চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যকর ট্রিপল মার্ডারে দুজনে মৃত্যুদণ্ড
চট্টগ্রামে অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে ট্রিপল খুনের মামলায় দুজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই রায়ে আদালত আসামিদের প্রত্যেককে দুই লাখ টাকা করে অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) চট্টগ্রাম প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. কামাল হোসেন শিকদার দুজনের মৃত্যুদণ্ডের এ রায় দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর এম এ ফয়েজ।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুজন হলেন আবুল কাশেম প্রকাশ জামাই কাশেম ও মো. ইউসুফ প্রকাশ বাইট্যা কাশেম। ৭০ বছর বয়সী দুজনের বাড়ি নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার বালুচরা এলাকায়। রায় ঘোষণার সময় তারা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবু ঈসা বলেন, আসামি আবুল কাশেম প্রকাশ জামাই কাশেম এবং ইউসুফ প্রকাশ বাইট্ট্যা ইউসুফকে দণ্ডবিধির ৩০২/১১৪/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্তক্রমে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড এবং প্রত্যেককে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এর আগে ২০০৪ সালে জমি নিয়ে দ্বন্দ্বে সাইফুল ও তার ভাইবোনসহ তিনজনকে হত্যা করেন গিট্টু নাছির। এক বছর পরে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন সেই গিট্টু। হত্যার ২০ বছর পরে জড়িত দুজনকে এই রায় দিলেন আদালত।
অনুসন্ধানে ও সূত্রে জানা যায়, মূলত নগরের বায়েজিদ এলাকার গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি, অস্ত্র ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে ছোট সাইফুল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল গিট্টু নাসিরের। পরে গিট্টুর গুলিতেই নিহত হন ভাইবোনসহ ছোট সাইফুল। শুধু অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরি ও সাইফুলও নয় তার হাতেই খুন হয়েছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা আলী মরতুজাসহ আরও অনেকেই।
আদালত সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ থানার দক্ষিণ পাহাড়তলী মৌজার ৩৬ শতক সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে আবুল কাশেম এবং ইউসুফের সঙ্গে সাইফুল ও তার ভাইবোনদের বিরোধ চলে আসছিল। ২০০৪ সালের ২৯ জুন রাতে ব্রাশফায়ারে নির্মমভাবে খুন হন সাইফুল আলম, তার বড় ভাই মো. আলমগীর ও বোন মনোয়ারা বেগম।
কী ঘটেছিল সেদিন
তখন রাত সাড়ে ১০টা। সাইফুলের বাড়িতে দেওয়াল টপকে ঢুকে পড়েন শিবিরের তৎকালীন ক্যাডার গিট্টু নাছির, ফয়েজ মুন্না, আজরাইল দেলোয়ার, আবুল কাশেম এবং বাইট্টা ইউসুফ। এ সময় তাদের সঙ্গে অস্ত্র দেখে সাইফুলের বোন মনোয়ারা বেগম (মিনু) চিৎকার দিলে ফয়েজ মুন্না তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। চিৎকার শুনে সাইফুলের বড় ভাই আলমগীর দৌড়ে ঘর থেকে বের হতেই ইউসুফ বলে ‘শালাকে শেষ করে দে।’ এই হুকুম পাওয়া মাত্রই আলমগীরকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে আলমগীর মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে সাইফুল ইসলাম ঘর থেকে বের হলেই নাছির সাইফুলের কপালে, বুকে, পেটে, পিঠে ও হাতে গুলি করেন। জখম অবস্থায় ৩ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম ও তার ননদ মনোয়ারা বেগম মিনুকে মৃত ঘোষণা করেন।
আলমগীরকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে ১৯ জুলাই তিনিও মারা যান।
এ ঘটনায় সাইফুলের স্ত্রী আয়েশা আক্তার শিল্পী বায়েজিদ বোস্তামী থানায় ৪ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আস্মিরা হলেন- ইউসুফ, কাশেম, গিট্টু নাছির ও ফয়েজ মুন্না। তবে এজাহারে ছিল না আজরাইল দেলোয়ারের নাম।
পরে ২০০৫ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি এজাহারভুক্ত চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন বায়েজিদ বোস্তামী থানার তৎকালীন ওসি মো. আমিনুল ইসলাম। এর মধ্যে র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যান দুই আসামি গিট্টু নাছির ও ফয়েজ মুন্না। ২০০৭ সালের ১৬ জানুয়ারি তৎকালীন চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামলাটি বিচার নিষ্পত্তির জন্য মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠালে আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নেন আদালত।
গিট্টু নাছির ও ফয়েজ মুন্না র্যাবের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে মারা যাওয়ায় ২০১৭ সালের ৫ জুলাই দুজনকে মামলা থেকে দায়মুক্তি দেওয়া হয় এবং ইউসুফ ও কাশেমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এ মামলায় ১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত।