Home রাজনীতি ঋণখেলাপি-অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান চালানোর দাবি সংসদে
জুন ১৩, ২০২৪

ঋণখেলাপি-অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান চালানোর দাবি সংসদে

বিরোধী দল জাতীয় পার্টির দুজন সংসদ সদস্য বলেছেন, বাংলাদেশ এখন কঠিন সংকটকাল পার করছে। এক দিনে এ সংকট হয়নি। এর অন্যতম কারণ লাগামহীন দুর্নীতি ও অর্থ পাচার। দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান ওই দুজন সংসদ সদস্য। তাঁদের একজন ঋণখেলাপি ও অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান চালানোর দাবিও জানান।

আজ বুধবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে ওই দুজন সংসদ সদস্য এ দাবি জানান।

ঋণখেলাপি ও অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান চালানোর দাবি জানান জাতীয় পার্টির সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সালমা ইসলাম। বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, করোনাকালে কঠিন সংকট প্রধানমন্ত্রী সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারলেও এখন তাঁকে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর জন্য দায়ী একশ্রেণির দুর্নীতিগ্রস্ত ও অর্থ পাচারকারী ব্যাংক লুটেরা। যাঁরা বিভিন্ন খাতে দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন। যদিও সরকার এখন এই রাঘববোয়ালদের শক্ত হাতে ধরা শুরু করেছে।

সালমা ইসলাম বলেন, মাঝেমধ্যে চুনোপুঁটিদের শাস্তি হলেও প্রভাবশালী খেলাপিরা আছেন বহাল তবিয়তে। বিশেষ করে প্রভাবশালীরা কখনো খেলাপি হন না। তাঁরা প্রভাব খাটিয়ে দফায় দফায় ঋণ পুনর্গঠন করে নেন। এ ছাড়া নামে-বেনামে কারা মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়ে কীভাবে কোন পদ্ধতিতে বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন, তা অনেকেই না জানলেও কিছু লোক তো জানেন। কয়েকটি ব্যাংকের একশ্রেণির পরিচালকেরা কীভাবে এসব ঋণের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন, সেটিও তদন্তের দাবি রাখে। এ জন্য ব্যাংকখেকোদের আগে শাস্তি দেওয়া না গেলে দেশ ঠিক হবে না।

জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘আমি বেশি শঙ্কিত বিদেশি ষড়যন্ত্র নিয়ে। নানা কারণে আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ায় ক্ষমতাধর বিদেশি মোড়লেরা যে যার স্বার্থে আমাদের টুঁটি চেপে ধরার চেষ্টা করছে।’

সালমা ইসলাম বলেন, সামনে তিস্তা প্রকল্প নিয়ে বেশ কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। অনেকের নজর এখন তিস্তার দিকে। কেউ চায় অস্ত্র বেচতে, কেউ চায় তিস্তা প্রকল্পের পুরো নিয়ন্ত্রণ, কেউ আবার বড় ঋণের ঝুলি নিয়ে বসে আছে। কিন্তু তারাও এবার নিজেদের স্বার্থ ষোলো আনা উশুল না করে ঋণ অনুমোদন করবে না। ওদিকে এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, ডলার–সংকটের কারণে অনেকগুলো বিদেশি পাওনা বা দায়দেনা পরিশোধ করা যাচ্ছে না। কারণ, দিতে গেলে ডলারের স্থিতি আরও নিচে নেমে আসবে। কিন্তু পাওনাদারেরাও বসে নেই। ঘন ঘন তাগাদা দিচ্ছে। এর মধ্যে তারা পাওনা ডলারের জন্য চার্টার্ড বিমানে ঘুরেও গেছে। ফলে পরিস্থিতি ভালো মনে হচ্ছে না। বর্গিরা সব চারদিকে ফনা তুলে ঘোরাফেরা করছে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য গোলাম কিবরিয়া বলেন, দুর্নীতি এত ব্যাপক হয়েছে যে অনেক অফিসে দুর্নীতির সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। দুর্নীতি বন্ধ করতে না পারলে উন্নয়নের ধারা ব্যাহত হবে। এখন আরেকটি সমস্যা কিশোর গ্যাং। এলাকায় এলাকায় তা মহামারির আকার ধারণ করেছে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অগ্রাধিকার

বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, কোভিড-১৯ ও ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্বে মূল্যস্ফীতির চরম অবস্থা তৈরি হয়। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার বিষয়টিকে বাজেটে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

বিরোধীদের সমালোচনার জবাবে তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, অনেকে সমালোচনা করে বলেন, ঋণ করে ঘি খাওয়ার মতো অবস্থা। ঋণ করার প্রথা বিশ্বজুড়েই আছে। তবে তা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হয়। বাংলাদেশে সেটা জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে আছে। এটা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড।

তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিরোধী দল বলছে, খেলাপি ঋণ ২০০৬ সালে ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা। এখন সেটা ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। এটি ঠিক। কিন্তু ২০০৬ সালে যে পরিমাণ ঋণ দেওয়া হয়েছিল, খেলাপি ছিল তার ১৩ শতাংশের বেশি। আর এখন তা ১১ শতাংশের নিচে। সুতরাং খেলাপি ঋণ কমেছে।

গাড়ি–সুবিধা চান দুই সংসদ সদস্য

সংসদ সদস্যদের জন্য শুল্কমুক্ত গাড়ি–সুবিধা দেওয়ার দাবি জানান সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য দ্রৌপদী দেবী আগারওয়ালা। তিনি বলেন, সংসদ সদস্যদের গাড়ি শুল্কমুক্ত ছিল। এবার শুল্ক ধরা হয়েছে। এটা যেন মওকুফ করা হয়।

সংসদ সদস্যদের জন্য সরকারিভাবে গাড়ি বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানান সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য ফরিদা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধি উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়ররা সরকারিভাবে গাড়ি বরাদ্দ পেয়ে থাকেন। অনেক সংসদ সদস্যের গাড়ি কেনার সামর্থ্য নেই। কিন্তু তাঁদের এলাকায় ঘুরে বেড়াতে হয়। এটা তাঁদের প্রয়োজন, বিলাসিতা নয়। সরকার থেকে গাড়ি বরাদ্দ করা হলে গাড়ি আমদানির প্রয়োজন হয় না।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *