মাতবরকে হত্যার আগপর্যন্ত বিয়ে না করার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন খুনি: পুলিশ
গ্রাম্য সালিসে জরিমানা ও মারধরের ঘটনার জের ধরে নওগাঁ সদর উপজেলার বিল ভবানীপুর গ্রামে মাতবর নাজিম উদ্দীন ফকিরকে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ বলছে, হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত সোজ্জাত আলী প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, নাজিম উদ্দীনকে হত্যা না করা পর্যন্ত তিনি বিয়ে করবেন না।
গ্রেপ্তার সোজ্জাত আলী (৩২) ও তাঁর সহযোগী মেহেদী হাসান (২৮) পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নাজিম উদ্দীনকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁদের দেখানো জায়গা থেকে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি ও হাতুড়ি উদ্ধার করেছে পুলিশ।
আজ বুধবার দুপুরে নওগাঁ সদর মডেল থানা চত্বরে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) গাজিউর রহমান। সোজ্জাত আলী সদর উপজেলার বিল ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা। মেহেদী হাসানের বাড়ি পোরশার রঘুনাথপুর গ্রামে।
গত সোমবার রাত ১১টার দিকে নওগাঁ সদর উপজেলার শিকার ইউনিয়নের বিল ভবানীপুর গ্রামে নিজ বাসভবনের সামনে ছুরিকাঘাতে নিহত হন নাজিম উদ্দীন। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সোজ্জাত ও মেহেদীকে আটক করে পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে এএসপি গাজিউর রহমান বলেন, তিন বছর আগে বিল ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা সোজ্জাত আলী স্থানীয় এক নাপিতকে মারধর করেন। ওই ঘটনায় নাজিম উদ্দীন ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যের নেতৃত্বে একটি সালিস হয়। সেখানে সোজ্জাতকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা ও মারধর করা হয়। এ ঘটনায় নাজিম উদ্দীনের ওপর ক্ষুব্ধ হন সোজ্জাত। এর প্রতিশোধ নিতে নাজিম উদ্দীনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি। ওই সময় নাজিম উদ্দীনকে হত্যা না করা পর্যন্ত বিয়ে করবেন না বলে প্রতিজ্ঞা করেন সোজ্জাত। এর মধ্যে ছয়-সাত মাস আগে পারিবারিক জমি–সংক্রান্ত বিষয়ে নাজিম উদ্দীনের সঙ্গে বিরোধ হয় সোজ্জাতের।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সোজ্জাত তাঁর বন্ধু মেহেদী হাসানকে সঙ্গে নিয়ে সোমবার রাত ১১টার দিকে বিল ভবানীপুর গ্রামে নিজ বাড়ির সামনে মাতবর নাজিম উদ্দীনকে হত্যা করেন। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গতকাল সন্ধ্যায় সোজ্জাত ও মেহেদীকে আটক করে পুলিশ। পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা নাজিম উদ্দীনকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। পরে তাঁদের দেখানো জায়গা থেকে এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও হাতুড়ি উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত রয়েছেন কি না, তা জানার জন্য আদালতের কাছে আসামিদের রিমান্ড চাওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফৌজিয়া রহমান, নওগাঁ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
নওগাঁ সদর থানার ওসি জাহিদুল হক বলেন, এ ঘটনায় গ্রেপ্তার সোজ্জাত ও মেহেদীর বিরুদ্ধে নওগাঁ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। আজ বিকেলে আসামিদের আদালতে নেওয়া হয়। পরে আদালতের নির্দেশে তাঁদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।