Home সারাদেশ একতরফা ভোটেও গোলাগুলী সংঘর্ষ ও সহিংসতা
Mei ৯, ২০২৪

একতরফা ভোটেও গোলাগুলী সংঘর্ষ ও সহিংসতা

দেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দলগুলোর বর্জনের মধ্য দিয়ে একতরফাভাবে গতকাল বুধবার ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১৩৯টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। বিরোধী দলের প্রার্থী না থাকলেও সরকারদলীয় একাধিক প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে বিভিন্নস্থানে সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। কেন্দ্র দখলের চেষ্টা, জাল ভোট ও প্রিজাইডিং অফিসারদের অনিয়মের ঘটনাও ঘটেছে। গতকাল বুধবার সকাল ৮টায় শুরু হয়ে ভোটগ্রহণ চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। অনিয়মের কারণে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা এবং প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আটকসহ নানা ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন স্থানে।

গতকালের ভোটে ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছেন, ভোটারা ধান কাটতে থাকায় ভোটকেন্দ্রে আসেননি। ভোটার বেশি আসলে নির্বাচন আরও বেশি ভালো হতো। তবে ভোট অবাধ, নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। তিনি মনে করেন ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে। এর আগে দুপুরে নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানিয়েছেন, দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ভোট পড়েছে।

বিভিন্নস্থান থেকে সংবাদদাতাদের পাঠানো সংবাদ থেকে জানা গেছে, নির্বাচন চলাকালে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়েছে। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী আমিরুল ইসলাম (আনারস) ও মনসুর আহমেদ খান জিন্নাহর (কাপ পিরিচ) সর্মথকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছয় রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ।

টাঙ্গাইলে মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও প্রার্থীদের মধ্যে কোন্দল দেখা দেয়। মধুপুর উপজেলার গাংগাইর আহম্মদ আলী মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়সহ কয়েকটি কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এ দুই উপজেলায় আতঙ্ক ও বৃষ্টির কারণে কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি অনেক কম ছিল।

সুনামগঞ্জের শাল্লার চব্বিশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে ঘোড়া ও আনারস প্রতীকের দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সর্মথকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ১০ জন আহত হন। এর আগে সোমবার (৭ মে) রাত ২টার দিকে একই কেন্দ্রের সামনে থেকে অন্য কেন্দ্রের সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ চারজনকে আটক করে পুলিশ।

এছাড়া নির্বাচন চলাকালে পুলিশ ও সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটে। সাংবাদিক মারধরের ঘটনা ঘটেছে সিলেটের সদর উপজেলায়। সদরের ঘোপাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জাল ভোট দিতে গিয়ে এক যুবক আটক হলে তাকে ছাড়িয়ে নিতে না পেরে ছবি তুলতে যাওয়া সাংবাদিকের ওপর চড়াও হন কাপ পিরিচ প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকরা।

ভোটে অনিয়মের অভিযোগে বগুড়ার সোনারায় উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের দুই সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এছাড়া কুসুমকলি কেন্দ্র থেকে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ দুজন আটক হন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের জাল ভোট দিতে না দেওয়ায় পোলিং অফিসারকে মারধর করার অভিযোগ ওঠে। বেলা ১১টায় উপজেলার রতনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।

কক্সবাজার সদর উপজেলায় চৌপল্ডী দক্ষিণ রাখাইন পাড়া সরকারি প্রথামিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী নুরুল আবছারের পক্ষে মাসুদ পারভেজ নামের এক এজেন্টকে প্রকাশ্যে টাকা বিতরণকালে আটক করা হয়।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় নির্বাচন চলাকালীন একটি ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দায়ে মীর রেজাউল ইসলাম বাবু নামে এক কাউন্সিলর প্রার্থীকে আটক করে বিজিবি।

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ নূর উদ্দিন নামের এক সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার মৃত্যু হয়েছে।

জয়পুরহাট ও দিনাজপুরের ৩ উপজেলায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে কম ভোটার উপস্থিতি নিয়ে ভোটগ্রহণ শেষ হয়। খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করায় সাময়িক সময়ের জন্য ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।

বগুড়ার গাবতলী উপজেলায় বাইরে ব্যালট পেপার সরবরাহ করার অভিযোগে এক প্রিসাইডিং অফিসার ও এজেন্টকে আটক করেছে পুলিশ। বুধবার উপজেলার রামেশ্বরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান গাবতলী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত জাহান বন্যা।

আটককৃতরা হলেন- ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা শাহজাহান হোসেন এবং আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জেলা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফি নেওয়াজ খান রবির পোলিং এজেন্ট ইমদাদুল হক।

এ বিষয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন চন্দ্র বলেন, প্রিসাইডিং অফিসার শাহজাহান ও আনারস প্রতীকের এজেন্ট ইমদাদুল মিলে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ৩০০, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর ৩০০ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর ৩০০ ব্যালট পেপার নিয়ে বাইরে আসেন এবং সিল মারেন। খবর পেয়ে ৫৯৯টি সিল মারা ব্যালট পেপার, ৯০০টি ব্যালটের মুরি এবং ৫০ হাজার টাকাসহ তাদের আটক করা হয়।

মাদারীপুর সদর উপজেলায় দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। বুধবার সকাল ১১টার দিকে সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের বালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় কমপক্ষে ১০টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এতে ভোটারদের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বেলা ১১টার দিকে ৯৫ নম্বর বালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের দখল নিতে আসেন আনারস প্রতীকের প্রার্থী আসিবুর রহমান খানের অনুসারী এনামুল হাওলাদার ও তার লোকজন। এ সময় মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী পাভেলুর রহমান খানের অনুসারী আজাদ হাওলাদার তাদের বাঁধা দিতে গেলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। উভয় পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় কমপক্ষে ১০টি ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়। মুহূর্তের মধ্যে চারিদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এতে একজন সাধারণ ভোটারসহ আহত হন উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন।

প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলার মধ্যে ২২টিতে ইভিএম ও বাকিগুলোতে ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ হয়েছে।

এই ধাপে মোট ১ হাজার ৬৩৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৫৭০, ভাইস চেয়ারম্যান ৬২৫ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৪০ জন প্রার্থী রয়েছেন।

এর মধ্যে বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন, ৫ উপজেলার ৮ জন চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ জন করে মোট ২৮ জন প্রার্থী। উপজেলাগুলো হলো নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলা, মুন্সীগঞ্জ জেলার সদর উপজেলা, বাগেরহাট জেলার সদর উপজেলা, ফেনী জেলার পরশুরাম উপজেলা ও মাদারীপুর জেলার শিবচর।

যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান থাকায় পার্বত্য জেলা বান্দরবানে তিনটি উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত করেছে ইসি।

দেশের ৪৯৫টি উপজেলার মধ্যে চার ধাপে ৪৭৬টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে কিছু উপজেলায় মামলা জটিলতা ও বৈধ প্রার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। বাকি ১৯টি উপজেলা পরিষদে নির্বাচনের সময় হয়নি, পরবর্তীতে সেসব পরিষদে ভোটগ্রহণ হবে।

ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপে ১৬০ উপজেলায় ২১ মে, তৃতীয় ধাপে ১১২ উপজেলায় ২৯ মে এবং চতুর্থ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ৫ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

প্রথম ধাপে ২২টি, দ্বিতীয় ধাপে ২৪টি, তৃতীয় ধাপে ২১ ও চতুর্থ ধাপে দুটি উপজেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেওয়া হবে।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *