Home সারাদেশ এই জমানায় কেমন কাটছে বেদে পল্লির দিন?ইউএনওর দেয়া কম্বল পেয়ে আত্মহারা বেদেপল্লির শিশুরা।
ফেব্রুruari ২৭, ২০২৪

এই জমানায় কেমন কাটছে বেদে পল্লির দিন?ইউএনওর দেয়া কম্বল পেয়ে আত্মহারা বেদেপল্লির শিশুরা।

তাইফুর রহমান, ঝালকাঠি (নলছিটি) প্রতিনিধি:
নিজেদের জন্য কখোনও কোনো চিঠি আসে নি তাদের।কারন নিজেদের কোনো ঠিকানাই নেই,কখনও কোথাও চিঠি পাঠানোর ইতিহাসও তাদের নেই।।টুকরি আর ঝুপড়ীতেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাদের কেটে গেছে ঠিকানা ছাড়াই।।ভদ্রলোকের ভাষায় উদ্বাস্তু কিংবা যাযাবর বলা হয় তাদের,বাংলার ঐতিহ্যের অংশীদার তারাও,”বেদে সম্প্রদায়”।

বেদের মেয়েরা জোৎস্নার মতো ফুটফুটে হলেও তার জীবন যৌবনও কেটে যায় নৌকা কিংবা বাশ দিয়ে বানানো ঝুপড়িতেই।শীত,বর্ষা,ঝড় ঝাপটাতেও কেউ তাদের খবর রাখে না।
“শিক্ষার আলো নাকি ঘরে ঘরে জ্বলবে,আমাদের ঘর নেই সে কথা কে বলবে?” তাবিব মাহমুদ এবং গলি বয় রানার উক্তিটির যথার্থতা বুঝতে কথা বলতে যাই ঘরহীন বেদে পল্লিতে।
তাদের খোজ খবর নিতে কথা হয়েছিলো তাদের একটি বহরের সর্দার রাজেশ খানের সাথে।রাজেশ খানের এই বহরে এখন আটটি পরিবার রয়েছে।এদের অধিকাংশ বিক্রমপুরের, দুটি পরিবার শরিয়তপুরের।তবে এই পরিবারগুলো সব সময় একই বহরে থাকে না।তারা বছর ঘুরলে কিংবা মৌসুম বদলালে বহরও বদলাতে পারে।কোথাও বেশি হয়,কোথাও কম হয়।এই বহরের একজন মো:সেলিম(ছ,না) বলেন,তার জন্মও নৌকায়,এখন বয়স চল্লিশের কাছাকাছি। জীবন এভাবেই যাযাবর কেটে গেছে।তাদের আক্ষেপ ছিলো, তাদের সন্তানেরা এই ভ্রাম্যমাণ জীবনে শিক্ষা কিংবা চিকিৎসার সুযোগটাও পায় না ঠিক মতো। শিক্ষার আলো থেকে তাদের অধিকাংশ শিশুরাই বঞ্চিত। আগে তাদের নারীরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে শিঙে লাগাতো,দাতের পোকা তুলতো,পুরুষদের কাজ ছিলো ফেরি করে বেরানো।কালের বিবর্তন তাদের সেই কাজকে এখন বিপন্ন করে তুলেছে।এখন তাদের উপার্জনও কমে এসেছে অনেক।কোনোমতে শীত বর্ষায় জীবন বাচিয়ে টিকে থাকার লড়াইয়ে এখনো পর্যন্ত আছেন তারা।যাযাবরের জীবন হলেও এরা সকলেই জাতীয় পরিচয় পত্র বহন করেন,অর্থাৎ তারা দেশের বৈধ নাগরিক।
প্রশ্ন ছিলো, কি ধরনের সহযোগিতা পেলে তাদের সন্তানেরা শিক্ষা গ্রহন করে সমাজের মূল ধারায় মিশতে পারে। উত্তরে তাদের সহজ বক্তব্য ছিলো একটি নির্ধারিত ঠিকানার ব্যবস্থা যদি করে দিতো সরকার। সরকার এমন ভূমিহীন,ঠিকানাহীন দরিদ্রদের জন্যই সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পের উদ্যোগ নিয়েছিলো।যার সুফল ভোগ করছেন করছেন কয়েক লক্ষ ভূমিহীন। তাদের অনেকেই সরকারি সেই আশ্রয়নে ঘর পেলেও অধিকাংশই বারবার কাগজ পত্র দিলেও মেলেনি সেই আশ্রয়নের ঘর।
অতি সম্প্রতি তরুণ বিপ্লবী গায়ক তাবিব মাহমুদ এবং গলি বয় রানার একটি গানে ফুটে উঠেছিলো এমনই গল্প। যেখানে গলিবয় রানাদের আক্ষেপ ছিলো,স্লোগান দেয় “শিক্ষার আলো ঘরে ঘরে জ্বালো” তাহলে যাদের ঘরই নেই,তাদের কথাটা কে বলবে।কে ই বা তাদের ঘরে শিক্ষার আলো জ্বালাতে আসবে?
ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায় আসা এমনই বেদেদের সাথে আলোচনায় উঠে আসে এমন চিত্র।তবে বেশ আলোচনায় আসে সম্প্রতি বেদেপল্লিতে ইউএনওর কম্বল বিতরণ।
সেই বেদে পল্লির মানুষের জন্য কিছুদিন আগে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে  নিজের হাতে কম্বল নিয়ে গেলেন ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব নজরুল ইসলাম। তাকে কাছে পেয়ে বেদে পল্লীর বেদেরা আশ্চর্য হয়েছেন তো বটেই খুশিতে আত্মহারা হয়েছেন অনেকে।।
নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া জিরো পয়েন্ট এলাকায় বেদে পল্লির ৭১ টি এবং মল্লিকপুর এলাকায় থাকা ৮ টি পরিবারের মাঝে কম্বল বিতরণ করেন নলছিটি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব নজরুল ইসলাম।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *