Home সারাদেশ ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে নলছিটিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, আহত-১।
Mei ২৯, ২০২৪

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে নলছিটিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, আহত-১।

বালী তাইফুর রহমান তূর্য, নলছিটি প্রতিনিধি:
ঝালকাঠির নলছিটিতে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সোমবার(২৭মে) সকালে উপজেলার নান্দিকাঠি এলাকায় দেলোয়ার কাজীর বসত ঘরের উপর গাছ উপড়ে পরে তার মেয়ে জামাই অপু হাওলাদার গুরুতর আহত হয়েছেন।
স্থানীয়রা জানায়,সোমবার ভোরে ঝড়ো বাতাসে তাদের বসত ঘড়ে বিশাল একটি চাম্বল গাছ উপড়ে পরে ঘরটি দুমড়েমুচড়ে যায়। এসময় ঘড়ে দেলোয়ার কাজী ও তার পরিবারের লোকজন ছিল। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করলে আহত অপু হাওলাদারকে বরিশাল শেবাচিমে পাঠানো হয়।
রবিবার(২৬মে) গুড়িগুড়ি বৃষ্টির সাথে হালকা বাতাস থাকলেও রাতের দিকে তা মুশলধারায় বৃষ্টি ও দমকা জড়ো হাওয়ায় রুপ নেয়। ফলে গাছপালা উপড়ে পরে বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় একই সাথে বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলো ভেঙে উপজেলা এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎবিছিন্ন রয়েছে। জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের অর্ধশতাদিক মাছের ঘের ও পারিবারিক পুকুর। রাজিব চৌধুরী নামের এক ঘের ব্যবসায়ী জানান, তার মাছের ঘের তলিয়ে প্রায় বিয় লাখ টাকার মাছ জোয়ারে ভেসে গেছে। এরকম আরও অনেক ঘের তলিয়ে মাছ ভেসে গেছে। ঘেরের উপর অতিরিক্ত জাল দিয়েও মাছ আটকিয়ে রাখা যায়নি কারণ পানির পরিমাণ ও স্রোত ছিল অত্যাধিক।
এছাড়া রেমালের প্রভাবে সোমবার(২৭মে) অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ মানুষজনের বসতঘর। পৌর এলাকার শেফালি বেগমসহ একাধিক বাসিন্দা জানান,সোমবার(২৭ মে) সকালে উঠে দেখি ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে খাটের কাছাকাছি চলে আসছে তখন উপায় না পেয়ে ঘড়ে যা ছিল খাটের উপরে উঠাইছি। তিনি আরও বলেন সারারাত জোকের আতংকে ছিলাম পানির সাথে অনেক জোক ছিল। রাতে পাশ্ববর্তী এক প্রতিবেশীর পাকা ঘরে আশ্রয় নিয়েছি।
নলছিটির সুগন্দা নদীর সংলগ্ন উপজেলার ব্যবসায়ীদের প্রানকেন্দ্র স্টেশন রোড চার ফুট পানিতে প্লাবিত হয়। এতে সড়কের পাশে অবস্থিত বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। সকাল ৫ টা ও বিকেল ৪ টার দিকে জোয়ারের পানি উঠে তাদের অনেক টাকার মালামালের নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক।
ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান জানান, খুব ভোরে একজন ফোন দিয়ে জানায় যে দোকান এলাকায় অনেক পানি উঠেছে। এসে দেখি দোকানের ভিতর তিন চার ফুট পানি। এতে আমার ব্রয়লার মুরগির খাবারের বস্তা, চালের বস্তা,চিনির বস্তা ও মশলা পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। সামনে কুরবানির বাজার তাই মালের পরিমান বেশি ছিল। তিনি আরও বলেন আমার প্রায় ৫/৬ লাখ টাকার মালামাল নষ্ট হয়েছে।
একই সড়কে অবস্থিত জলিল স্টোরের স্বত্বাধিকারীরা জানান,এই সড়কে বেশিরভাগ দোকানেই পাইকারি মালামাল বিক্রি করা হয়। সামনে কুরবানির বাজার তাই সব দোকানেই প্রচুর পরিমানে মালামাল ছিল। আমার চাল,চিনি,আটার অনেক গুলো বস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে এতে আমার প্রায় ৪/৫লাখ টাকার মালামাল নষ্ট হয়েছে। নষ্ট হয়েছে একই সড়কে অবস্থিত মেসার্স হাজি এ রহমান ট্রেডার্সের টিএসপি ও ইউরিয়া সারের বস্তা। স্বত্বাধিকারীরা হাজী এ রহমান জানিয়েছেন বিভিন্ন ধরনের ১০০ বস্তা সার ও কীটনাশক পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে। এছাড়া আরও বেশ কিছু পাইকারি ও খুচড়া দোকানে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়ে তাদের মালমাল নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
চাল ব্যবসায়ী শাহাদৎ ফকির জানান,আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও চালের গোডাউন তলিয়ে প্রায় দুইশত বস্তা চাল পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। এটা আমার জন্য একটা বিরাট ক্ষতি।
নলছিটি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ ওজোপাডিকোর কর্মকর্তা সোহেল রানা জানিয়েছেন,ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে আগেই সর্তকতামূলকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। রেমালের কারণে ঝড়ো হাওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুৎ এর খুটি ভেঙে গেছে। এছাড়া অনেক জায়গায় গাছ পরে বিদ্যুৎ লাইন ছিড়ে গেছে। আমাদের লোকজন কাজ শুরু করে দিয়েছে। কত ঘন্টা পরে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) জানিয়েছেন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত যা খবর পেয়েছি তাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক। আপাতত বিভিন্ন সড়কের গাছ সড়িয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। এছাড়া উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন বিভাগ ক্ষতি নিরুপনের কাজ করে যাচ্ছে।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *