Home জাতীয় সাগরে চোখ রাঙাচ্ছে ঘূর্ণাবর্ত, রোববার আঘাতের শঙ্কা
Mei ২৩, ২০২৪

সাগরে চোখ রাঙাচ্ছে ঘূর্ণাবর্ত, রোববার আঘাতের শঙ্কা

তাপদগ্ধ জ্যৈষ্ঠের প্রথম পক্ষে এসে প্রবল গতিতে ধেয়ে আসছে মৌসুমের প্রথম ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’। উত্তাল হচ্ছে সাগর। গত বছরের ডিসেম্বর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় ছিল মিগযাউম। অতঃপর পাঁচ মাস সাগর ছিল নিরুত্তাল। পুনরায় চোখ রাঙাচ্ছে বড় ঘূর্ণাবর্ত।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, দক্ষিণ মধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়টি আগামীকাল শুক্রবারের পর তার গতিপথ চূড়ান্ত করতে পারে। এটি বাংলাদেশের খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলোতে প্রচণ্ড গতিতে আঘাত হানতে পারে বলে এখনই ধারণা করা হচ্ছে। এ সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার; যা দমকা হাওয়াসহ ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। ঘূর্ণিঝড়টি যদি জোয়ারের সময় উপকূলে আঘাত হানা শুরু করে, তবে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় এলাকাগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ১০ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা করা যাচ্ছে।

আবহাওয়া বিশ্লেষকরা বলছেন, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া লঘুচাপটি ধীরে ধীরে উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের দিকে সরে আসছে। শক্তি বাড়িয়ে এটি কাল শুক্রবার শেষ রাতের দিকে নিম্নচাপ এবং শনিবার এটি উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে এসে পৌঁছাবে। সেদিনই প্রবল সাইক্লোনে রূপ পরিগ্রহ করতে পারে। এর ব্যাপ্তি এবং স্থায়িত্ব অন্যান্য ঘূর্ণিঝড়ের থেকে প্রবল হতে পারে। গতকাল রাত ১০টায় লঘুচাপ কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৩৫ থেকে ৪৫ কিলোমিটার, যা ৫৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। আজ বৃহস্পতিবার  গতিবেগ ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তার পরদিন এটির গতি বাড়তে পারে ৭০ কিলোমিটারে। তবে লঘুচাপটি এখনো বাংলাদেশের উপকূল থেকে অনেক দূরে এবং তামিলনাড়ু ও অন্ধ্র উপকূলের কাছাকাছি থাকায় দেশের মাছ ধরা ট্রলার ও নৌকাগুলোর জন্য কোনো সতর্কতা নেই।

এদিকে জাপানের কৃত্রিম ভূউপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত চিত্র থেকে মেঘের শীর্ষের তাপমাত্রা ও মেঘের গঠন বিশ্লেষণ করে কানাডার সাসকোচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ? বলেন, গতকাল বুধবার সকাল ৯টার পর দক্ষিণ মধ্য বঙ্গোপসাগরে ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে (ব্লেয়ার বন্দরের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে) একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ ২৬ মে সকাল ৬টার পর থেকে রাত ১২টার মধ্যে বরিশাল বিভাগের বরগুনা জেলা থেকে শুরু করে; চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলার মধ্যবর্তী উপকূলীয় এলাকার ওপর দিয়ে স্থলভাগে আঘাত করতে পারে। তিনি আরো বলেন, ঘূর্ণিঝড় বৃত্তের অগ্রবর্তী অংশ উপকূলীয় এলাকায় প্রবেশ করতে পারে সকাল ৬টার পর থেকে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র উপকূল অতিক্রম করার সম্ভাব্য সময় ২৬ মে দুপুর ১২টার পর থেকে বিকাল ৬টার মধ্যে। ঘূর্ণিঝড় বৃত্তের পেছন দিকের অর্ধেক অংশ পুরোপুরি স্থলভাগে প্রবেশ করতে রাত ১২টা পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়টি যদি জোয়ারের সময় উপকূলে আঘাত হানা শুরু করে, তবে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় এলাকাগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ১০ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা করা যাচ্ছে। বাংলাদেশের খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলোর উপকূলে আঘাতের সময় ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার; যা দমকা হাওয়াসহ ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে।

ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর মিডিয়াম রেঞ্জ ওয়েদার ফোরকাস্ট (ইসিএমডব্লিউএফ) জানিয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার বা শুক্রবারের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণে সুন্দরবনের কাছে ২৬ থেকে ২৭ মে আঘাত হানতে পারে। আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। লঘুচাপটি আগামীকাল শুক্র বা শনিবার নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। পরে এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। ভারতের আবহাওয়া বিজ্ঞানী এম শর্মা জানিয়েছেন, শনিবার ঘূর্ণিঝড় রিমালে পরিণত হতে পারে। লঘুচাপটির সর্বোচ্চ শক্তি সঞ্চয় করার সম্ভাবনা রয়েছে। কোনো কোনো মডেল বলছে, এটির গতিপথ হতে পারে বাংলাদেশ-মিয়ানমার উপকূলের দিকে। আবার কোনো কোনো মডেল বলছে, পশ্চিমবঙ্গে এটি আছড়ে পড়তে পারে। উপকূলে আসতে আঘাত করবে আগামী ২৬ মের দিকে। সহকারী আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, লঘুচাপটি আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে নিম্নচাপে পরিণত হবে। শনিবার থেকে দেশের প্রায় সব জায়গায় কম-বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।’ আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, বর্তমান যে প্রেডিকশন, তাতে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ, মিয়ানমার বা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা এই অঞ্চলের দিকেই এর গতিপথ। তবে এর গতিপথ ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তিত হচ্ছে। আজ বা কাল শুক্রবারের মধ্যে লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। পরে ২৪ মে রাতে বা ২৫ মে সকালের দিকে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত এটার গতিপথ পরিবর্তিত হচ্ছে, রাতে একটা গতিপথ থাকছে, আবার সকালে আরেকটা হচ্ছে; অর্থাত যতক্ষণ পর্যন্ত না নিম্নচাপে রূপ নেয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তার আগের সব গতিপথ পরিবর্তিত হবে। যখন নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে, তখন গতিপথ স্থির হবে। তখন স্পষ্টভাবে বলা যাবে, এটা কোন এলাকায় বা স্থানে আঘাত হানতে পারে।

‘রেমাল’ অর্থ কী

আরবসাগর ও বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয় বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সাইক্লোনসংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপ। এ অঞ্চলের ১৩টি দেশের দেওয়া নামের তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে নতুন ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করা হয়। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) অধীন জাতিসংঘের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগরতীরের এই ১৩টি দেশ হলো—বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভারত, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ওমান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, সৌদি আরব ও ইয়েমেন। নামের ক্রম অনুযায়ী এবার বঙ্গোপসাগরে কোনো ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে তার নাম হবে ‘রেমাল’। ‘রেমাল’ নামটি ওমানের দেওয়া। রেমাল শব্দটি আরবি, যার অর্থ ‘বালি বা বালুকণা’।

সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় মিগযাউম

এদিকে সর্বশেষ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় মিগযাউম, যা পরে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ দিয়ে উপকূল অতিক্রম করে। সে ঝড়ের তেমন কোনো প্রভাব বাংলাদেশে পড়েনি। ২০২০ সালের ২০ মে দেশের উপকূলে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। বেশ বিধ্বংসী ছিল ঘূর্ণিঝড়টি। তবে সুন্দরবনের কারণে সে যাত্রায় বহুলাংশে রক্ষা পেয়েছিল দেশের উপকূল। এর আগে ২০০৯ সালে এই মে মাসেই ২৫ তারিখে সুন্দরবনে আঘাত হেনেছিল প্রলয়ংকরী আইলা।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *