বিএনপির প্রার্থীদের বহিষ্কার চলছে
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথম ধাপের ভোটে অংশ নেওয়া পদধারী নেতাদের বহিষ্কার করছে বিএনপি। গতকাল বুধবার পর্যন্ত ৩৮ নেতার তালিকা প্রণয়ন করে তাদের শোকজ দেওয়া হয়েছে। তাদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে যারা ভোট থেকে বিরত না হবেন, তাদের বহিষ্কারের আলটিমেটাম প্রদান করা হয়েছে।
শোকজের সদুত্তর না পেয়ে গতকাল বুধবার পর্যন্ত ১০-১২ জনকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃতরা হলেন—নীলফামারী জেলাধীন জলঢাকা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফাহমিদ ফয়সাল চৌধুরী কমেট (কমেট চৌধুরী), দিনাজপুর জেলাধীন বিরল উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সাদেক আলী, চট্টগ্রাম উত্তর জেলাধীন ১২ নম্বর চিকনদণ্ডী ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক রাশেদ আলী মাহমুদ, সদস্য জহুরুল আলম এবং কক্সবাজার জেলাধীন ঈদগাঁও উপজেলা বিএনপির সদস্য ও ঈদগাঁও উপজেলা মৎস্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক মো. হান্নান মিয়া, মুন্সীগঞ্জ জেলাধীন টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আড়িয়ল ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জু শেখ ফারুখ, পটুয়াখালী জেলার সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনির রহমান এবং কক্সবাজার জেলার ঈদগাঁও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর তাজ জনিকে সদস্যপদসহ সব পদ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া ইতিমধ্যে যারা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাংগঠনিক ব্যবস্থা চলছে। কেবল প্রার্থীদের বহিষ্কারই নয়, যারা এসব বহিষ্কার প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে কাজ করবেন, তাদেরও বহিষ্কার করা হবে।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথম ধাপের ভোট হবে ৮ মে। এই ধাপের নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির অন্তত ৪৯ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। ১১ জন প্রত্যাহার করেছেন। ভোটে আছেন অন্তত ৩৮ জন। এর মধ্যে ১৮ জন পদধারী নেতা। বাকিরা দলের সাবেক ও বহিষ্কৃত নেতা। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটে যাওয়া বিএনপি নেতাদের শোকজ, এরপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। এটা দলীয় সিদ্ধান্ত। সেজন্য উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কাজেই দলের দায়িত্বশীল যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হবেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে দলের কঠোর অবস্থানের মধ্যেও নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী নেতারা বলছেন, স্থানীয় জনগণের চাপে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য হয়েছেন। এটা কোনো দলীয় নির্বাচন নয় বলে তারা এমন সিদ্ধান্ত নেন।
তারা বলছেন, দলের নয়, স্থানীয় জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে প্রার্থী হচ্ছেন। দল শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে, এটা জেনেশুনেই প্রার্থী হচ্ছেন অনেকে। কুমিল্লা জেলার মেঘনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বিএনপির সভাপতি রমিজ উদ্দিন নির্বাচন করছেন। তিনি বলেন, ‘বেঁচে থাকতে একটি নির্বাচন করে যেতে চাই। এলাকার লোকজনও চায় নির্বাচন করি। এখন দল থেকে আমাকে বহিষ্কার করা হলে কিছু করার থাকবে না।’ ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা বিএনপির সদস্য শামসুর রশিদ মজনু রয়ে গেছেন ভোটের মাঠে। তিনি বলেন, ‘দল থেকে প্রত্যাহার করতে বললেও যেহেতু প্রতীকবিহীন নির্বাচন, তাই ভোটে দাঁড়িয়েছি। দলের বহিষ্কার পরোয়া করি না।’