শিল্পোৎপাদনে প্রবৃদ্ধি কমেছে
চলতি অর্থবছরে মূলধনি যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটল মেশিনারি), কাঁচামাল এবং শিল্পের মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ায়, এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে দেশের শিল্পোৎপাদন এবং কর্মসংস্থানের ওপর।
সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, চলতি (২০২৩-২০২৪) অর্থবছরে দেশের ফ্যাক্টরি আউটপুট বা শিল্পোৎপাদনের প্রবৃদ্ধি মাত্র ৬.৬৬ শতাংশে নেমে এসেছে যা গত বছর ছিল ৮.৩৭ শতাংশ। এর আগের দুই অর্থবছরে শিল্পোৎপাদনে প্রবৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ৯.৮৬ শতাংশ এবং ১০.২৯ শতাংশ। সে বিবেচনায় চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধিতে পতন দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত আমদানি ব্যয়-সংক্রান্ত সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ সময়ে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় সামগ্রিকভাবে আমদানি কমেছে ১৫.৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৪ হাজার ৯২১ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫ হাজার ৮২৭ কোটি ডলার।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিশ্ববাজারে বেশির ভাগ পণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নানা কারণে আমদানিতে অর্থায়ন করতে পারছে না। প্রধানত, ডলার সংকট; এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখার চাপ রয়েছে। রয়েছে বকেয়া পরিশোধের চাপও। যার ফলে আমদানি কমেছে। এতে উৎপাদনও কমেছে। বিনিয়োগ বাড়ছে না। সামগ্রিকভাবে প্রবৃদ্ধি কমে যাবে।
তারা বলেন, আমদানি কমা সত্ত্বেও রিজার্ভ ধরে রাখা যাচ্ছে না। এর একমাত্র সমাধান হতে পারে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়ানো। সেজন্য রপ্তানি, রেমিট্যান্স, বাজেট সহায়তা বাড়াতে হবে। আর্থিক হিসাব ইতিবাচক করতে হবে। এর জন্য ডলার-টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল হওয়া জরুরি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, শিল্পের মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি কমেছে ১৪.২ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ২৯৬.৬২ কোটি ডলারের মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি হয়েছে। আগের অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ সময়ে আমদানি করা হয়েছিল ৩৪৫.৫৭ কোটি ডলার মূল্যের মধ্যবর্তী পণ্য। এ ধরনের পণ্য সাধারণত শিল্পের ফিনিশড প্রডাক্ট (সবশেষ পণ্য) উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।
এর বাইরে অন্যান্য মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি কমেছে ২০.২ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ৭১.৫ কোটি ডলারের ক্লিংকার আমদানি হয়েছে। যেটি আগের অর্থবছরের একই সময়ে হয়েছিল ৯২.৭০ কোটি ডলারের। একইভাবে, তেলবীজ ১০.১ শতাংশ, কেমিক্যাল পণ্য ৭.২ শতাংশ, সার ৪৭.৪ শতাংশ, প্লাস্টিক ও রাবার পণ্য ১৩.৮ শতাংশ এবং লোহা, ইস্পাত ও বেস ধাতু আমদানি কমেছে ৮.৭ শতাংশ। এই ৯ মাসে দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক সম্পর্কিত পণ্যের আমদানি কমেছে ৯.১ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ১ হাজার ২১৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক সম্পর্কিত পণ্যের আমদানি কমেছে। আগের অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে এ খাতে ১ হাজার ৩৩৯ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল।
এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৪.৯ শতাংশ আমদানি কমেছে কাঁচা তুলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ২৫৮ কোটি ডলারের কাঁচা তুলা আমদানি হয়েছে যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে হয়েছিল ৩৪৩ কোটি ডলারের।
এছাড়া সুতা আমদানি ১০.২ শতাংশ, টেক্সটাইল এবং এর সামগ্রী ৮.২ শতাংশ, ফাইবার ৬.১ শতাংশ এবং ডাইয়িং ও ট্যানিং সামগ্রীর আমদানি ৩.১ শতাংশ কমেছে।
মূলধনি পণ্য আমদানি পরিস্থিতিও খুব ভালো নয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় মূলধনি পণ্য আমদানি কমেছে ২২.৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ সময়ে ৮০৬ কোটি ডলারের মূলধনি পণ্য আমদানি হয়েছে যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১ হাজার ৪০ কোটি ডলার।
এরমধ্যে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ২৩.৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি হয়েছে ২৮৪ কোটি ডলার মূল্যের যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩৭৩ কোটি ডলারের। এছাড়া, অন্যান্য মূলধনি পণ্য আমদানি কমেছে ২১.৮ শতাংশ।
বিবিএস প্রকাশিত ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ সময়ের শ্রম শক্তি জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বেকার লোকের সংখ্যা ২৫ লাখ ৯০ হাজার জন; গত ডিসেম্বরে যা ছিল ২৪ লাখ ৭০ হাজার জন।