বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের চক্রান্ত করছে সরকার: মির্জা ফখরুল
বাংলাদেশে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় রয়েছে-এটি বিশ্বের কাছে প্রমাণিত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ হচ্ছে আসল গণবিরোধী, রাষ্ট্রবিরোধী। জনগণের কাছে তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। যে কারণে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রজনতাকে খুন করা হয়েছে। এসব তথ্য বিদেশিদের কাছে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো এখন এই বিষয়ে কথা বলবে। এজন্য চলমান ঘটনা আড়াল করতে বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিনে বিএনপির দুই হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করেন মির্জা ফখরুল।
বুধবার বিকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ফখরুল বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিজেদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অন্যের ঘাড়ে চাপাতে, সরকার অপৎপরতা, নোংরা অপকৌশল ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। মিথ্যাচার, অপরের ওপর দোষারোপ ও জনগণের সঙ্গে প্রতারণাই হলো আওয়ামী চরিত্রের ভূষণ। অবৈধ সরকার সন্ত্রাস চালিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করার মধ্য দিয়ে তা মেরামতের নামে দুর্নীতির রাস্তা প্রশস্ত করছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার এখন তাদের দ্বারা সংঘটিত সন্ত্রাস ধামাচাপা দিতে বিদেশিদের কাছে মায়াকান্না শুরু করেছে। সারা দেশে বিএনপিসহ বিরোধী দল ও সাধারণ মানুকে গ্রেফতার করা হচ্ছে, যাদের কেউই শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত নন। শুধু বিএনপি নয়, প্রতিবন্ধী শিশু, পথচারী এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিরীহ শিক্ষার্থীদের হত্যার দায় থেকে মুক্তি পেতে আওয়ামী সরকারের মন্ত্রী, নেতা ও প্রজাতন্ত্রের কিছু কর্মকর্তা মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক বক্তব্য দিচ্ছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভাবমূর্তি নষ্টের চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের যৌক্তিক আন্দোলনে দেড় শতাধিক ছাত্র-জনতাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার পর দোষীদের আইনের আওতায় না এনে নির্দোষ ব্যক্তিদের ওপর জুলুমের খক্ষ চালানো হচ্ছে। বিরোধী দলের নেতাকর্র্মী ও সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার, কারান্তরীণ ও হয়রানির ঘটনায় প্রতীয়মান হয়-আওয়ামী কর্তৃত্ববাদী সরকার এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বিএনপির অবস্থান নিয়ে ফখরুল বলেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যৌক্তিক। আমরা তাদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেছিলাম। হতাহতের ঘটনায় আমরা বায়তুল মোকাররমে গায়েবানা জানাজা করেছিলাম। সেখানেও সরকার আমাদের সঙ্গে বৈরী আচরণ করেছে। আমাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি, সংঘর্ষ হয়েছে। পরে প্রেস ক্লাবের সামনে আমাদের সমাবেশ ছিল, সেটিও সম্পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করে বন্ধ করে দিয়েছে। আন্দোলনে উপর থেকে হেলিকপ্টার দিয়ে সাউন্ড গ্রেনেড মেরেছে। এরপরেও আমাদের ছেলেরা সেখানে থাকার চেষ্টা করেছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিএনপির নামে নাশকতার যে অভিযোগ করেছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বিএনপি আন্দোলনে ছিল কিন্তু নাশকতায় মদদ দেয়নি। নাশকতায় মদদ দিচ্ছে তারা (সরকার)। বিএনপি নিজেদের ৪০ বছরের ইতিহাসে কখনও কোনো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা করেনি। আরেক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, কারফিউ জারির পরেও আন্দোলন শেষ হয়নি। আন্দোলন আরও বেগবান হবে। এবারের আন্দোলনে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। সরকারের তীব্র সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার দেশের মূল সমস্যা থেকে জনদৃষ্টি ভিন্ন দিকে ঘোরাতে পরিকল্পিতভাবে এসব করেছে। সরকার কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডার যারা রয়েছে তাদের সঙ্গে আলাপ করেনি। সরকার যদি স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলাপ করত তাহলে এসব পরিস্থিতি তৈরি হতো না। যে রায় সরকার আদালতের মাধ্যমে করিয়ে নিয়েছে, এটা আরও আগে আনতে পারত। রাজনৈতিক সমাধান ছাড়া এটার সমাধান হবে না।