Home সারাদেশ দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত উর্ধগতিতে হাসফাস মধ্যবিত্ত ক্রেতা,কস্ট বাড়িয়েছে ঋনের বোঝা।
Mac ২৪, ২০২৪

দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত উর্ধগতিতে হাসফাস মধ্যবিত্ত ক্রেতা,কস্ট বাড়িয়েছে ঋনের বোঝা।

তাইফুর রহমান(বালী তূর্য),সমাজকর্মী ও লেখক।
“মধ্যবিত্ত” কবিদের ভাষায় একটি অসহায় মানব সদৃশ প্রজাতি হিসেবে দেখা হয়।যারা ইতিহাসের সুদিনেও কস্ট আর নানান আক্ষেপে জীবন কাটিয়েছে।তাদের সেই কস্ট যেনো আরও ঐতিহাসিক করে তুলেছে গত পাচ বছরের দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত উর্ধগতি।করোনাভাইরাসের প্রকোপ কাটিয়ে ওঠার আগেই রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ এই জীবনকে আরও বেশি কঠিন করে দিয়েছে।আর মধ্যবিত্ত পুরুষদের কাধের জোয়ালে ক্ষত বানিয়েছে ঋনের বোঝা।
এমনিতেই সাধারণত মধ্যবিত্ত পরিবারের স্ত্রী সন্তানদের বিশেষ কোনো আবদার কিংবা পড়ালেখার খরচ মেটাতে বাবাদের ঋন করার বিকল্প থাকে না।নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের অধিকাংশই এখন কোনো না কোনো ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে আটকে আছে।অর্থাৎ একদিকে কাধে ঋনের বোঝা তার সাথে ক্রমেই বেড়েছে দ্রব্যমূল্য। বলা যায় সেই হালের বলদের মতো এবার মধ্যবিত্ত পরিবারের পুরুষদের কাধেও হালের জোয়াল পরে পরে ঘা হয়ে গেছে।
দেশের তৃনমুল পর্যায়ের মানুষের মধ্যে ঘুরে ঘুরে তথ্য নিয়ে এই ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে।একজন দরিদ্র প্রতিবন্ধী ভ্যান চালক মোশাররফ, ঠিকমতো কথা বলতে পারেন না,স্বাভাবিক চলাচলও করতে না পারলেও একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান।মোশাররফ আক্ষেপ করে বলছিলেন,”কি খামু,আলু,ডাইল,প্যাজের এত দাম,কান্দন আয়”।”গাড়ির ব্যাটারি লাগান লাগবে,বউ নাই,কিস্তি উডামু ক্যাম্নে?”।কথাগুলো শোনার পরে ঘোর থেকে বের হতে পারছিলাম না।প্রতিবন্ধী একজন ভ্যান চালক,তাকে জীবীকার তাগিদে ৫০-৬০ হাজার টাকা ঋন করতে হবে এনজিও থেকে।তা না হলে আর ভ্যানগাড়িটিও চলবে না।বন্ধ হয়ে যাবে উপার্জন।অর্থাৎ তাকে মাসে ছয় হাজার টাকার বেশি শুধু ভ্যানের ঋনের বোঝা বইতে হবে। দৈনিক উপার্জন থেকে অর্ধেক তার ঋনেই কাটা যাবে।এছাড়াও তার পুরনো ঋন রয়ে গেছে বিভিন্ন সময়ের।
আরেকজন ভ্যান চালক মিলন মিয়া।স্থানীয় বাজার থেকে একদিন সন্ধ্যায় তার উপার্জনের সম্বল ভ্যানগাড়িটিও নিয়ে যায় চোর।অনেক খোজাখুজি করেও সেটি আর ফেরত পাননি।সমাজের অনেক বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছিলো সে,আমরাও চেয়েছিলাম।কিন্তু পাইনি বলে,বাধ্য হয়ে তাকে প্রায় লাখ টাকা ঋন করে নতুন একটি ভ্যান কিনতে হয়েছে।এবার তার পুরনো ঋনের বোঝার সাথে নতুন করে দৈনিক প্রায় সাড়ে চারশো টাকার ঋন যুক্ত হয়েছে। এখন সে দৈনিক কত টাকা আয় করবে,ঋন শোধ করে ফের সংসার চালাবে?দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি তাকে এখন এক প্রকার গলা টিপে শ্বাসরোধ করে রেখেছে।
এরপর কথা হলো,বেসরকারি চাকরিজীবি মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা আরেক নতুন মধ্যবিত্ত আবু সুফিয়ানের সাথে।একটি প্রতিষ্ঠানে ভালো পদে চাকরি করেন শিক্ষিত এই যুবক। বিভিন্ন সরকারি দপ্তরগুলোতে চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও মূল চা নাস্তার পরীক্ষায় পাশ করতে পারেন নি,মধ্যবিত্ত বলে।তিনি জানান,মাসে প্রায় ১৭-১৮ হাজার টাকা বেতন পেলেও সন্তানের মুখে হাসি ফোটানোর খাবার কিনতে পারছেন না গত দুই বছরেও।কারন জিজ্ঞেস করলে জানান,মাথা গোজার জন্য একটি ছোট ঘর তুলতেই ঋণের বোঝায় এখন মেরুদণ্ড ভেঙে যাবার অবস্থা।মাসে তাকে প্রায় বারো হাজার টাকা ঋনের কিস্তিই দিতে হয়।এরপরে আছে স্থানীয় বাকি বকেয়া।সব দেয়ার পরে হাতে তিন হাজার টাকাও থাকে না।এই দিয়েই অফিস যাতায়াত, হাত খরচ,মোবাইল বিল,আবার সংসার চালানো।আর এজন্যই দুই মাসেও একটি ব্রয়লার মুরগী কিনতে পারেন নি এই মধ্যবিত্ত যুবক।তাই দেশের মাথাপিছু আয়ের ডলারের হিসাব এদের মাথার উপরে না এলেও মাথাপিছু ঋনের বোঝায় হয়তো এদের মাথার হিসাবটা থাকতে পারে।
করোনাভাইরাসের প্রভাবে পুরো বিশ্ব অস্থির হয়ে পরে,সেখান থেকে স্বাভাবিক হবার আগেই রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ পুরো পৃথিবীতে কতটা প্রভাব বিস্তার করেছে তা সবাই বোঝার কথা না হলেও দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত উর্ধগতি এখন যে মধ্যবিত্তদের কাধের জোয়ালে বাড়তি বোঝা হয়েছে তাতে ভুল নেই।আর ঋনের বোঝা সেই ঘারে ক্ষত বানিয়ে ক্ষত বিক্ষত করে দিচ্ছে মধ্যবিত্ত পরিবারের পুরুষদের হৃদয়।।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *