বেনজীর মতিউররা কোথায়?
দুর্নীতি-অনিয়মে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমান ও এক সময়ের দাপুটে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদরা কোথায় আছেন? তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। ছেলের ছাগলকাণ্ডের পর থেকে মতিউরকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। তবে তিনি ঢাকাতেই অবস্থান করছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। আর বেনজীর আহমেদ তুরস্কে অবস্থান করছেন বলে সূত্র জানায়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য মতিউর রহমানের নামে অঢেল সম্পদের পাশাপাশি মতিউর স্ত্রী, সন্তান ও আত্মীয়দের নামে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। ঢাকা, সাভার, গাজীপুর, নরসিংদী, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট ও জমি রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে আছে এফডিআর এবং পুঁজিবাজারে শত কোটি টাকার বিনিয়োগ। ছাগলকাণ্ডে আলোচিত হওয়ার পর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি তাকে। তিনি এনবিআর থেকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত হয়ে কর্মস্থলে যোগদান করলেও অফিস করছেন না। ঈদের ছুটি শেষে এক দিনও অফিসে দেখা যায়নি। আবার অফিস থেকে তিনি ছুটিও নেননি। এ অবস্থায় আবার গুজব ছড়িয়েছে, মতিউর দেশে নেই। তিনি গোপনে অন্য কোনো পাসপোর্টে দেশ ছেড়েছেন। তবে সূত্র জানিয়েছে, তিনি ঢাকায় আছেন। অনেকটা আত্মগোপনে আছেন। এদিকে মতিউরের প্রথম স্ত্রী নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকীর নামে-বেনামে রয়েছে প্রচুর সম্পদ। গত ১৫ বছরে তিনি সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। শুধু রায়পুরাতেই নয়, তার সম্পদ ছড়িয়ে রয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। শুধু তার নামে নয়, দুই সন্তান তৌফিকুর রহমান অর্ণব ও ফারজানা রহমান ইপসিতার নামেও রয়েছে অনেক সম্পদ। তাদের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু হয়। এর পর গত ২৪ জুন দুদকের উপপরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন আদালতে তাদের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত মতিউর রহমান, স্ত্রী লায়লা কানিজ ও ছেলে আহম্মেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেন। এর পর থেকে লায়লা কানিজ দেশেই আছেন। তিনি নরসিংদীতে বহর নিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তবে কোটা সংস্কার আন্দোলনে কিশোরগঞ্জগামী আন্তনগর ট্রেন পুড়িয়ে দেওয়া, সিলেট মহাসড়কে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো, জেলা কারাগার ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগসহ পুরো আন্দোলনে আলোচিত ছিল নরসিংদী। আওয়ামী লীগের নমিনেশনে উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়া লায়লা কানিজ লাকী ছিলেন আত্মগোপনে। দুষ্কৃতকারীদের এই তা বের সময় মাঠে তার কোনো ভূমিকাই লক্ষ্য করা যায়নি। জানা যায়, শিক্ষক থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া লায়লা কানিজের নামে-বেনামে রয়েছে প্রচুর সম্পদ। তার নির্বাচনি এলাকাসহ ঢাকা, সাভার, গাজীপুর, পূবাইল, যশোরসহ দেশের অন্যান্য জেলা, উপজেলায় নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। অন্যদিকে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে কোথায় আছেন তা স্পষ্ট নয়। তার বিরুদ্ধে দুদক অনুসন্ধান শুরু করার পর আত্মগোপনে চলে যান তিনি। খবরে প্রকাশ সিঙ্গাপুরের একটি ফ্লাইট ধরে বিদেশে চলে যান তিনি। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, বর্তমানে তিনি তুরস্কে অবস্থান করছেন। এই বেনজীর আহমেদের রিসোর্ট, হোটেলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে স্ত্রী, সন্তানসহ নামে-বেনামে রয়েছে অঢেল সম্পদ। উল্লেখ্য, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের অনুসন্ধান চলাকালে বেনজীর আহমেদ গত ৪ মে সপরিবারে দেশ ছাড়েন। তিনি ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশের মহাপরিদর্শক ছিলেন। এর আগে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত র?্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন। তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হিসেবেও দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করেন।