Home জাতীয় ড. ইউনূসসহ ১৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানি আজ
Mei ২, ২০২৪

ড. ইউনূসসহ ১৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানি আজ

গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের প্রায় ২৫ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস ১৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের উপর আজ বৃহস্পতিবার শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এ এই শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে শুনানি উপলক্ষে আজ সকাল ১০ টায় ওই আদালতে হাজির হবেন গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. ইউনূসসহ ১৪ আসামি। এর মধ্যে গ্রামীন টেলিকমের সাত পরিচালকও রয়েছেন। ১৪ আসামির সকলেই আদালতে হাজির হয়ে অভিযোগ গঠন থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন দাখিল করবেন। পাশাপাশি জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করবেন তারা।

অভিযোগ গঠন শুনানির নির্দেশ দেওয়া ঠিক হয়নি: ব্যারিস্টার মামুন
এদিকে ড. ইউনূসের কৌসুলি ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন ইত্তেফাককে বলেন, ড. ইউনূসসহ গ্রামীণ টেলিকমের ৮ জন পরিচালকের বিরুদ্ধে দুদকের করা এই মামলা ঢাকার ৪র্থ বিশেষ জজ আদালতে বিচারের জন্য বদলি করা হয়। কিন্তু মামলাটি প্রথমে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে বিচারাধীন ছিলো। কিন্তু ওই আদালত মামলাটি বিশেষ জজ আদালত-৪ এ বদলির আদেশ দিয়েছেন। বদলির আদেশের পাশাপাশি এই আদালতকে অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আমি মনে করি এই নির্দেশ দেওয়াটা ঠিক হয়নি। কারণ দুটি আদালতেরই বিচারের এখতিয়ার সমান। অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য নির্দেশ দেওয়াটা আইনসঙ্গত হয়নি।

ব্যারিস্টার মামুন বলেন, আজ সকাল ১০ টায় এই আদালতে হাজির হবেন ড. ইউনূসসহ গ্রামীন টেলিকমের আট পরিচালক। এদিন জামিন প্রার্থনা ও অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করেছে আদালত।

প্রসঙ্গত: গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের প্রায় ২৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিটের অনুমোদন দেয় দুদক। গত বছরের ৩০ মে দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে এ মামলা করেন। তখন আসামি করা হয়েছিলো ১৩ জনকে।
চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন: ড. মুহাম্মদ ইউনূস, গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম, এস এম হুজ্জাতুল ইসলাম লতিফী, আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী ও জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান, ইউনিয়নের প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম ও দপ্তর সম্পাদক মো. কামরুল হাসান।

চার্জশিটে যা বলা হয়েছে:

দুদকের দেওয়া চার্জশিটে বলা হয়েছে, গ্রামীণ টেলিকমের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) মধ্যে একটা সমঝোতা চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছিলো। চুক্তি অনুযায়ী ঢাকা ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ৪৩৭ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়। এই টাকার মধ্যে ৩৬৪ কোটি টাকা ১৫৬ জন কর্মচারীকে দেওয়ার আগেই তাদের সম্মতি ছাড়া শ্রমিক নেতাদের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা প্রদান করে প্রতিষ্ঠানটি। গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম ক্ষমতার অপব্যবহার করে টেলিকমের সিবিএ নেতাদের সঙ্গে যোগসাজশে পরস্পর লাভবান হয়ে ওই টাকা প্রদান করে আত্মসাতে সহযোগিতা করেছেন বলে দুদকের চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে।

চার্জশিটে বলা হয়েছে, ড. ইউনূস অসৎ উদ্দেশ্যে বিশ্বাস ভঙ্গ করে ভুয়া সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্ট ও ভুয়া রেজুলেশনকে খাটি হিসাবে ব্যবহার করে জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে গ্রামীণ টেলিকম থেকে ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। এটি মানি লন্ড্রারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২)(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

চার্জশিটে আরও বলা হয়েছে, তদন্তকালে জব্দকৃত ও সংগৃহীত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২২ সালের ২৭ এপ্রিল গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন এবং গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির সাথে একটি সেটেলমেন্ট এগ্রিমেন্ট (সমঝোতা চুক্তি) হয়। এই চুক্তিতে একটি ব্যাংক হিসাবে নম্বর ছিলো। যেটা ওই বছরের ৮ মে ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় খোলা হয়। অর্থাৎ সমঝোতা চুক্তিটি ভুয়া/সৃজিত।

চার্জশিটে আরও বলা হয়েছে, ২০২২ সালের ৯ মে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে ড. ইউনূসের সভাপতিত্বে গ্রামীণ টেলিকম পরিচালনা পর্ষদের ১০৮তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের পাওনাদি পরিশোধের জন্য একটি ব্যাংক হিসাব খুলে তাতে ৪৩৭ কোটি টাকা স্থানান্তরের কথা বলা হয়। কিন্তু এই বোর্ড সভা হওয়ার আগেই ব্যাংক হিসাব খোলার সময় সভার রেজুলেশন জমা দেওয়া হয়। ওই রেজুলেশনে ড. ইউনূসের নির্দেশে সই করেন টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম। অর্থাৎ কোনো ধরনের বোর্ড সভা ছাড়াই ব্যাংক হিসাব খোলার সময় যে রেজুলেশন জমা দেওয়া হয়, তা ছিলো অসৎ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা। ড. ইউনূস অসৎ উদ্দেশ্যে পারস্পারিক যোগসাজশে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে এ ধরনের ব্যাংক হিসাব খুলতে সাহায্য করেন।

চার্জশিটে বলা হয়েছে, ওই ব্যাংক হিসাবে পরবর্তীকালে শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের ৪৩৭ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়। যেখান থেকে ২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে আইনজীবীসহ সিবিএ নেতাদের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তরের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতে সহযোগিতা করেন তিনি।

চার্জশিটে আরও বলা হয়েছে, গ্রামীণ টেলিকমের ১০৯তম বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত হয়, প্রত্যেক কর্মচারীর লভ্যাংশের শতকরা ৬ ভাগ কেটে সিবিএকে দিতে হবে। সেই হিসাবে সিবিএ নেতাদের দাবি অনুযায়ী শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের পাওনার ৬ ভাগ অর্থাৎ ২৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সিবিএ নেতাদের ২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। অর্থাৎ অতিরিক্ত এক কোটি ৬৩ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। সিবিএ নেতারা গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে শ্রমিক-কর্মচারীদের দর কষাকষি প্রতিনিধি হিসাবে মালিকপক্ষের নিকট থেকে টেলিকমের চেয়ারম্যান, বোর্ড সদস্য ও সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের সহায়তায় অবৈধ কমিশনের অর্থ গ্রহণ  করে মানি লন্ড্রারিং আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *