গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার ১০০ দিন: নিহত ২৪ হাজার ফিলিস্তিনি
গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতার ১০০ দিন পার হলো। এই সময়ের মধ্যে অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় প্রায় ২৪ হাজার ফিলিস্তিনির প্রাণ গেছে। এর মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। সম্প্রতি অক্সফাম দাবি করেছে, গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ২১ শতকের অন্য যে কোনো বড় সংঘাতকে ছাড়িয়ে গেছে।
হাসপাতাল, স্কুল, আশ্রয়কেন্দ্র, অ্যাম্বুলেন্স এমনকি কবরস্থানেও হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। চুরি করা হয়েছে মরদেহ। এমন নৃশংসতা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ বিভিন্ন দেশ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজায় হামাসকে ধ্বংসের হাত থেকে কেউ তাদের পিছু হটাতে পারবে না।
অকালে প্রাণ যাচ্ছে ফিলিস্তিনিদের:
যারা দেশের উন্নতিতে কাজ করবে, তাদেরই অকালে চলে যেতে হচ্ছে। বেঁচে থাকা বাসিন্দাদের বাড়িঘর ছাড়তে হচ্ছে। শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েও ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞ থেকে রেহাই পাচ্ছে না ফিলিস্তিনিরা। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি সেনার হামলায় নিহত হয়েছে ১৩৫ জন। আহতের সংখ্যা ৩১২। গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর ২৩ হাজার ৮৪৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে বহু মানুষ আটকে পড়ায় এখন পর্যন্ত উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি। ইসরাইলের হামলায় প্রায় ৬০ হাজার ৩১৭ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সরকার। ৮ হাজারের বেশি মানুষ এখনো নিখোঁজ।
১০০ দিনের হামলায় গাজার ৪৫-৫৬ শতাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ১৫টি আংশিকভাবে কাজ করছে। ইসরায়েলি হামলায় ১২১টি অ্যাম্বুলেন্স অকেজো হয়ে গেছে। ২৩ লাখ নাগরিকের ২২ লাখই খাদ্য সংকটে ভুগছে। ৮ লাখ ফিলিস্তিনি ক্ষুধা ও অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। স্কুল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬৯ শতাংশের বেশি। ফলে সোয়া ৬ লাখ স্কুলশিক্ষার্থীর লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। গাজার রাফাহ এলাকায় কুয়েতি হাসপাতালের চিকিত্সক সুহাইব আল-হামস বলেন, ‘এই ১০০ দিন কীভাবে কেটে গেল? গাজাবাসী এই সময়গুলো তিক্ততার সঙ্গে, শহিদদের সঙ্গে, আহতদের নিয়ে সময় পার করেছে। তারা বেদনা, নিষ্ঠুরতা ও দুঃখের দৃশ্য নিয়ে পার করেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘শুধু বাড়িঘরই নয়, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুলেরও ধ্বংস দেখেছি। ইসরাইল বোমা হামলা করেছে হাসপাতাল, রাস্তা, চিকিত্সক দল বা অ্যাম্বুলেন্স সবকিছুর ওপর। তারা কোনো কিছুই বাদ দেয়নি।’
এদিকে মার্কিন মিডিয়া অ্যাক্সিওজ জানিয়েছে, ইসরাইল ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের ধৈর্যচ্যুতি ঘটছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইসরাইলের অনুরোধ প্রশাসনকে বিরক্তিকর বার্তা দিচ্ছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। সম্প্রতি ইসরাইল সফরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন যুদ্ধপরবর্তী ইসরাইলের পরিকল্পনার সমালোচনা করেছেন।
৩০ দেশে বিক্ষোভ:
এদিকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরাইলের ধরপাকড় অব্যাহত রয়েছে। সেই সঙ্গে জেনিন এলাকায় চলছে বুলডোজার দিয়ে ঘরবাড়ি ধ্বংস। গাজা যুদ্ধের শততম দিন সামনে করে শনিবার যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের ৩০টি দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ধর্ম-বর্ণ ও জাতি নির্বিশেষে লাখ লাখ মানুষ এসব বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিয়েছেন। ‘গ্লোবাল ডে অব অ্যাকশন’-এর অংশ হিসেবে এসব বিক্ষোভ থেকে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলি বোমায় বিধ্বস্ত গাজার অধিবাসীদের প্রতি সংহতি জানিয়েছেন তারা। গাজায় অবিলম্বে ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধের দাবিও জানান তারা। গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর এবং ইসরাইলের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সমর্থনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে যুক্তরাজ্যভিত্তিক কয়েকটি সংগঠনের জোটের পক্ষ থেকে এই সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়।
কেউ থামাতে পারবে না: নেতানিয়াহু
বিশ্ব জুড়ে যুদ্ধবিরতির দাবি উঠলেও গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। এমনকি গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতেও মামলা চলছে দেশটির বিরুদ্ধে। এ পরিস্থিতিতে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলছেন, কেউ আমাদের থামাতে পারবে না। নেতানিয়াহু বলেন, ‘গাজায় কেউ হামাসকে ধ্বংস করা থেকে আমাদের থামাতে পারবে না। তিনি বলেন, হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাবে ইসরাইল। সভ্য বিশ্বের স্বার্থে আমাদের জিততে হবে।’ নেতানিয়াহু দাবি করেন, গাজায় তার বাহিনীর সামরিক হামলা এরই মধ্যে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে থাকা হামাস ব্যাটালিয়নের বেশির ভাগকেই নির্মূল করেছে। তিনি আরো বলেন, উত্তর গাজা থেকে যারা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, তারা শিগিগরই তাদের বাড়িতে ফিরতে পারবেন না। —আলজাজিরা ও বিবিসি