Home সারাদেশ শওকত হোসেন হিরন,জুলফিকার আলী ভূট্টো মৃত্যুর যুগ যুগ পরেও যেই নেতাদের অন্তরে বাচিয়ে রেখেছেন সাধারণ মানুষ। 
Mei ১৪, ২০২৪

শওকত হোসেন হিরন,জুলফিকার আলী ভূট্টো মৃত্যুর যুগ যুগ পরেও যেই নেতাদের অন্তরে বাচিয়ে রেখেছেন সাধারণ মানুষ। 

তাইফুর রহমান,সমাজকর্মী ও লেখক (ঝালকাঠি)।
জীবনানন্দ দাসের অমর কবিতার একটি লাইন ছিলো,আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে-এই বাংলায়। হয়তোবা শঙ্খচীল শালিকের বেশে।
ভুট্টোর নিতী,আদর্শ,দর্শন নিয়ে হয়তো কোনোদিন ফিরবে ফের কেউ সেই শঙ্খখচীল বা শালিক হয়ে।
মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে বয়সের মধ্যে নয়। অথবা কীর্তিমানের মৃত্যু নাই।বইতে এই কথাগুলি এজন্যই শিক্ষা দেয়া হয় যাতে করে শিক্ষার্থীরা সৎকর্মশীল হয়।
পৃথিবীর সূচনা হাজার কোটি বছর আগে এরমধ্যে অগণিত মানুষ পৃথিবীতে এসেছেন চলেও গেছেন।সবাইকে ইতিহাস মনে রাখেনি, আবার সবাইকে ভুলেও যায়নি। কীর্তিমান বিখ্যাত অথবা কুখ্যাত হয়েও অসংখ্য মানুষ মৃত্যুর পরেও ইতিহাসের পাতায় বেঁচে আছেন হাজার বছর। তাদের দেহ নিঃশেষ হয়ে গেলেও তাদের কর্ম তাদেরকে বাঁচিয়ে রেখেছে মানুষের অন্তরে।কাউকে ভালোবেসে কাউকে ঘৃণা করেও মানুষ অন্তরে বাচিয়ে রেখেছে যুগ যুগ।
এমনই রাজনৈতিক নেতা ছিলেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরন ও ঝালকাঠি-২(নলছিটি, ঝালকাঠি) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, নলছিটি উপজেলার কৃতি সন্তান জুলফিকার আলী ভুট্টো। মৃত্যুর পরে প্রায় যুগ পেরিয়ে গেলেও এই দুই নেতাকে এখনো বুকের মধ্যে তরতাজা করে রেখেছেন সেই এলাকার সাধারণ মানুষ। এখনো স্বরন করার সাথে সাথেই তাদের চোখ ছলছল করে।অথচ এত মানুষের সবাইই তাদের একান্ত কাছের ছিলেন না,কিন্তু সকলেই তাদের প্রান উজাড় করে ভালোবাসেন।এখনো আশায় বুক বাধেন,এই বুঝি হিরন এলো,এই বুঝি ভূট্টো এলো।
তাদের প্রতি মানুষের এই ভালোবাসার মূল কারন ছিলো তাদের সাধারণ চলাফেরা, সুন্দর ব্যবহার, এবং ব্যাপক উন্নয়ন।
জুলফিকার আলী ভুট্টো ঝালকাঠি জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি ১৯৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝালকাঠি-২ আসন থেকে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।মৃত্যুর ২৪ বছর পরেও তার এলাকার মানুষ এমন ভাবে তাকে স্মরণ করে মনে হয় না এই নেতার মৃত্যুর দুই যুগ পার হয়ে গেছে। এখনো মানুষ এই অঞ্চলের উন্নয়ন কিংবা জনদরদি নেতাদের নাম বলতে গেলে তার নাম দিয়েই শুরু করে। তাদের কাছে এখনো একটি আশা কিংবা স্বপ্নের মত বলতে আশা করেন জুলফিকার আলী ভুট্টা হয়তো ফিরবেন জীবনানন্দ দাশের কবিতার মত আবার আসিবে ফিরে ধানসিড়িটির তীরে হয়তোবা শঙ্খচিল বা শালিকের বেশে।নলছিটির মানুষের অন্তরে গেঁথে থাকা তেমনি এক নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো।
 হয়তোবা আবার নতুন কোন নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর জনতাকে ভালোবাসার রাজনীতি এবং আদর্শ নিয়ে, তার উন্নয়নের দর্শন নিয়ে ফিরবেন জনতার মাঝে এমনটাই তাদের স্বপ্ন।সাধারণ মানুষের সাথে এক কাতারে মিলে যাওয়ার তার সেই স্মৃতিকে সবাই এখনো তাজা করে রেখেছেন।ভূট্ট তার জীবদ্দশায় খুব সাধারণ জীবনযাপন করতেন,সাধারণ মানুষের ঘরে ঢুকে কি রান্না হয়েছে সেই হাড়ির খবর রাখতেন।এমনকি নিজেই তরকারির পাতিল খুলে একটু চেখে দেখতেন,কেউ মরিচ পোড়া আর আলুভর্তা দিয়ে ভাত খাচ্ছে দেখলে তার সাথে বসেই খাওয়া শুরু করতেন।তার এই অতি সাধারণ নিরহংকারী জীবন মানুষের অন্তরে আজও বাচিয়ে রেখেছে, তার স্মৃতিতে অনেক বৃদ্ধ গরীবদেরকে দেখেছি যাদেরকে জুলফিকার আলি ভূট্টোর স্মৃতি অশ্রুশিক্ত করে।
জুলফিকার আলী ভূট্টো ১৯৫৪ সালের ১ জুলাই ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার তৎকালীন সুবিদপুর ইউনিয়নের (বর্তমান মোল্লারহাট ইউনিয়ন) কাটাখালী গ্রামে সমভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের মোল্লা বংশে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম ছিল আলহাজ্ব আব্দুল মালেক মোল্লা এবং মাতার নাম মোসাঃ রাহিলা বেগম। তিনি ৭ ভাই বোনের মধ্য চতুর্থ ছেলে। ছোট বেলা থেকেই বাবা-মা সহ সবাই আদর করে ভূট্টো বলে ডাকতেন।
১৯৭০সালে সুবিদপুর বিজি ইউনিয়ন একাডেমী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি. ঢাকা কবি নজরুল সরকারী কলেজ থেকে এইচ.এস.সি ও স্নাতক পাশ করেন। ওই কলেজে পড়াশুনা অবস্থায় ছাত্র রাজনিতিতে যোগ দেন তিনি। পরে ১৯৭২ সনে ওই কলেজের ভিপি নির্বাচিত হন।
পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাবল এম এ পাশ করেন। সেখানেও মিজান গ্রুপ থেকে ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন ভূট্টো।
ছাত্র রাজনীতিতে তৎকালীন ১০ দলীয় নেৃত্বধীন হরতালের ডাক দেওয়ায় তিনি সহ ৩৬ জন ছাত্র পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন।
ভুট্টোর সক্রিয় রাজনীতি ও তার জনপ্রিয়তা দেখে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ তাকে খবর দিয়ে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন দিয়ে তার নিজ নির্বাচনী এলাকা ঝালকাঠি-২ (ঝালকাঠি-নলছিটি) থেকে প্রতিনিধিত্ব করতে বলেন।
তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রী ইসরাত সুলতানা ইলেন ভূট্টো ও তার জনপ্রিয়তায় বিএনপি থেকে একই আসন থেকেই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
জুলফিকার আলী ভূট্টো নির্বাচিত হয়ে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছিলেন। কালের সাক্ষী হিসাবে রেখে গেছেন শুধু স্মৃতি তার নামে প্রতিষ্ঠিত অসংখ্য স্কুল,কলেজ,ও মাদ্রাসা গুলো। ২০০০ সনের ২৯শে মে ঢাকায় জাতীয় হৃদরোগ ইনিস্টিটিউটে এই মহান নেতা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরন করেন। তার
গ্রামের বাড়ি নলছিটি উপজেলার মোল্লারহাট বাজারের কলেজ সংগগ্নে এই জনপ্রিয় নেতাকে সমাহিত করা হয়েছে।আর শওকত হোসেন হিরন মারা যান ২০১৪ সালের ২৯ মে।যাদের মৃত্যুতে সাধারণ মানুষের চোখের অশ্রুই প্রমান করেছিলো কর্মই মানুষকে বাচিয়ে রাখে হাজার বছর ধরে।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *