Home বানিজ্য চালের বাজারে কারসাজি নেপথ্যে কর্মকর্তারা
ফেব্রুruari ২৭, ২০২৪

চালের বাজারে কারসাজি নেপথ্যে কর্মকর্তারা

খাদ্য বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর দায়িত্ব অবহেলা, গাফিলতি ও লোভের কারণে চালের বাজার স্বাভাবিক রাখা যাচ্ছে না। খাদ্য বিভাগের দেওয়া ফুড গ্রেইন লাইসেন্সের শর্ত ব্যবসায়ীরা মানছে কি না তা দেখার দায়িত্ব তাদের। তারা সরকারি দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন না। তারা চাকরি করেন সরকারি কিন্তু স্বার্থ সংরক্ষণ করেন অসৎ ব্যবসায়ীদের। চালের বাজারে কারসাজির নেপথ্যে এসব অসাধু কর্মকর্তা। তাদের এ ধরনের দ্বিচারিতায় বিব্রত খাদ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর। ফলে গত ২১ ফেব্রুয়ারি খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে চালের বস্তায় ধান চালের জাত, মিলের এবং মিলারের নাম, উৎপাদনের তারিখ, ওজন এবং মূল্য লেখা বাধ্যতামূলক করে জারি করা পরিপত্র শতভাগ বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয়ে আছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

কারণ খাদ্য বিভাগের মাঠ পর্যায়ের অসাধু কর্মকর্তাদের অতীত কর্মরেকর্ড সন্তোষজনক নয়। তারা সততা ও আন্তরিকতা সঙ্গে পরিচ্ছন্ন মন নিয়ে দায়িত্বপালন না করলে শুধু পরিপত্র দিয়ে খাদ্য মজুতদারি, বাজারের স্থিতিশীলতা এবং স্বাভাবিক সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে না। সরকারি পদক্ষেপ বাস্তবায়নে মাঠের কর্মকর্তাদের এবার একান্তভাবে ঢাকায় ডাকছেন খাদ্যমন্ত্রী। প্রাথমিকভাবে আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তাদের (আরসি-ফুড) এবং জেলা খাদ্য কর্মকর্তাদের (ডিসি-ফুড) নিয়ে খাদ্য ভবনে বৈঠক করবেন খাদ্যমন্ত্রী ও সচিব। এরপর পৃথকভাবে ডাকা হবে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (টিসিএফ) এবং খাদ্য পরিদর্শকদের। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, তাদের মাঠের সমস্যা নিয়ে কথা বলার জন্য ডাকা হচ্ছে। আগে মিটিং হতে দিন। মিটিংয়ের পরই জানানো হবে কেন মিটিং ডাকা হয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শস্যের মজুতদারির সঙ্গে খাদ্য বিভাগের মাঠ প্রশাসনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তাদের নিবিড় সহায়তা ছাড়া অসাধু ব্যবসায়ীদের মজুতদারির কোনো সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ও খাদ্যমন্ত্রীর দৌড়ঝাঁপ কিছুতেই তারা দুষ্কর্ম থেকে সংশোধন হচ্ছে না। তারা এক ব্যবসায়ীর নামে একাধিক ফুড গ্রেইন লাইসেন্স ইস্যু করেন। কোন লাইসেন্সের অনুকূলে কোন গুদামে কী পরিমাণ ধান-চাল মজুত রেখেছে তা সঠিকভাবে দেখভাল করেন না। নিয়ম মেনে প্রতিটি গুদাম ও মিলের বিপরীতে যে পরিমাণ ধান-চাল মজুত করা হলো তা সঠিক আছে কি না তা পরখ করে দেখেন না। আবার দেখা গেছে কাগজেপত্রে ধান ও চালের যে পরিমাণ উল্লেখ আছে বাস্তবে তার চেয়ে বেশি মজুত করছেন ব্যবসায়ীরা। এসব চিত্র ধরা পড়েছে গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে খাদ্য বিভাগের অভিযানে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা উদাহরণ দিয়ে বলেন, ধরুন একটি ফুড গ্রেইন লাইসেন্সের বিপরীতে ৫০ টন ধান কেনার সুযোগ রয়েছে। এই ৫০ টন ধান কোথায় রাখবে সে গুদামের ধারণ ক্ষমতা কত। কোন মিলে ধানগুলো চালের পরিণত করবে এবং মিলের হাস্কিং ক্যাপাসিটি কত ইত্যাদি দেখভালের দায়িত্ব মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের। এমনকি যে মিলে ধান ভাঙানো হয় ওই মিলের বিদ্যুৎ বিলও চেক করে দেখার দায়িত্ব তাদের। কোনো মিল মালিক বলল, তার মিলে দৈনিক ১০ টন ধান ভাঙানোর ক্ষমতা বা সক্ষমতা আছে। সে ক্ষেত্রে খাদ্য কর্মকর্তারা মিল চালু করে দেখবেন প্রকৃত পক্ষে তার কথার সত্যতা আছে কি না। কত সময় মিল চললে ১০ টন ধান ভাঙানো যায়। ওই সময়ে কত ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়েছে এবং কত টাকা বিল এসেছে তা দেখার দায়িত্বও তাদের। কিন্তু তারা এসব দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন না বলে খোদ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান।

খাদ্য বিভাগের মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের একটি অংশ অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। অসাধু কর্মকর্তারা এ উপায়ে লাভবান হলেও খাদ্যদ্রব্যের বাজার অস্থিরতায় বিপাকে পড়ছে সরকার, পাশাপাশি সাধারণ মানুষের পকেট কেটে রাতারাতি ধনিক বণিকে পরিনত হচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক একদিন পর থেকে হঠাৎ করে চালের দাম প্রকারভেদে কেজিতে ২ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। ভরা মৌসুমে চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে দেশে হইচই পড়ে যায়। মন্ত্রিসভার শপথের আগেই অসাধু ব্যবসায়ীরা এ দুষ্কর্ম করে। দায়িত্বভার গ্রহণ করেই খাদ্যমন্ত্রী ও সচিব মিলমালিকদের (মিলারদের) খাদ্য অধিদপ্তরে ডেকে পাঠান। ভরা মৌসুমে চালের মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানতে চান। কিন্তু চালকল মালিকরা কোনো ধরনের সদুত্তর দিতে না পারায় ৪ দিনের সময় বেঁধে দিয়ে তাদের কাছ থেকে চালের দাম কমানোর ওয়াদা আদায় করেন। কিন্তু ওয়াদা অনুযায়ী বাজারে চালের দাম না কমায় খাদ্য মন্ত্রণালয় বিভাগীয় এবং জেলা পর্যায়ে যথাক্রমে বাজার তদারকি টিম ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন। এতে চালের বাজার অস্থিরতা তৈরির সঙ্গে জড়িতদের আসল চেহারা ধরা পড়ে খাদ্য বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে। সে কারণেই ২৯ ফেব্রুয়ারি আরসি ফুড এবং ডিসি ফুডদের ডেকে তাদের অধিক্ষেত্রে যেসব সমস্যা ধরা পড়েছে তা তাদের সামনে তুলে ধরে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। আগামী দিনে যাতে অতীতে করা ভুল ও অপকর্ম না করে সে বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া হবে। তারপরও যদি কেউ আগের মতোই অপকর্মে জড়ান তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর পরবর্তী ধাপে ডাকা হবে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও পরিদর্শকদের।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *