সমীক্ষার মাত্র ৩০ শতাংশ গাড়ি চলছে বঙ্গবন্ধু টানেলে
গত ২৮ অক্টোবর উদ্বোধনের পর ২৯ অক্টোবর থেকে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মেগাপ্রকল্প বঙ্গবন্ধু টানেল দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়। উদ্বোধনের চার মাস পেরিয়ে গেলেও ধীরগতিতে বাড়ছে এই টানেল ব্যবহারকারী যানবাহনের সংখ্যা। সম্ভাব্যতা অনুযায়ী প্রতিদিন গড়ে ১৭ হাজার যান চলাচলের পরিবর্তে প্রথম চার মাসে গড়ে যান চলাচল হয়েছে ৫ হাজার ৪০০টি, যা সমীক্ষার তিন ভাগের এক ভাগের চেয়েও কম।
জানা যায়, প্রকল্পের সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, টানেল চালুর প্রথম বছর দৈনিক প্রায় ১৭ হাজার ২৬০টি গাড়ি চলাচল করবে। আর ২০২৫ সালের মধ্যে এই টানেল দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২৮ হাজার ৩০৫টি যান যাতায়াত করতে পারবে। পর্যায়ক্রমে যানবাহন চলাচলের সংখ্যা বছরে এক কোটি ৪০ লাখে উন্নীত হবে। তবে গত চার মাসের যান চলাচলের সংখ্যা সমীক্ষায় প্রত্যাশিত সংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগের চেয়েও কম।
বঙ্গবন্ধু টানেল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, উদ্বোধনের পরের দিন থেকে শুক্রবার (১ মার্চ) সকাল পর্যন্ত টানেল দিয়ে মোট ৬ লাখ ৪৮ হাজার একটি গাড়ি পারাপার হয়েছে।
এসব গাড়ি থেকে টোল আদায় হয়েছে ১৬ কোটি ৩৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩০০ টাকা, যা টানেল রক্ষণাবেক্ষণের খরচের চেয়ে কম।
এদিকে টানেলকে কেন্দ্র করে আনোয়ারা প্রান্তে বিভিন্ন কলকারখানা, ইকোনমিক জোন, এবং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা স্থাপনের পরিকল্পনা থাকলেও টানেলের আশপাশে বেসরকারি উদ্যোগে দালান নির্মাণ ছাড়া তেমন কোনো বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়ে তোলার দৃশ্যমান কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। তবে উদ্বোধনের আগে টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে ২০-৩০ গুণ দামে জায়গাজমি কেনার হিড়িক পড়েছিল।
বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পের টোল ব্যবস্থাপক বেলায়েত হোসেন বলেন, ধীরে ধীরে যানচলাচল বৃদ্ধি পাচ্ছে। টানেল দিয়ে পর্যটকদের গাড়ি বেশি চলছে। তবে বাণিজ্যিক, দূরপাল্লার ও ব্যক্তিগত গাড়িও পারাপার হচ্ছে। এই পর্যন্ত মোট ১৬ কোটি টাকার মতো টোল আদায় হয়েছে। টানেলের আয় ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ প্রায় কাছাকাছি চলে আসছে জানিয়ে টানেলের সহকারী প্রকৌশলী (টোল ও ট্রাফিক) তানভীর রিফাত বলেন, টানেলের গাড়িগুলোর গতি কমাতে এবং দুর্ঘটনা রোধ করতে স্পিড ক্যামেরা বসানোর কাজ দ্রুত সময়ে বাস্তবায়ন করা হবে। টানেলে দিনদিন গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। টানেল রক্ষণাবেক্ষণের খরচের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের টানেলের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ দুই ধরনের। একটি হচ্ছে রেগুলার মেন্টেনেজ, আরেকটা হচ্ছে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তখন। টানেলের রেগুলার রক্ষণাবেক্ষণের খরচের চেয়ে টোল একটু কম উঠছে।’
টানেলের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে কী কী ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সম্ভাব্যতা অনুযায়ী গাড়ি চলাচল না হওয়ার বিষয়ে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহ-সভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, ‘কোনো একটা প্রজেক্ট বাস্তবায়নের আগে কয়েকটা বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে পরিকল্পনা করা হয়। এসব বিষয় বাস্তবায়িত না হওয়ায় টানেলের সম্ভাব্যতা অনুযায়ী গাড়ি চলাচল করছে না। উচিত ছিল, টানেল নির্মাণের আগেই টানেলের পূর্ব প্রান্ত থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বিভিন্ন ইন্ড্রাস্ট্রি, কলকারখানা স্থাপনের মাধ্যমে উন্নত করা। তখনই টানেল দিয়ে সম্ভাব্যতা অনুযায়ী গাড়ি চলাচল করতো। যেহেতু দক্ষিণাঞ্চলে তেমন শিল্পায়ন হয়নি, তাই টানেল ফলপ্রসূ হচ্ছে না। আর টানেলটা সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য নয়। কারণ অন্যান্য সেতুর টোলের চেয়ে টানেলের টোল বেশি। কেবল পর্যটকের গাড়ি থেকে আদায়কৃত টোল দিয়ে টানেলের খরচ পোষানো সম্ভব না। শিল্পকারখানার গাড়ি টানেল দিয়ে চলাচল করলে টোলের কারণে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে। এর বোঝা বইতে হবে সাধারণ জনগণকে। তাছাড়া যতই দিন যাবে, ততই এর রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বেড়ে যাবে; এবং ঋণ পরিশোধের সময়ও ঘনিয়ে আসবে। দক্ষিণাঞ্চলে শিল্পায়ন এবং সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় টানেলের সুফল পাওয়া যাবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।