Home ধর্মীয় সংবাদ আল্লাহ বিশ্বজাহানের একমাত্র সৃষ্টিকর্তা
জানুuari ১৮, ২০২৪

আল্লাহ বিশ্বজাহানের একমাত্র সৃষ্টিকর্তা

এ দুনিয়ায় যা কিছু আছে এগুলোর কোনোটিই নিজে নিজে পয়দা হয়নি। সবকিছুরই একজন স্রষ্টা আছেন। সেই স্রষ্টা হলেন মহান রব্বুল আলামিন। তিনিই বিশ্বজাহানের একমাত্র সৃষ্টিকর্তা।

সৃষ্টির সেরা : সব সৃষ্টির মাঝে মানুষ হচ্ছে সবচেয়ে সুন্দর, সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান এবং সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী। মানুষকে এ শ্রেষ্ঠত্বদানের কথা উল্লেখ করে পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন : ‘নিশ্চয়ই আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, আমি তাদের স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি; তাদের উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদের অনেক সৃষ্টবস্তুর ওপর শ্রেষ্ঠত্বদান করেছি। (বনি ইসরাইল : ৭০)।

সৃষ্টিকুলের পরিমাণ অসংখ্য-অগণিত : অনেকে বলেন, আল্লাহতায়ালা সর্বমোট ১৮ হাজার মাখলুকাত সৃষ্টি করেছেন। অথচ সৃষ্টিকুলের মোট সংখ্যা কারও জানা নেই। বরং সৃষ্টিকুল হচ্ছে অসংখ্য, অগণিত। সুবৃহৎ কলেবরে সুদীর্ঘ ৩০ খণ্ডে সমাপ্ত এক অসাধারণ তাফসির গ্রন্থের লেখক প্রখ্যাত মুফাসসির আল্লামা তানতাভি (রহ.) স্বীয় তাফসির গ্রন্থের ভূমিকায় লিখেছেন; লোকেরা বলে যে, আল্লাহতায়ালা সর্বমোট ১৮ হাজার মাখলুকাত সৃষ্টি করেছেন। লোকদের এ কথা শুনে আমি আল্লাহর বিভিন্ন সৃষ্টি সংখ্যা গুনতে শুরু করলাম। এক এক করে গুনতে গুনতে ১০ লাখ পর্যন্ত পৌঁছেছি। কিন্তু তাতেও গণনা শেষ হয়নি। গণনার বাইরে আরও অসংখ্য মাখলুক রয়ে গেছে। যাই হোক, জল ও স্থলভাগের সব সৃষ্টির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হচ্ছে মানুষ। আল্লাহ মানুষকে সবকিছুর ওপর শ্রেষ্ঠত্বদান করেছেন। সবকিছু সৃষ্টির চেয়ে মানুষকে সর্বাপেক্ষা সুন্দর হিসেবে সৃষ্টি প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, আমি মানুষকে সুন্দরতম অবয়বে সৃষ্টি করেছি। (সুরা তীন : ৪)।

 

মানুষকে সর্বশেষে সৃষ্টি করার রহস্য : আল্লাহতায়ালা সবকিছু সৃষ্টির চেয়ে মানুষকে সর্বাধিক সুন্দর করে বানিয়েছেন। সবকিছু সৃষ্টি করার পর সর্বশেষে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। কেননা অন্যান্য সৃষ্টিকে বানানো আল্লাহর মূল লক্ষ্য ছিল না বরং মানুষকে সৃষ্টি করাই ছিল আল্লাহর মূল লক্ষ্য। তাই মানবজাতি হচ্ছে আল্লাহতায়ালার মূল লক্ষ্যবস্তু। ওয়াজ মাহফিলে যেরূপ বক্তা এবং শ্রোতার আগমনের আগেই সভাস্থলে বিছানা বিছানো হয়, লাইটিং করা হয় এবং মাইকের ব্যবস্থা করা হয়, যাতে শ্রোতারা পাক-পবিত্র পরিবেশে বসে বক্তার মুখে কোরআন-হাদিসের কথা শুনতে পারে। যথাযথভাবে দীনি আলোচনা করা ও তা শ্রবণ করার সুবিধার্থে বক্তা এবং শ্রোতাদের সভাস্থলে উপস্থিত হওয়ার আগেই উপরোল্লিখিত আনুষঙ্গিক কাজগুলো করে রাখতে হয় এবং সভা শেষে বক্তা ও শ্রোতারা যখন সভাস্থল ছেড়ে নিজ নিজ গন্তব্যে চলে যান তখন সেই বিছানাপত্র উঠিয়ে ফেলা হয়, লাইট খুলে ফেলা হয় এবং মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। তদ্রুপ আশরাফুল মাখলুকাত মানুষকে সৃষ্টি করার আগেই তাদের বসবাসের জন্য এ পৃথিবীকে সৃষ্টি করা হয়েছে। মানুষের জন্যই চাঁদ, সূর্য গ্রহ-নক্ষত্র, পাহাড়-পর্বত, নদী-সাগর, আগুন পানি এবং আলো-বাতাস প্রভৃতি সৃষ্টি করা হয়েছে। মানুষের কল্যাণার্থে আনুষঙ্গিক সবকিছুকে সৃষ্টি করার পর আল্লাহপাক মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। চন্দ্র-সূর্যের নমুনা রূপে মানুষকে দুটি চক্ষুদান করেছেন। এ চন্দ্র-সূর্য না থাকলে শুধু চোখ দ্বারা দেখা আমাদের পক্ষে সম্ভব হতো না। আবার এক এক করে পৃথিবীর সব মানুষ যখন এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে তখনো সেই ওয়াজ মাহফিলের ন্যায় সব সৃষ্টিকুল ধ্বংস হয়ে যাবে। সারকথা এ আসমান-জমিন, গ্রহ-নক্ষত্র, আগুন-পানি, আলো-বাতাস ও মাটি ইত্যাদি সবকিছুকে আল্লাহতায়ালা মানুষের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আর মানুষকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র আল্লাহর ইবাদতের জন্য। অতএব মানুষ হচ্ছে আল্লাহর মূল সৃষ্টি ও প্রধান লক্ষ্যবস্তু। আর সৃষ্টিকুল হচ্ছে আনুষঙ্গিক গৌণমাত্র।

মানুষের অকৃতজ্ঞতা : সৃষ্টির সেরা হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে আমরা কোনো দিন কোনো দরখাস্ত করিনি। কোনো প্রকার আবেদন-নিবেদন এবং দরখাস্ত ছাড়াই আল্লাহতায়ালা আমাদের তাঁর সব ধরনের নেয়ামত দান করেছেন। তিনি আমাদের বসবাসের জন্য উপযোগী বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছেন, আমাদের রক্ষণাবেক্ষণ ও সব ধরনের রিজিকের ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, মানুষের প্রতি আল্লাহতায়ালা এ সীমাহীন অনুগ্রহ প্রদর্শন করা সত্ত্বেও তারা আল্লাহর সবচেয়ে বেশি নাশুকরী করছে। অন্য কোনো সৃষ্টি এভাবে আল্লাহর নাশুকরী করে না।

বাকশক্তি আল্লাহর দান : আল্লাহতায়ালা মানুষকে অসংখ্য নেয়ামত দান করেছেন। সুস্থ-সবল ও সুঠাম শরীর দান করেছেন। কিন্তু এতদসত্ত্বেও সে যদি কথা বলতে না পারত, তাহলে দুঃখের সীমা থাকত না।

তাই আল্লাহতায়ালা তাকে বাকশক্তি দান করেছেন, কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়া সত্ত্বেও কেউ যদি কথা বলতে না পারে, তবে তার মতো দুঃখী মানুষ দুনিয়ায় আর কেউ নেই। আমাদের আশপাশের বোবা মানুষগুলো কথা বলতে না পেরে কতইনা কষ্ট করে।

এ বাকশক্তি কোনো দোকানে বিক্রি হয় না। টাকা-পয়সায় কিনতে পাওয়া যায় না। পৃথিবীর সব মানুষ মিলেও কাউকে বাকশক্তি দান করতে পারবে না। এটা একমাত্র আল্লাহতায়ালার দান; মানুষের প্রতি আল্লাহর অসীম অনুগ্রহের অন্যতম।

লেখক : আমির, আল হাইআতুল উলয়া ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *