Home জাতীয় সাগরে এসপিএম টার্মিনাল অর্ধেকই অব্যবহৃত থাকছে
এপ্রিল ৩, ২০২৪

সাগরে এসপিএম টার্মিনাল অর্ধেকই অব্যবহৃত থাকছে

দেশে জ্বালানি তেল আমদানি সহজ এবং সময় ও অর্থ সাশ্রয়ী করতে সিংগেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) টার্মিনাল নির্মাণ করেছে সরকার। দীর্ঘসূত্রতা ও বিলম্বিত বাস্তবায়নে প্রকল্পটির খরচ বেড়েছে সাত গুণের বেশি। এর পরও এটির সঙ্গে সম্পৃক্ত অপর সম্পূরক প্রকল্প ইস্টার্ন রিফাইনারির (ইআরএল) দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণ কবে শুরু হবে এবং কে নির্মাণ করবে, তা নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। অর্থাৎ, তেল আমদানির পর পাইপলাইনে খালাসের অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেও সেই তেল পরিশোধনের অবকাঠামো নির্মাণই শুরু হয়নি। ফলে ৭ হাজার ১২৪ কোটি টাকার প্রকল্পটির সক্ষমতার অর্ধেক আরও অর্ধযুগ অলস পড়ে থাকার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ইআরএলের দ্বিতীয় ইউনিটের ব্যাক লিংকেজ বা সম্পূরক প্রকল্প সিংগেল পয়েন্ট মুরিং। কেননা, বিদেশ থেকে জাহাজে করে আমদানি করা ক্রুড বা অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও পরিশোধিত তেল ডিজেল বঙ্গোপসাগরের এই পয়েন্ট থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে খালাস করা হবে। গত ডিসেম্বরে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম বারের মতো এসপিএম ব্যবহার করে ডিজেল খালাস শুরু হয়েছে। আর গত ১৬ মার্চ গভীর সমুদ্রে স্থাপিত এসপিএম থেকে প্রথমে মহেশখালী পাম্পিং স্টেশন এবং সেখান থেকে চট্টগ্রামে ইস্টার্ন রিফাইনারির (ইআরএল) স্টোরেজ ট্যাংকে ৪০ হাজার টনের বেশি অপরিশোধিত জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়। কিন্তু পরিশোধন সক্ষমতা বৃদ্ধি না পাওয়ায় এসপিএম ব্যবহার করে এখনই বড় আকারের ক্রুড অয়েল আমদানি শুরু করছে না বিপিসি।

তিনি জানান, ইআরএল দ্বিতীয় ইউনিট এবং এসপিএম নির্মাণের সিদ্ধান্ত প্রায় একই সময়ে গ্রহণ করা হয়। কিন্তু অর্থায়ন জটিলতা এবং সিদ্ধান্তহীনতার কারণে এটির নির্মাণকাজ এখনো শুরু হয়নি। এমনকি কে নির্মাণ করবে, তা-ও এখনো নির্ধারিত হয়নি। একসময় বিদেশি কোম্পানির অর্থায়নে এটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। পরে বিপিসির অর্থায়নে নির্মাণে সিদ্ধান্ত হয়। সেজন্য বড় পরিমাণ টাকা ব্যাংকে আলাদা একাউন্টে জমাও রাখে বিপিসি। এখন সেই সিদ্ধান্ত থেকেও সরে এসেছে। সম্প্রতি বেসরকারি শিল্প সংস্থা এস আলম গ্রুপ ইআরএল-২ নির্মাণে অর্থায়নসহ আগ্রহ দেখিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু ইতিমধ্যে ইআরএল-২-এর প্রস্তুতিমূলক কাজের পেছনে বিপিসি প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা খরচ করে ফেলেছে। এখন পরিশোধনাগার নির্মাণে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেও তা পরিচালনে আসতে পাঁচ-ছয় বছর সময় লাগবে। অর্থাৎ, এই দীর্ঘ সময় এসপিএমের সক্ষমতার অর্ধেক অব্যবহৃত থাকবে।

জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল পাইপলাইন নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। তখন সিদ্ধান্ত ছিল বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ও ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। ২০১০ সালে ইনস্টলেশন অব সিংগেল মুরিং (এসপিএম) শীর্ষক একটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) অনুমোদন দেয়। সে সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯৫৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা। পরিবর্তিত ডিপিপি অনুযায়ী, প্রকল্প নির্মাণে ব্যয় হবে ৪ হাজার ৯৩৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এসপিএম নির্মাণে চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ব্যুরোর (সিপিপিবি) সঙ্গে ২০১৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। সিপিপিবি চায়না এক্সিম ব্যাংককে অর্থসহায়তা বা অর্থায়ন নিশ্চিত করে। সর্বশেষ প্রকল্পটির খরচ ৭ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।

এসপিএমের প্রকল্প পরিচালক মো. শরীফ হাসনাত বলেন, এসপিএম প্রকল্পে দুটো আলাদা পাইপলাইন তৈরি করা হয়েছে। একটি দিয়ে বছরে ৪৫ লাখ টন পরিশোধিত এবং আরেকটি দিয়ে ৪৫ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল সরবরাহ করা যাবে। এখন পরিশোধিত জ্বালানি তেল সরবরাহ করে পাইপলাইন পুরোপুরি কাজে লাগলেও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ৪৫ লাখ টন আমদানি করা যাবে না। কারণ পরিশোধন সক্ষমতা নেই। তিনি বলেন, ইআরএল দ্বিতীয় ইউনিট বাস্তবায়নের আগপর্যন্ত পরিশোধিত জ্বালানি তেল বেশি আমদানি করে পাইপলাইন প্রকল্পের বিনিয়োগ তুলে আনার চেষ্টা করা হবে।

দেশে দ্বিতীয় তেল পরিশোধনাগারের নির্মাণেও ২০১১ সালে ইস্টার্ন রিফাইনারি দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এ ইউনিটের তেল পরিশোধন সক্ষমতা হবে বছরে ৩০ লাখ টন। তখন ২০১৬ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অর্থায়ন জটিলতা এবং কারিগরি ও প্রশাসনিক ধীরগতির কারণে সেই প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি। ফ্রান্সের টেকনিপের সঙ্গে আলোচনাও অনেক দূর এগিয়ে বন্ধ হয়ে যায়।

সর্বশেষ বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বেসরকারি শিল্প সংস্থা এস আলম গ্রুপ সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে। প্রকল্পটির ৮০ শতাংশ মালিকানা গ্রুপটি হাতে রাখার প্রস্তাব দিয়েছে। এস আলমের প্রস্তাবটি বিবেচনা করতে সাত সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী লোকমান হোসেন। তিনি বলেন, তাদের প্রস্তাবটি কারিগরি ও আর্থিক দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরবর্তী করণীয় নিয়ে সিদ্ধান্ত কমিটি নেবে।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *