Home সারাদেশ কৃষি প্রধান দেশের কৃষি পন্যের দামও কেন লাগামহীন,তরুন প্রজন্মের কৃষি বিমুখিতাই কি দ্বায়ী? -একজন ব্যাংক কর্মকর্তার ভাবনা
কৃষি প্রধান দেশের কৃষি পন্যের দামও কেন লাগামহীন,তরুন প্রজন্মের কৃষি বিমুখিতাই কি দ্বায়ী? -একজন ব্যাংক কর্মকর্তার ভাবনা
তাইফুর রহমান, লেখক ও সমাজকর্মী (ঝালকাঠি) :
দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত উর্ধগতি এখন দেশের সবচেয়ে আলোচ্য বিষয়। তেল -নুন থেকে সবজি কিসের দাম বাড়েনি, যদি এমন প্রশ্ন করা হয় তাহলে এর উত্তর নেই।তবে আসলে কেনই বা এমন লাগামহীন হলো খাদ্য পন্যেরও মূল্য?একটি সবুজ কৃষি প্রধান দেশে অন্তত চাল,ডালের তো এমন হাল হবার কথা নয়।সেই বিষয়ে কিছু কথা নিজের সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার মেধাবী সন্তান, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একজন শাখা ব্যবস্থাপক জিয়াউল হাসান টিটু।
যিনি একজন নিজে একজন ব্যাংক কর্মকর্তা হয়েও গড়ে তুলেছেন নিজের সমন্বিত কৃষি খামার।সেখানে চাষ করছেন নানান জাতের সবজি।পুকুরে চাষ করেছেন মাছ।যেন আপাদমস্তক একজন কৃষক। কৃষি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া প্রজন্ম যে দেশে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে তার কিছুটা উঠে এসেছে তার কথায়। ছবিতে যাকে দেখা যাচ্ছে নিজের কৃষি খামারের উৎপাদিত সবজি নিয়ে নিজ ঘরের সামনে বসে বসে দেখছেন।অন্তত নিজের জন্য বিষমুক্ত সবজির জোগান তার হয়ে যাচ্ছে।
তার লেখাটি ছিলো-
_আজ থেকে বছর দশেক আগে পাঁচ’শ টাকায় একটি শার্ট কিনতে পারতেন। এখনও পারেন, আগামী পাঁচ বছর পরও পারবেন। হয়ত শো-রুম থেকে না কিনে ফুটপাত/সিটি মার্কেট থেকে কিনতে হবে। আজ থেকে দশ বছর আগে তিন’শ টাকায় একটা বডি-স্প্রে কিনতে পারতেন। এখনও পারেন, পাঁচ বছর পরেও হয়ত ব্রান্ড পরিবর্তন সাপেক্ষে পারবেন। চলনসই একটি স্মার্টফোন হাজার পনেরো টাকা হলে সাত-আট বছর আগেও কেনা যেত, এখনও যায়, আগামী পাঁচ বছর পরেও নিশ্চিত কেনা যাবে। কিন্তু আজ থেকে দশ বছর আগে পরিবারের সকলকে নিয়ে তিন বেলা পেটপুরে খেতে যে খরচ লাগত, আজ তার কয়েকগুন বেশি লাগছে এবং আগামী সাত-আট বছরে এই ব্যয় আরও বহুগুন বেড়ে যাবে। তিন বেলা পর্যাপ্ত খাদ্যের যোগান অনেক মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। মাছ মাংসের দাম বাড়া নিয়ে অবশ্য সাধারণ মানুষের আগ্রহ কমে গেছে, কারন বিত্তশালী মানুষজন ছাড়া মাছ-মাংসের দাম এখন অনেকের কাছেই অজানা। ফার্মের ডিম আর ব্রয়লার মুরগী না থাকলে বাঙালী বহু আগেই নিরামিষভোজী হয়ে যেত। দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৭/৮ শতাংশ হলেও খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ১২.৫% ছাড়িয়ে গেছে। অর্থাৎ গত বছর যে খাদ্যপণ্য ১০০/- টাকায় কিনতে পারতেন, সেটা কিনতে এখন ১১২.৫০/- টাকা গুনতে হচ্ছে।
মোদ্দা কথা হচ্ছে খাদ্যপণ্যের দাম আগামী দিনগুলোতে বহুগুণ বেড়ে যাবে। প্রসাধন সামগ্রী, পোশাক, ইলেকট্রনিকস পণ্য সহ অন্য যে কোনও পণ্যের চেয়ে খাদ্যপণ্যের দাম আনেক গুন বেশি বাড়বে। চাহিদা জ্যামিতিক হারে বেড়ে যাওয়া, আবাদযোগ্য জমি কমে যাওয়া, কৃষি কর্মবিমুখতা, পেশাজীবি কৃষক-খামারি কমে যাওয়া, শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর কৃষিকাজে অনুপস্থিতি, ইত্যাদি এর প্রধান কারন।
আজব হলেও সত্যি, অশিক্ষিত কেউ বেকার নেই, বেকার হচ্ছে সব শিক্ষিত লোকজন। আমরা এখনও আমাদের পেশাকে জীবিকার মুখ্য চালিকাশক্তি না ভেবে বরং তার শ্রেনিবিন্যাসকরনে ব্যস্ত। আফসোস, আমরা এখনও কৃষিকাজ, শাক-সবজি উৎপাদন, গবাদি পশু পালন, মৎস চাষ, হাস-মুরগী পালন-কে নিচু স্তরের পেশা মনে করি। বিশেষত শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যেই এই প্রবনতা বেশি লক্ষনীয়। মনে রাখবেন আগামী দিনে যে নিজের খাদ্য নিজে উৎপাদন করতে পারবে, সে যে পেশাতেই থাকুক আর্থিকভাবে সমৃদ্ধশালী থাকবে।
তাই এক ইঞ্চি যায়গাও অনাবাদি না রেখে সাধ্য অনুযায়ী শস্য, মৎস ও প্রাণী সম্পদ উৎপাদন করুন। মেধাবী শিক্ষার্থীরা কেবলমাত্র চাকরির পেছনে না ছুটে খাদ্য উৎপাদনশীন খাতে ক্ষুদ্র/মাঝারি স্তরের উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করুন। সম্পদশালীরা এই খাতে বিনিয়োগ করুন, সামনের দিনগুলোতে খাদ্যপণ্য উৎপাদন খাতের ব্যবসায়িক সুদিন আসছে। চাকরির পেছনে না ঘুরে অন্যের জন্য চাকুরির সুযোগ সৃষ্টি করুন। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে অবদান রাখুন। বিশ্বাস করুন, সফলতার পাশাপাশি সন্তুষ্টিও মিলবে।
তার এই লেখাটি এই তরুন প্রজন্মকে কৃষিতে উদ্বুদ্ধ করুক,সোনালী -সবুজ করুক এই দেশ।সকলের মনে প্রশান্তি ফিরুক দু মুঠো খেয়ে।