ব্যর্থতা, হতাশায় বিষাদময় পূর্নিমার চাঁদ,বুক ভরা কান্না,কোথায় মিলবে মুক্তি।
তাইফুর রহমান,সমাজকর্মী ও লেখক(ঝালকাঠি)
হতাশা,একটি প্রাচীণ এবং পরিচিত শব্দ।আশাহত হতে হতে মানুষ অবসাদগ্রস্থ বা হতাশ হয়ে পরে।জোৎস্না রাত,পূর্ণ চাঁদ,দখিনা হাওয়া অথবা ঝুম বৃষ্টি যখন কিছু মানুষকে আনন্দে ভাসায়,স্বপ্নে বিভোর করে দেয়। সেই একই চাঁদের আলোর নিচেই কিছু মানুষ নিরবে অশ্রু ঝরায়,কিংবা বুক ফেটে কান্না আসলেও এক ফোটা কাদতে পারে না এমনও হয়।এই ব্যাথা আর রক্তাক্ত হৃদয় কাউকে দেখানোও যায় না বলে আরও হতাশ হয়ে যায়।বিশেষ করে লক্ষ লক্ষ যুবক বেকারত্ব, বিভিন্ন অভাব,ব্যর্থতায় হতাশায় ডুবে তলিয়ে যায় অন্তরের বিষাদের রক্তের সাগরে ।
এই ব্যাথিত,রক্তাক্ত জখম হওয়া অন্তরের মানুষগুলোই জীবনে হতাশ কিংবা অবসাদগ্রস্থ হয়ে পরে।সাধারণত বারবার কোনো কাজে ব্যর্থ হওয়া, অন্তরের চাওয়াগুলো অপূর্ণ থেকে যাওয়া,অভাব কিংবা প্রেমের ব্যর্থতার কারনে।বিভিন্ন না পাওয়াই মানুষকে হতাশ করে দেয়।প্রয়াসই শোনা যায় হতাশায় আত্মহননের মতো ভুল পথ বেছে নেয়ার কথা। হতাশা মানুষকে কুড়ে কুড়ে খায়।সবাই যখন রঙিন বাতিতে রঙ দেখে, হতাশায় ভোগা মানুষ তখনও তা সাদাকালোই কিংবা নিগুঢ় অন্ধকার দেখে।তার চোখে বৃষ্টি ঝরার পরেও কোনো রঙধনু দেখা যায় না।জীবনের প্রতি তীব্র অভিযোগ, অভিমান আর আর অপ্রাপ্তির পাহাড়সম গল্প তাদের জীবনকে আরও ভারি করে দেয়।সবার মনে হয়,বারবার কেন আমার সাথেই এমন হয়!।বেচে থাকার আশাও মানুষ হারিয়ে ফেলে হতাশায়।তাদের মনে হয় বুকের উপর কোনো কস্ট বা ব্যর্থতার পাহাড় চেপে আছে।
আসলে মানুষ পৃথিবীতে অনেক কিছু চাইবে,কিন্তু তার সব তো সে পাবে না এটাই স্বাভাবিক। মানুষ অনেক সময়ই তার প্রিয় বস্তুকে হারিয়ে ফেলে,প্রিয় মানুষকে হারিয়ে ফেলে এক অন্ধকারে পরে যায়।কিন্তু এই হারানোটাও খুব স্বাভাবিক। কিন্তু এই কথাগুলো মেনে নেয়াটাও খুবই কঠিন,মন মানতেই চায় না।সাধারণত কৈশোর পার হওয়ার পরে যৌবনের শুরুতেই বেকারত্ব, অপ্রাপ্তি, ব্যর্থতা মানুষকে হতাশ করে দেয়। কিন্তু সেই হাজারো না পাওয়া,হাজারো ব্যর্থতা নিয়ে ভাঙা অন্তরেও বেচে থাকাটাই যোদ্ধাদের মতো বীরের কাজ।মানুষ যা চাইবে তার সব পাবে না,যদি সব পেয়েই যায় সে হয়তো তার মহান রব্বকেই ভুলে যাবে।
মহান আল্লাহ মানুষকে যেই অন্তর দিয়েছেন,এবং সেটিকে এমন সব চাহিদা দিয়ে তৈরি করে দিয়েছেন যা দুনিয়াতে পূর্ণ হওয়া সম্ভবই না।মানুষ কখনও মরতে চায় না,তাই এক মুহুর্ত বেশি বাচার আশায় সব বিক্রি করেও চিকিৎসা চালায়।মানুষ কখনও বার্ধক্যে যেতে চায় না,তাই গালের দাড়িকে পরিস্কার করে বয়স লুকাতে চায়। যেকোনোভাবেই যৌবন ধরে রাখতে চায়।মানুষ জীবনের শেষ মুহুর্তেও একজন সুন্দর সঙ্গী খোজে,একজন বৃদ্ধও কোনো যুবতীকে বিয়ে করার প্রস্তাব পেলে হাসি দেয় অর্থাৎ তার অন্তর এটাকে চায়।কিন্তু এগুলোর কোনোটিই স্থায়ীভাবে দুনিয়াতে পাওয়া সম্ভব না।
এই অন্তরের সকল চাহিদার যোগান রাখা হয়েছে জান্নাতে।সেখানে কেউ কখোনও মারা যাবে না।কেউ কোনোদিন বৃদ্ধ হবে না, প্রত্যেকের জন্য সুন্দর সঙ্গী থাকবে।অর্থাৎ এই অন্তর যা চায় তা পেতে হলে আল্লাহর হুকুম হুজুর (সা:)এর দেখানো তরিকায় অনুসরণ করে জীবন গড়তে পারলেই পূর্ণ হওয়া সম্ভব।
হাজারো হতাশাগ্রস্ত যুবকের জীবন আলোয় আলোকিত হয়েছে দ্বীনকে শেখার মাধ্যমে। আর সেই দ্বীন সহজে শেখার মাধ্যম হলো আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া।কমপক্ষে চার মাস সময় আল্লাহর রাস্তায় খরচ করা।দাওয়াত ও তাবলীগের কাজে বের হয়ে আল্লাহর ঘর মসজিদে মসজিদে দ্বীন শিখতে যাওয়া।গভীর রাতে মহান রব্বের সাথে কান্নায় বুক ভেজানো,নিজেকে সমর্পণ করাই আত্মাকে শীতল করতে পারে।