Home সারাদেশ যা মনে রাখা দরকার তা ভুলে যায়।ভালোবাসার মানুষকে ভুলতে চাইলেও কেন ভুলতে পারে না।
ফেব্রুruari ২৯, ২০২৪

যা মনে রাখা দরকার তা ভুলে যায়।ভালোবাসার মানুষকে ভুলতে চাইলেও কেন ভুলতে পারে না।

তাইফুর রহমান, সমাজকর্মী ও লেখক।
মানুষ দৈনন্দিন জীবনের অনেক প্রয়োজনীয় বিষয় ভুলে গেলেও ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে ফেললে কিংবা পেয়ে গেলে তাকে এক মুহুর্তের জন্য ভুলতে পারে না।ভোলার শত চেষ্টা করলেও পারে না,কিন্তু কেন?
কেমন হতো যদি সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী মমতাজকে মৃত্যুর পর পরই ভুলে যেতেন?আর যাই হোক অন্তত ভালোবাসার অনন্য এক উদাহরণ দৃষ্টিনন্দন তাজমহল আমরা দেখতে পেতাম না । অথবা প্রেমিকরা যদি ভালোবাসার মানুষকে খুব সহজেই ভুলে যেতে পারতেন তাহলে এত ইতিহাস,কাব্য রচনা,উপন্যাস হয়তো কমে যেত। অনেক কবিই হয়তো আর কবি হয়ে উঠতেন না, যদি অন্তরে আঘাত না পেতেন। অর্থাৎ ভালোবাসা ভুলে যাওয়া কিংবা ভুলতে না পারার এ বিষয়টিকে সাহিত্যিক হিসেবে অথবা সাহিত্যের ভাষায় বা সাহিত্যের প্রয়োজনে আপনি খুব গুরুত্বপূর্ণ বলতে পারেন। যদিও ভুলে যাওয়া আর ভুলতে না পারা এর বৈজ্ঞানিক আলাদা আলাদা ব্যাখ্যা থাকতে পারে কিন্তু তা তো আর মানুষের মন মানে না।অনেক বিষয় মানুষের মনে হয় ভুলে যেতে পারলে হয়তো অন্তরের রক্তাক্ত ক্ষত শুকিয়ে যেত, পুষে রাখা ব্যথাটাও হয়তো কমে যেত কিন্তু মানুষ তখন আসলে সেই বিষয়গুলোকে ভুলতে পারে না।
আবার যখন শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করে মনে রাখার জন্য অনেক চেষ্টা করে তারপরেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভুলে যায়। অর্থাৎ এটি আসলে একটি আজীব বিষয়।
আপনি ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে ফেললে তাকে ভুলে যেতে চাইবেন কিন্তু কোনভাবেই তাকে আসলে ভুলতে পারবেন না। আবার অনেক কিছুই যা আপনার জীবনে মনে রাখা দরকার তা নিমেষেই ভুলে যাবেন।
সম্রাট শাহজাহান যখন সম্রাট ছিলেন যখন তার যৌবন ছিল, তিনি চাইলেই মমতাজের থেকেও অধিক অপরূপ সুন্দরী রমণীদেরকে তার রাজপ্রসাদে আনতে পারতেন।মমতাজ ছাড়াও কয়েকজন স্ত্রী ছিল তার তবুও মমতাজই যেন তার হৃদয় পটে আকা গেথে থাকা নারী ছিলেন। তাই মমতাজের ভালোবাসা চিরদিনের জন্য স্বরনীয় করে রাখতেই তিনি নির্মাণ করেছিলেন তাজমহল। অথচ সেই তাজমহলে খুব বেশি সময় নিজ প্রেয়সীর জন্য নীরবে নিভৃতে কাটাতে পারেননি তিনি।শোনা যায় শাজাহান এই তাজমহল নির্মাণের জন্য তার রাজকোষ প্রায় খালি করে ফেলেছিলেন, যে কারণে তার সন্তান আওরংগজেব তাকে কারারুদ্ধ করে রাখেন। তবে তার সন্তানদের ধারণা ছিল তাদের পিতা শাহজাহান মায়ের প্রেমে উন্মাদ হয়ে গেছেন।
 সম্রাট শাহজাহানের জীবনের শেষ দিনগুলি আগ্রার যেই কারাগারে কেটেছে সেই কারাগারে জানালা থেকেও তাজমহলটিকে সম্পূর্ণরূপে দেখা যায়।অর্থাৎ প্রায় বিশ বছর তিনি শুধু প্রেয়সীর সমাধী দেখেই কাটিয়েছেন।হয়তো এটিই ভালোবাসার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগের এক উদাহরণ।
সম্রাট শাহজাহানের শেষ জীবন সুখের ছিল না। তিনি তার জীবনের শেষ বিশ বছর আগ্রা দুর্গে পুত্র আওরঙ্গজেব কর্তৃক গৃহবন্দী হয়ে কাটান। তার জীবদ্দশায় আওরঙ্গজেব তার অবশিষ্ট পুত্র ও তাদের ঘরের নাতিদের হত্যা করেন।১৬৫৮ সালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে পুত্র আওরঙ্গজেব তাকে বন্দী করেন এবং বন্দী অবস্থায় ১৬৬৬ সালে আগ্রা দূর্গে তার মৃত্যু হয়। আর তাজমহল এই অপরূপ এবং অনবদ্য সৃষ্টি কেবলমাত্র ভালোবাসার নিদর্শন এবং ভালবাসাকে ভুলে না যাওয়ার নিদর্শন।
 আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক বিষয়কে মনে রাখতে চাইলেও ভুলে যাই, ঠিক তেমনি যা খুব পীড়াদায়ক অন্তরে ব্যথা দেয়। মনে করলেই মনে হয় অন্তরটি ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত হয়ে যাচ্ছে সেই বিষয়গুলোকে হাজার চেষ্টা করেও ভুলতে পারেনা।
 দেবদাস এর মধ্যে দেখা যায় দেবদাস নেশায় বুধ হয়ে থাকে পারুকে ভোলার জন্য কিংবা না পাওয়ার বেদনায়।কিন্তু সে তো ভুলতে পারেনা। আর ভুলতে চাওয়া বিষয়গুলো যখন মানুষ ভুলতে পারে না তখন সে হতাশার সাগরে ডুবে যায়। হাবুডুবু খেতে থাকে, কখনো কখনো বাঁচার আকুতি জানায়। হয়তো বাঁচতে পারে নয়তো বা সেই হতাশা তাকে কুরে কুরে খায়।
ভুলে যাওয়া শব্দ দুটি অত্যন্ত পুরনো। পৃথিবী শুরু থেকেই কোন কিছু ভুলে যাওয়ার ঘটনাটি রয়েছে। অনেক সময় আমরা অনেক কিছু মনে রাখতে চাইলেও ভুলে যাই। আবার অনেক ঘটনা কিংবা অনেক বিষয় আমাদের ভুলে যাওয়া অত্যন্ত দরকার হলেও আমরা সেটিকে ভুলতে পারিনা। তাহলে আসলেই ভুলে যাওয়ার ব্যাখ্যাটা কি হতে পারে,কেনই বা আমরা এভাবে ভুলে যাই আর কেনই বা কোন বিষয়ে ভুলতে পারিনা। বিজ্ঞানের ভাষায় ভুলে যাওয়াকে ডিমনেসিয়া বলা হয় এটি একটি রোগ। কিন্তু ভুলতে না পারার আসলে যেমন কোন ব্যাখ্যা হয়তো বিজ্ঞানও দিতে পারেনা। যদি কবি সাহিত্যিকদের ভাষায় আপনি আর ব্যাখ্যা করতে যান তাহলে আপনাকে মানতেই হবে আপনি আপনার ভালোবাসাকে কখনোই ভুলতে পারবেন না।
বিজ্ঞানের ভাষায় মস্তিস্কের অনেক অসুখের একটি উপসর্গ এই ডিমেনশিয়া। ‌এর স্বাভাবিক ও সাধারণ একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে স্মৃতিভ্রষ্ট হওয়া বা ভুলে যাওয়া। কেউ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হলে তার পক্ষে অতীতের চেয়ে সাম্প্রতিক ঘটনা মনে রাখা অনেক বেশি কঠিন।
বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের নিউরো মেডিসিন বিভাগের প্রধান ও নিউরোলজিস্ট ড. সেহেলী জাহান বলেন, এটা মূলত বয়স্ক মানুষের রোগ।
“বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্মৃতির ব্যাপারে সমস্যা দেখা দেয়। সহজ করে বললে এটি হচ্ছে ভুলে যাওয়া রোগ। এর সাথে অন্যান্য সমস্যাও হয় যেমন নিজের কাজগুলো নিজে ঠিক মতো করতে না পারা। কারো হাঁটা চলারও সমস্যা হয়,” বলেন তিনি।
ডিমেনশিয়ার আরো যেসব উপসর্গ আছে তার মধ্যে রয়েছে আচরণের পরিবর্তন, মেজাজ ও ব্যক্তিত্ব, পরিচিত জায়গাতেও হারিয়ে যাওয়া অথবা কারো সঙ্গে আলাপ করার সময় সঠিক শব্দটি খুঁজে না পাওয়া।
এটা এমন এক পর্যায়ে গিয়েও পৌঁছাতে পারে যে তিনি খেয়েছেন কীনা সেটাও তিনি মনে করতে পারেন না। চাবি কোথায় রেখেছেন, চেকে সই করেছেন কীনা- এসব তারা সহজেই ভুলে যান।
এমনকি তারা কথাও গুছিয়ে বলতে পারেন না। কথা বলার সময় কোন শব্দের পর কোন শব্দ ব্যবহার করবেন কিম্বা একটা বাক্যের পর পরের বাক্যে কী বলবেন সেসব তারা মেলাতে পারেন না।
তবে ভালোবাসা থেকে যারা হতাশ হয়ে ফেরে তাদের জন্য হতাশা অত্যন্ত ক্ষতিকর। এগুলো তাদেরকে আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্তের কাছে নিয়ে যায়।
এর থেকে ফেরার একটি মাত্র পথ বাকি থাকে। সেটি নিজের জীবনকে ধর্মীয় অনুশাসন মত পরিচালনা করা। আর এই জন্য একে অগোছালো জীবনকে গুছিয়ে দিতে পারে। হতাশা কিংবা নেশায় বুদ হয়ে থাকা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারে কিছু সময়, সেটি ৪০ দিন কিংবা চার মাস সময় মসজিদে মসজিদে থেকে আল্লাহর ভয়ে আল্লাহকে ভালোবেসে জীবনের ভুলগুলোর জন্য ক্ষমা চেয়ে জীবনকে সঠিক পথে নিয়ে আসার মাধ্যমে। যেদিকে আমরা তাবলীগি চিল্লা বলে থাকি।
অনেক সময় দেখা গিয়েছে চরম ব্যর্থ চরম হতাশ কিংবা অনেকবার সন্ত্রাসী নেশায় বুদ হয়ে থাকা মানুষও অন্ধকার থেকে আলোর পথে ফিরে এসেছে। শুধুমাত্র আল্লাহর রাস্তায় নিজের জান মাল এবং সময় নিয়ে বের হওয়ার দ্বারা মসজিদে মসজিদে থেকে মহান আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বানিয়ে নিজেদের জীবনকে আলোকিত করেছেন। তাই যারা অত্যন্ত হতাশ নিজের জীবন নিয়ে, কিংবা হারিয়ে ফেলা প্রিয় মানুষগুলোকে ভুলতে চান তাদের জন্য একটি ওষুধ রয়েছে এই আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া। কমপক্ষে চার মাস সময়ের জন্য মনে করে দেখতে হবে আমি আসলে মরে গিয়েছি, ভাবতে হবে আমার কেউ নেই। তবেই সেই হতাশা থেকেই মিলতে পারে মুক্তি।কেননা নিশ্চয়ই মসজিদ পৃথিবীর মধ্যে সর্বোত্তম জায়গা।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *