Home জাতীয় সমৃদ্ধ দেশ গড়ার শপথ
Mac ২৭, ২০২৪

সমৃদ্ধ দেশ গড়ার শপথ

বিনম্র শ্রদ্ধায় মহান মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের স্মরণের মধ্য দিয়ে সারা দেশে পালিত হয়েছে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। দীর্ঘ সংগ্রামের পথ বেয়ে অর্জিত স্বাধীনতার ৫৩ বছর পূর্তি উদ্যাপন করল বাংলাদেশ, যে দেশের মানুষের সামনে এখন সোনালি ভবিষ্যৎ। তাই দেশের জন্মদিনে এক অন্যরকম স্বস্তি, আনন্দ ও শপথে জেগে উঠেছিল বাঙালি। সবার মুখে মুখে উচ্চারিত হয়েছে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার শপথ। সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অঙ্গীকারও ব্যক্ত করা হয়।

গতকাল সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন লাল-সবুজের উত্সবে। শ্রদ্ধাবনত জাতি ফুলে ফুলে ভরে দেয় সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ, ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি এবং টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারের বেদিমূল। ঢাকাসহ সারা দেশে প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে শুরু হয় দিবসের কর্মসূচি।

সূর্যোদয়ের সময় সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সফররত ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুক। ‘স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৪’ উদ্যাপনের অংশ হিসেবে রাষ্ট্রপতি প্রথমে ভোর ৫টা ৫৭ মিনিটে জাতীয় স্মৃতিসৌধের শহিদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী এবং ভুটানের রাজা পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

৫৪তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্যাপন উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আমন্ত্রণে ভুটানের রাজা এখন চার দিনের সরকারি সফরে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভুটানই প্রথম বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। দীর্ঘ ১১ বছর পর ওয়াংচুক তার পত্নীসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকায় এসেছেন। এর আগে ২০১৩ সালে রাজা ও রানী বাংলাদেশ সফর করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং ভুটানের রাজা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকশ দল এ সময় রাষ্ট্রীয় সালাম জানায় এবং বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। পরে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং ভুটানের রাজা স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে রাখা দর্শনার্থী বইতে স্বাক্ষর করেন। এরপর দলের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দলের পক্ষ থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে আরেকটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

এ সময় জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতির কার্যাভার পালনরত বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা, কূটনীতিক, বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি এবং পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও প্রধান বিচারপতির কার্যাভার পালনরত বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম মহান জাতীয় স্মৃতিসৌধের শহিদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পরে মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। স্মৃতিসৌধে ঢল নামে সাধারণ মানুষের। সাম্প্রদায়িক শক্তির ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখে স্বনির্ভর সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়তে নতুন প্রজন্মের দীপ্ত শপথে বলিয়ান হতে দেখেছে দেশবাসী। কালরাতের আঁধার পেরিয়ে আত্মপরিচয় অর্জন ও পরাধীনতার শিকল ভাঙ্গার দিনটি বাঙালি জাতি হূদয়ের গভীরতা থেকে শ্রদ্ধার সঙ্গেই পালন করেছে নানা অনুষ্ঠানমালায়।

স্বাধীনতা দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন: স্বাধীনতা দিবসে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণ মঙ্গলবার ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিল জনারণ্য। অজস্র কৃতজ্ঞ বাঙালি বিনম্র শ্রদ্ধা জানান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫৪তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্যাপন উপলক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। তিনি গতকাল সকালে রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে রক্ষিত তার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রধানমন্ত্রী এলাকা ত্যাগ করলে সর্বসাধারণের জন্য স্থানটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এরপর আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অজস্র সংগঠন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে এবং তার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে দীপ্ত শপথ গ্রহণ করে।

স্মারক ডাকটিকিট উন্মোচন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৪’ উপলক্ষ্যে স্মারক ডাকটিকিট উন্মোচন করেছেন। তিনি গতকাল সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে এক অনুষ্ঠানে ১০ টাকা মূল্যের স্মারক ডাকটিকিট, ১০ টাকার উদ্বোধনী খাম এবং ৫ টাকার একটি ডাটা কার্ড উন্মোচন করেন।

মুক্তিযোদ্ধাদের শুভেচ্ছা জানালেন প্রধানমন্ত্রী: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৪’ উপলক্ষ্যে দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী অতীতের মতো এবারও তার শুভেচ্ছার নিদর্শন স্বরূপ রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার গজনভী রোডে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন কেন্দ্রে (মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার-১) যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ পরিবারের সদস্যদের জন্য ফুল, ফল ও মিষ্টি পাঠান। প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস)-২ গাজী হাফিজুর রহমান লিকু এবং সহকারী প্রেস সচিব এ বি এম সরওয়ার-ই-আলম সরকার তাদের হাতে উপহার সামগ্রী তুলে দেন।

গতকাল ছিল সাধারণ ছুটি। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ সুসজ্জিত করা হয় জাতীয় পতাকায়। সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে উত্তোলন করা হয় জাতীয় পতাকা। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে এবং বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনেও স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের তাত্পর্য তুলে ধরে আলোচনা সভা ও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়।

স্মৃতিসৌধে লাখো মানুষের ঢল: হাতে লাল সবুজের পতাকা আর রং-বেরঙের ফুল, হূদয়ে গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা নিয়ে গতকাল সকাল থেকে লাখো মানুষের ঢল নামে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে। দেশের সূর্য সন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় ফুলে ফুলে ঢেকে যায় স্মৃতিসৌধের শহিদ বেদি। এদিন বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন জাতীয় স্মৃতিসৌধের শহিদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। এদের মধ্যে রয়েছে বিএনপি, জাতীয় পার্টি (জাপা), জাতীয় পার্টি-জেপি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), সিপিবি, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, গণবিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলসমূহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, জাবি অফিসার্স সমিতি, জাবি প্রেসক্লাব, শিক্ষক সমিতি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, নজরুল ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, ঢাবি কর্মচারী সমিতি, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, জাকের পার্টি, ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ, স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, ডিপ্লোমা কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, কোর্ট রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন-ঢাকা, প্রশিকা, প্রজন্ম ’৭১, বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক জোট, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় যুব সংহতি, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, ঢাকা আইনজীবী সমিতি, বাংলাদেশ আইন সমিতি, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ আওয়ামী আইনজীবী পরিষদসহ অজস্র সংগঠন।

বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধা: মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন এমপির নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধের বেদিতে ফুল দিয়ে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের শ্রদ্ধা জানান।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *