধ করাটাও অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ।এই বাধা পারি দিতে দেশের অর্থনীতিবীদদের সচেতন হয়ে সরব থাকতে হবে। ব্যবসায়ী এবং রাজনৈতিক নেতাদের জবাবদিহিতার আওতায় রাখতেই হবে।এজন্য দরকার সৎ কর্মকর্তা এবং ব্যাংকিংয়ের দিকে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো।যেখানে সচেতন হতে হবে দেশ প্রেমিক অর্থনীতিবীদ এবং সৎ ব্যবসায়ীদের।
দেশ সংস্কারের এই নতুন সুযোগ কাজে লাগাতে হবে সকল নাগরিকদের, কেননা ছাত্রদের একদিন না একদিন ঘরে ফিরতেই হবে। পড়ার টেবিলই তার ছাত্রজীবনের মূল যায়গা।সেটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তাই সকল নাগরিকদের সচেতন হতে হবে, সৎ হতে হবে। তবেই মিলতে পারে নতুন স্বাধীনতার স্বাদ।সফল হবে শহীদদের রক্তের দান।