Home বানিজ্য প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমছে
জুন ২, ২০২৪

প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমছে

মালয়েশিয়ায় ৩১ হাজার বাংলাদেশি কর্মী যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ার মধ্য দিয়ে প্রবাসে শ্রমবাজার নিয়ে সরকারের গাফিলতি অনেকটা ফুটে উঠেছে।

এছাড়া বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক মন্থর গতি এবং নিম্ন বেকারত্বের হার রেমিট্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আসন্ন (২০২৪-২৫) বাজেটে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স আয়ের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমানোর দিকে হাঁটছে সরকার।

চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ শতাংশ কমিয়ে প্রবৃদ্ধির সম্ভাব্য হার ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। টাকার অঙ্কে ২ হাজার ২৫৪ কোটি (২২.৫৪ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে নতুন বাজেটে এ ঘোষণা থাকবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এটি নিশ্চিত করেছে।

অবশ্য সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদভুক্ত (জিসিসি) দেশগুলোয় দুর্বল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ ৫ শতাংশে নেমে আসতে পারে। যার প্রভাব পড়বে রেমিট্যান্স আয়ের ওপর।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, জনশক্তি রপ্তানি খাত দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। এ খাতকে স্বচ্ছতা, ভালো ব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতিমুক্ত করে শক্তিশালী করতে না পারলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে না।

সম্প্রতি প্রবাসী আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি বৈঠক করেছে। ওই বৈঠকে রেমিট্যান্স প্রণোদনা ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে প্রতি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্সের বিপরীতে ২ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থাৎ আড়াই টাকা দেওয়া হচ্ছে প্রণোদনা।

সূত্রমতে, প্রবাসীদের রেমিট্যান্স বাড়ানোর উদ্যোগ হিসাবে সম্প্রতি একাধিক বৈঠক করেছে অর্থ বিভাগ। ওই বৈঠকে চলতি অর্থবছরে এ খাতে প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ থেকে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশে উন্নীত করা হয়। আগামী বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশ ধরা হয়েছে।

এ খাতের প্রবৃদ্ধি পরবর্তী আরও দুই অর্থবছর (২০২৫-২৬ ও ২০২৬-২৭) একই ধরা হয়েছে, অর্থাৎ ৭ শতাংশের ঘরেই প্রবৃদ্ধি রাখা হয়। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি বাড়ানো হয়নি।

সম্প্রতি দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে অংশ নেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রুহুল আমিন।

সেখানে তিনি বলেছেন, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদেশে কর্মী গেছে ২৮ শতাংশের বেশি। অর্থাৎ, সংখ্যা হিসাবে ১ লাখ ৬০ হাজার। কিন্তু একই সময়ে কতজন ফেরত এসেছেন, সেটি ট্র্যাক করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে একটি পদ্ধতি প্রণয়ন করা হচ্ছে বলে তিনি অবহিত করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদেশে কর্মী পাঠানোর মূল প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে ভাষা। মূলত আরবি, কোরিয়ান, চাইনিজ, ইংরেজি ও জাপানিজ ভাষার ওপর কম দখল রয়েছে বাংলাদেশের কর্মীদের। এটি দূর করতে পারলে কর্মীর চাহিদা আরও বাড়বে, যা রেমিট্যান্সে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ এম কে মুজেরী যুগান্তরকে জানান, জনশক্তি রপ্তানিতে অনেক সমস্যা আছে। মালয়েশিয়ার মতো একটি বাজার নিয়ে কী হচ্ছে দেশে। এ খাতে দুর্বলতা আছে, সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। তিনি বলেন, বিগত কয়েক বছরে যে সংখ্যক কর্মী বিদেশে গেছেন, ওই পরিমাণে রেমিট্যান্স দেশে আসছে না।

হুন্ডি ছাড়াও আরও অনেক কারণ এখানে আছে। এ খাত দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। জনশক্তি রপ্তানি খাতকে স্বচ্ছতা, ভালো ব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতিমুক্ত করে এ খাত শক্তিশালী করতে না পারলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে না। যদিও রেমিট্যান্স বাড়ানো উচিত, এর সম্ভাবনা আছে। কিন্তু সেটি করতে সক্ষম হচ্ছি না।

বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যমতে, ২০২৩ সালে রেকর্ড ১৩ লাখ ৫ হাজার ৪৫৩ বাংলাদেশি জীবিকার সন্ধানে অভিবাসী হয়েছেন। আগের বছর অভিবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা ছিল ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৭৩।

অর্থাৎ দুই বছরে ২৪ লাখের বেশি বাংলাদেশি কাজের জন্য বিদেশে গেলেও রেমিট্যান্স সে অনুপাতে বাড়েনি। বিশেষ করে প্রধান শ্রমবাজার সৌদি আরবে রেকর্ড সংখ্যক শ্রমিক অভিবাসী হলেও দেশটি থেকে রেমিট্যান্সপ্রবাহ অর্ধেকে নেমে এসেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ছাড়া অন্য শ্রমবাজারগুলো থেকেও প্রবাসী আয় আসার প্রবাহ কমে যাচ্ছে।

বৈশ্বিক সংকটে বিশ্ব শ্রমবাজার কমার জন্যও দায়ী। চলমান সংকট ২০০৮ সালের যে অর্থনৈতিক সংকট ছিল, তা ওই সময়ের চেয়েও বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৯১১ কোটি বা ১৯ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে প্রবাসীরা ১৭ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছিলেন। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রেমিট্যান্সে ৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০২৪ সালে দেশে ২৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাবে বলে ধারণা করছে বিশ্বব্যাংক।

সূত্রমতে, হুন্ডির কারণে রেমিট্যান্স বাড়ানো যাচ্ছে না। রেমিট্যান্স আহরণে ব্যাংক যত বেশিই অফার করুক না কেন, হুন্ডিতে এর চেয়ে বেশি দর হাঁকানো হচ্ছে। নিত্যনতুন উপায়ে হুন্ডিচক্র তাদের জাল বিস্তার করছে। এদিকে ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা লোকজনও হুন্ডি ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব কারণে হুন্ডি থামানো যাচ্ছে না। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘হুন্ডি থামাতে প্রতিদিন অন্তত ২০০ হিসাব বন্ধ করা হচ্ছে।’

দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে-নির্ধারিত দরের পরও অনানুষ্ঠানিক যে দর ছিল, তা কমে যাওয়া বা বাড়তি প্রণোদনা দিতে ব্যাংকগুলোর অনাগ্রহ। এক ডলার রেমিট্যান্স পাঠালে সরকার ২ দশমিক ৫ শতাংশের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো একই হারে প্রণোদনা দিয়ে আসছিল। অর্থাৎ এক ডলারের বিপরীতে প্রণোদনা পাওয়া যেত ৫ শতাংশ। এখন ব্যাংকগুলো সে প্রণোদনার সুবিধা তুলে নিয়েছে। এটিও রেমিট্যান্স বৈধভাবে না পাঠানোর একটি কারণ হিসাবে দেখা হচ্ছে।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *