Home সারাদেশ ৮ দিন ধরে ছাত্রলীগ নেতার পরীক্ষা দিচ্ছিলেন কাউন্সিলরপুত্র
জুলাai ২, ২০২৪

৮ দিন ধরে ছাত্রলীগ নেতার পরীক্ষা দিচ্ছিলেন কাউন্সিলরপুত্র

চুয়াডাঙ্গায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষায় ছাত্রলীগ নেতার হয়ে টানা ৮ দিন প্রক্সি দেওয়ার অপরাধে কাউন্সিলরপুত্রকে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

সোমবার (১ জুলাই) চুয়াডাঙ্গা সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজ কেন্দ্রে ওই পরীক্ষার্থীকে আটক করা হয়। নবমতম পরীক্ষার দিন জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ওই ভুয়া পরীক্ষার্থী কাউন্সিলরপুত্র ধরা পড়েন।

দণ্ডপ্রাপ্ত শামীম আহম্মেদ তুষার জীবননগর পৌর এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইসলামপুর গ্রামের মো. খোকনের ছেলে এবং যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজ কেন্দ্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলমান অনার্স চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা চলছে। এ কেন্দ্রে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। পরীক্ষায় অংশ নেন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও জীবননগর ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শহীদুজ্জামান। তার বাবা আবুল কাশেম জীবননগর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। তাঁর হয়ে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন শামীম আহম্মেদ তুষার।

কিন্তু তার পরিবর্তে আগের টানা আটটি পরীক্ষা দিয়েছেন শামীম আহম্মেদ তুষার। সোমবারও তিনি প্রক্সি দিতে আসেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পরীক্ষা চলাকালে হলে উপস্থিত হন জেলা কালেক্টরেটের সহকারী কমিশনার (শিক্ষা ও আইসিটি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুমাইয়া জাহান নাঈমা। সেখানে তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ভুয়া পরীক্ষার্থীকে এক বছরের কারাদণ্ড দেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও সহকারী কমিশনার সুমাইয়া জাহান নাঈমা বলেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় ভুয়া পরীক্ষার্থীকে জেল-জরিমানা করা হয়েছে। আর যিনি প্রকৃত পরীক্ষার্থী তাকেও শনাক্ত করা হয়েছে। তার ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে কলেজ কর্তৃপক্ষ।’

ম্যাজিস্ট্রেট নাঈমা বলেন, ওই পরীক্ষার্থী প্রথমে অস্বীকার করেন। কিন্তু বাবার মোবাইল নম্বর চাওয়া হলে তিনি আসল পরীক্ষার্থীর নম্বর দেন। সেই নম্বরে কথা বলে সন্দেহ আরও বাড়ে। তিনি যে ওই পরীক্ষার্থীর বাবা নন, সেটি কথা শুনেই মনে হচ্ছিল। এরপর আরও জিজ্ঞাসাবাদ করলে দুজনের কথার মিল ছিল না। পরে ভুয়া পরীক্ষার্থী স্বীকার করেন। তার কাছে একটি মোবাইল ফোনও পাওয়া যায়।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে পরীক্ষায় প্রক্সি দেওয়ার ব্যাপারটি ছড়িয়ে পড়লে ওই কলেজের পরীক্ষা সংক্রান্ত নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দাবি উঠেছে কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার।

চুয়াডাঙ্গা সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সহযোগী অধ্যাপক মামুন অর রশিদ বলেন, ‘অনার্স চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষায় ২১৫ নম্বর কক্ষে ইতিহাস বিভাগের শহীদুজ্জামান নামের এক পরীক্ষার্থীর হয়ে তুষার প্রক্সি দিচ্ছিলেন। এরই মধ্যে আমরা মূল পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছি এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কাগজপত্র পাঠিয়েছি।’

পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থী কীভাবে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ করল, এমন প্রশ্নের উত্তরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, ‘এসব কথা লেখার প্রয়োজন নেই’

চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এ ঘটনার আরও গভীর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।

জীবননগর পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মো. শহীদুজ্জামান বিপ্লবের বাবা আবুল কাশেম বলেন, ‘আমি অতো শিক্ষিত না। আমার ছেলে কী করেছে সেটা আমি জানতাম না। জানলে তো তাকে এই কাজ করতে দিতাম না।’

জীবননগর পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও তুষারের বাবা মো. খোকন এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *