ছয় বছরে দারিদ্র্য অর্ধেকে নামিয়েছে রংপুরের মানুষ
মঙ্গা, দারিদ্র্য—এ শব্দগুলো যেন রংপুরের প্রতিচ্ছবি হয়ে গিয়েছিল। এটি দেশের সবচেয়ে দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত ছিল। সেই রংপুর এখন দারিদ্র্য কমানোয় সাফল্য দেখিয়েছে। মাত্র ছয় বছরের ব্যবধানে এই বিভাগে দারিদ্র্যের হার অর্ধেকে নেমেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সবশেষ খানার আয় ও ব্যয় জরিপ ২০২২ অনুসারে, ৮ জেলার রংপুর বিভাগে দারিদ্র্য ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১৬ সালে এই বিভাগে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৭ দশমিক ২। ছয় বছরের ব্যবধানে এত দ্রুত দারিদ্র্য কমানোর রেকর্ড অন্য কোনো বিভাগের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি।
রংপুরের এই সাফল্যের কারণে সবচেয়ে দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকা হিসেবে দীর্ঘদিনের পরিচিতিও ঘুচেছে। রংপুরকে ছাপিয়ে বরিশাল বিভাগে এখন সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্য, ২৬ দশমিক ৯ শতাংশ।
রংপুরে দারিদ্র্য হার এতটা কীভাবে কমল, তার সম্ভাব্য কয়েকটি কারণ জানিয়েছেন বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, রংপুর অঞ্চলে মঙ্গা কমেছে, এটা বোঝা যায়। উন্নত যোগাযোগব্যবস্থার কারণে রংপুরের কাজপ্রত্যাশী লোকজন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিবাসন করেছেন। এ ছাড়া ওই অঞ্চলের লোকজন আগের চেয়ে বেশি প্রবাসে যাচ্ছেন। এসব কারণে দারিদ্র্য কমতে পারে। পাশাপাশি মুঠোফোনে আর্থিক সেবায় সহজে টাকা পাঠানোর সুযোগ বৃদ্ধি পাওয়া দারিদ্র্য কমাতে সহায়তা করেছে।
২০১০ সালে রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা—এ আটটি জেলা নিয়ে রংপুর বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর আগে এসব জেলা রাজশাহী বিভাগের আওতায় ছিল।
আগে দেশের সবচেয়ে গরিব ১০টি জেলার ৫টিই রংপুর বিভাগে ছিল। অর্থাৎ রংপুরের ৮টি জেলার মধ্যে ৫টিই ছিল দেশের সবচেয়ে গরিব জেলা। ২০১৬ সালের হিসাবে, দেশের সবচেয়ে গরিব জেলা ছিল কুড়িগ্রাম। সেখানে প্রতি ১০০ জনের ৭১ জনই দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত। সবচেয়ে গরিব ১০টি জেলার মধ্যে রংপুর বিভাগের বাকি জেলাগুলো ছিল রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাট।
বিবিএসের পরিসংখ্যান বলছে, এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে, তবে কোন জেলায় দারিদ্র্যের হার এখন কত—সেই তথ্য জানানো হয়নি বিবিএসের খানা আয় ও ব্যয় জরিপে। আগামী বছর তা প্রকাশ করবে বিবিএস।
বরিশাল এখন সবচেয়ে গরিব এলাকা
বিবিএসের হিসাব অনুসারে, বরিশালে দারিদ্র্যের হার ২৬ দশমিক ৯। বরিশাল অঞ্চলটি শস্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত, তবে সেখানে দারিদ্র্য কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৬ সালে ওই বিভাগে দারিদ্র্য ছিল ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ। আর সবচেয়ে কম দারিদ্র্য হার পার্শ্ববর্তী খুলনা বিভাগে। এই বিভাগের দারিদ্র্যের হার ১৪ দশমিক ৮।
বিবিএস আরও বলছে, গত ছয় বছরে ঢাকা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগে দারিদ্র্য হার বেড়েছে। এখন দারিদ্র্যের হার ঢাকায় ১৭ দশমিক ৯, চট্টগ্রামে ১৫ দশমিক ৮, রাজশাহী ১৬ দশমিক ৭, সিলেটে ১৭ দশমিক ৪, রংপুরে ২৪ দশমিক ৮ ও ময়মনসিংহে ২৪ দশমিক ২।
এ দিকে সার্বিক দারিদ্র্য ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। ৬ বছর আগে অর্থাৎ ২০১৬ সালে দারিদ্র্য ছিল ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, দেশে অতি দারিদ্র্য হার ৫ দশমিক ৬। ৬ বছর আগে এই হার ছিল ১২ দশমিক ৯।